হোম » প্রধান সংবাদ » ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তিস্তা, ঘর বাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় পানিবন্দি পরিবারগুলো

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে তিস্তা, ঘর বাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় পানিবন্দি পরিবারগুলো

মিজানুর রহমানঃ  উজানের গজলডোরের সবকটি গেট খুলে দেয়ায় প্রবল স্রোত ও পানি বৃদ্ধির ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তিস্তা। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া তিস্তা ব্যারাজ রক্ষা ফ্লাড বাইপাস সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে।
১৯৯৬ সালে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পর ২০২০ সালে একই রকম বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তিস্তা পাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। ঘর বাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রায় নিয়েছেন তারা। পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব।
সোমবার (১৩ জুলাই) সকালে লালমনিরহাটের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর আগে রোববার রাত ১১টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রাত ১০টায় একই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এটি ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় একই পয়েন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিপৎসীমা অতিক্রমের রেকর্ড। ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই এই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার অতিক্রমের পরিমাণ ছিল ৫৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার। এদিকে ক্রমাগত পানি বাড়ার কারণে তিস্তা মধ্যবর্তী চর এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার রাতে পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। সেই কারণেই নদীর চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। তবে সোমবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর গড্ডিমারী গ্রামে গতরাতে ঘুমান্ত এক শিশু (এক বছর) পানিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। সে চর গড্ডিমারী গ্রামে আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরিফ হোসেন।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফরিদা বলেন, ছেলেকে নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম, কখন পড়ে গেছে বলতে পারি না।
লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমার ইউনিয়নের তিস্তানদীর চর ধুবনীর এক বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাটিকাপাড়া ও সিন্দুর্না ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পারিবারে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার স্থানীয় বাঁধের রাস্তায় তাবু টাঙিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হুমকির মুখে পড়েছেন পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব হলদিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার, চর বৈরাতী, ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ধুবনী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক পরিবার গত তিন দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চর এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পর ২০২০ সালে একই রকম বন্যা দেখা দিয়েছে। ২৪ বছর পর এই বন্যা আবারও ভয়াভয় রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা ক্রমে কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। কিন্তু এক সাপ্তাহ না যেতেই ফের উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার থেকে বর্তমানে ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা পাড়ের হোসেন আলী বলেন, ৯৬ সালের বন্যার পর এই ভয়াবহ বন্যা দেখা দিল। পরিবার নিয়ে গড্ডিমারী বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য ১২০ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলার নির্বাহী অফিসাররা ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রেখেছেন।

Loading

error: Content is protected !!