হোম » বিনোদন » বগুড়ায় মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহ

বগুড়ায় মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহ

এম,এ রাশেদ,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সরিষা ফুল। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ চারদিকে। বগুড়ায় এবার প্রতিটি মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষকের ঘরে উঠবে সরিষা। কম খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা আগাম জাতের ও অধিক ফলনশীল এই ফসলের চাষ করেছেন। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
বগুড়ার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নতমানের সরিষা চাষ হওয়ার কারণে ফলন বেড়ে যাবে। জেলায় প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। জানা যায়, বগুড়ার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু লাগাতার ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ছুটছেন লাভজনক তেল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের দিকে। কম খরচ, কম পরিশ্রম আর অল্প সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড় ৫ থেকে ৬ মণ হারে সরিষার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সরিষা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় আর সরিষা তোলার পর বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব।
যার কারণে প্রতি বছরই সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বগুড়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সরিষার। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কম খরচ, কম শ্রম এবং দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। যে কারণে চাষিরা আবাদে লাভ বেশি পায়। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। এরমধ্যে কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া ও শেরপুরে বেশি সরিষার আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলাতেও সরিষা চাষ করেছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সরিষার দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন এ জেলার চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, সরিষা তেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারনে বাজারে সরিষার দাম এখন বেশ ভালো। বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে এবারও ভালো আয় হবে সরিষা বিক্রিতে। বগুড়ার কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিস্তিন্ন এলকা জুড়ে মাঠের পর মাঠ চাষীরা ব্যাপক হারে আবাদ করেছেন সরিষার। রবি মৌসুমে আলুর বদলে উন্নত মানের সরিষার বীজ বপন করেছেন। বপন থেকে মাত্র ৭৫ দিনের এ ফসলটিতে তেমন সেচ দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামন্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দেওয়ার পরেই ভালো ফলন পেয়ে থাকেন চাষীরা।
এক বিঘা জমি চাষ করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়। সরিষা বিক্রির পর সব খরচ বাদে ৮ থেকে ১০হাজার টাকা লাভ হয়। শাজাহানপুর উপজেলার সরিষা চাষি এনামুল হক জানান, তিনি আমন ধান কাটার পর সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে দেশী জাতের সরিষা রোপন করেছেন। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ ফসলের ভালো ফলন আশা করছেন তিনি। মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুল ফুটেছে। আরো কয়েকটা দিন পর সরিষা মাড়ায় করা যাবে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতলুবর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২২ হাজার বিঘা জমি বেশি। ইতোমধ্যে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ জমিতে চাষ শেষ হবে। এ বছর বগুড়ায় ২০ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ মণ সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৫ মণ বেশি। তিনি বলেন আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন আরো বাড়তে পারে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।।
error: Content is protected !!