হোম » প্রধান সংবাদ » শরণখোলায় ঘুষ দিয়েও চাকরি পায়নি হতভাগ্য যুবক আসাদুল শিকদার

শরণখোলায় ঘুষ দিয়েও চাকরি পায়নি হতভাগ্য যুবক আসাদুল শিকদার

শরণখোলা প্রতিনিধিঃ বাগেরহাটের শরণখোলায় জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম আকনের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে চাকরি না দেয়ার অভিযোগ করেন হতভাগ্য যুবক আসাদুল শিকদার(৩২)।আসাদুল রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিন-রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক হাবিবুর রহমানের পূত্র।
আসাদুল জানান, তিনি ২০১৭ সালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত দু-বছর যাবত অফিস সহকারীর পদে দ্বায়িত্ব পালন করেন। অফিস সহকারী পদে লোক নেওয়া হলে তাকেই নিয়োগ দেওয়া হবে এমনটা তাকে আস্বস্ত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম আকন।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে অফিস সহকারি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে আসাদুল সহ ৯টি আবেদনপত্র জমা পড়ার পরে প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবিদুর রহমান সহ চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী জাফর হোসেনের মাধ্যমে আসাদুলকে নিয়োগ দেয়া হবে এর জন্য ৫লাখ টাকা ঘুষের প্রস্তাব পাঠালে নিজের স্থায়ী কর্মসংস্থান  তৈরীর জন্য তার বৃদ্ধ পিতার ১০কাঠা ফসলী জমি সহ বসত বাড়ীর বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ বিক্রি করেন এবং সুদসহ ধার-দেনার মাধ্যমে ৫লাখ টাকা জোগাড় করেন। নিয়োগ পরীক্ষার ৪দিন আগে প্রধান শিক্ষককে ১লাখ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নগদ ৫০হাজার টাকা দেন আসাদুল কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অন্য একজন প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহন করেন।
পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে এবং বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বিষয়টি অবগত না করে প্রশ্নপত্র ফঁাসের মাধ্যমে গত ৬জুলাই  সর্বোচ্চ ঘুষ প্রদানকারী প্রার্থীকে নিয়োগ দেন।
আসাদুল আরো বলেন, প্রধাণ শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষা অফিসারকে শরণখোলা আইডিয়াল স্কুলের সামনে বসে একদিন সন্ধ্যায় নগদ ৫০হাজার টাকা দেই। প্রধাণ শিক্ষক আমার সাথে এতবড় প্রতারনা করবেন, বুঝতে পারিনি। এখন ধার-দেনাগুলো কিভাবে পরিশোধ করব বলে কেঁদে ফেলেন। পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নাই বলে হতাশা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে, নিয়োগে নানা অনিয়মের ঘটনায় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ৫জন সদস্য গত ৭জুলাই একযোগে পদত্যাগ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ বঞ্চিত প্রার্থীরা বির্তকিত নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি জানান।  এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ কামাল বয়াতী, জালাল ফরাজী, শাহাজাদা, মুজিবর রহমান ও আঃ সবুর গাজী বলেন, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা মোঃ শহিদুল ইসলাম আকন ২০১৭ সালে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন।
গত ৩ বছর ধরে কোন হিসাব না দেওয়া সহ স্কুলের কয়েক লাখ টাকার গাছ বিক্রি করে উক্ত টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়া এস.এস.সি পরীক্ষার্থী সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এমনকি প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের লোক দিয়ে গোপনে পকেট কমিটি তৈরী করে তার ইচ্ছামত স্কুল পরিচালনা করছেন। এছাড়া ইউএনও সভাপতি বলে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে জনকে হুমকি দেন। অভিযোগকারীরা স্বচ্ছ নিয়োগসহ নুতন ম্যানেজিং কমিটি গঠনের দাবী জানান ।
জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ কাল্পনিক দাবী করে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় বিপদগামী সদস্য একজোট হয়ে আসাদুলকে ব্যবহার করে নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন এবং তিনি কাউকে নিয়াগ দেননি বলে দাবী করেন এবং স্কুলের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়োগ দেওয়ার সম্পূর্ণ ক্ষমতা তার তাই এখানে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে ইউএনওর কাছে জানতে পারেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান খাঁন বলেন, ঘুষসহ অনিয়মের বিষয়টি সম্পুর্ন গুজব এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।  জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। তবে কেউ কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে থাকলে প্রামান সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
error: Content is protected !!