হোম » শিরোনাম » কালো মানেই কুৎসিত নয়

কালো মানেই কুৎসিত নয়

ইমরান মাহমুদ খানঃ

সাদা বলে কালো তুই বড়ই কুৎসিত
কালো বলে সাদা- তোরই হল জিৎ,
কিন্তু ভাই মনে রাখিস একেলা থাকি আমি
তুই আরো সাথী নিয়ে আমাতে যাস থামি।

বিজ্ঞানের ভাষায় কালো হল সেসকল বস্তুর রঙ যা দৃশ্যমান বর্ণালীর মধ্যে কোন আলো বিকিরণ বা প্রতিফলন করে না। কালো রঙের বস্তু দৃশ্যমান বর্ণালীর সকল কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট আলো শোষণ করে নেয়। যদিও কখনো কখনো বর্ণহীন বলতে কালো বলা হয়, তবে ব্যবহারিক অর্থে কালো একটি রঙ।

আজকের আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষেরই বাসভূমি। এই ধরণীর স্নেহছায়ায় এবং একই সূর্য ও চাঁদের আলোতে লালিত ও প্রতিপালিত হচ্ছে মানুষ। শীতলতা ও উষ্ণতা, ক্ষুধা ও তৃষ্ণার অনুভূতি সব মানুষেরই সমান।

বাইরের চেহারায় মানুষের মধ্যে সাদা-কালোর ব্যবধান থাকলেও সবার শরীরে একই লাল রক্ত প্রবহমান।আধুনিক সভ্যতার যুগেও শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গের বৈষম্য বিশ্বকে বিষিয়ে তুলছে। উঁচু শ্রেণি-নিম্ন শ্রেণি, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ ও সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব বহু দেশ ও জাতিকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

একই জন্মপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে পৃথিবীর সব মানুষ জন্ম নিলেও মানুষে মানুষে সৃষ্টিগত পার্থক্য খুবই মামুলি ও স্বল্প। কিন্তু পৃথিবীর পারিপার্শিকতার পরিপ্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে সে পার্থক্য প্রকট হয়ে ওঠে। শুরু হয় উত্তম-অধমের দ্বন্দ্ব, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গের বৈষম্য, ধনী-গরিবের ব্যবধান ও জালিম-মজলুমের লড়াই।
মানুষ আজ জাতিভেদ, গোত্রভেদ, বর্ণভেদ, বংশ-কৌলীন্য ইত্যাদি কৃত্রিম পরিচয়ে নিজেদের পরিচয়কে সংকীর্ণ ও গণ্ডিবদ্ধ করেছে। কিন্তু গোটা দুনিয়ার সঙ্গে মানুষের যে জন্ম সম্পর্ক, সেই বিচারে মানুষের আসল পরিচয় হচ্ছে সে মানুষ এবং তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবার কথা নয়। পৃথিবীর সব মানুষকে নিয়েই গড়ে উঠেছে মানুষ জাতি। তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি সংবেদনশীলতা ও সমমর্যাদার মনোভাব সৃষ্টিই সব মানুষের কাম্য হওয়া উচিত।

ত্বকের সাদা-কালোর মাধ্যমে স্মার্টনেস নির্ধারন করা যায়না বরং মূল স্মার্টনেস বিবেচনা হয় উত্তম মানবিক বৈশিষ্ঠ্য ও সুন্দর একটি মনের সমন্বয়ে। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো ছাড়া কোন বিকল্প আছে বলে অনুভব হচ্ছেনা। প্রকৃত মানুষ দাবীদার কেউ শরীরের চামড়ার সাদা-কালোর বিবেচনায় মানুষের মধ্যে বিভাজন করিতে পারেনা কিংবা পারা উচিতও নহে।

সুন্দর মানে অন্যকিছু। সুন্দর মানে শুধু সুন্দর, যাকে দেখলে, কথা বললে নিজেকেই সুন্দর মনে হয় সেই সুন্দর। সাদা বা কালো রঙের সাথে যার বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। নিজের জন্য যেমন বাঁচতে হয়, নিজের জন্য তেমন সাজতে হয়। গায়ের রং ঢাকতে নয়, নিজের মানসিক পীড়াকে সর্বস্তরের মানুষের চোখে গল্প করার মত উপভোগ্য বস্তু বানাতেও নয়।

মনে রাখা দরকার, সামান্য এক টুকরো কাপড় পকেটে রাখলেই মুখ মোছা যায়। তবু মানুষ নকশা কাটা রুমাল ব্যবহার করে। এর অর্থ মানুষের অনুভূতিকে স্নিগ্ধ, শান্ত, প্রসন্ন রাখার জন্য শিল্প এবং শৈল্পিক বোধ আর সুরুচি দরকার। মানুষ হয়তো সুরুচি খায় না। কিন্তু সুরুচি ছাড়া আবার শুধু খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকাও অর্থহীন।

সৌন্দর্য্য আসলে কোথায় থাকে, ঠিক কী কী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলে একজনকে সুন্দর বলা যায়? এবং তার সাথে রঙের সম্পর্কটা ঠিক কতোটা গভীর? নিজেও বিশ্বাস করুন, সৌন্দর্য মানে গায়ের রং বা এ রকম কোনো একরোখা ধারণা নয়; বরং সুন্দর—সহজ, সাবলীল, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মানবিক।
কালোর মাঝেও আছে এক অদ্ভুতুড়ে ভালো লাগা ভালবাসা। তবে সেটা নিতান্তপক্ষে সুগভীর অনুভূতির বিষয়। সে জন্যে চাই সুন্দর সুক্ষ্মদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি। ভালো থাকুক সারা দুনিয়ার সকল কালোরঙেরা, মঙল হোক। আর চ্যালেঞ্জ রইলো ফর্সাবাদি সাদাবাজদের জন্যে। কালো মানেই কুৎসিত নয়। এটাও একটা সৌন্দর্য! এটাও শিল্প! এটাও সৃষ্টিকর্তার এক রহস্যময় সুন্দর নিয়ামত।

error: Content is protected !!