হোম » প্রবাস » হোসেনপুরে মা ও দুই মেয়ে হত্যাকান্ড : দেশে ফিরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কবর দিল প্রবাসী মঞ্জিল মিয়া

হোসেনপুরে মা ও দুই মেয়ে হত্যাকান্ড : দেশে ফিরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কবর দিল প্রবাসী মঞ্জিল মিয়া

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে নিজ ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী ও দুই মেয়ের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
স্ত্রী ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিন পর শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন মঞ্জিল মিয়া।জুমার নামাজ পর মঞ্জিল মিয়ার শ্বশুরবাড়ি পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের নরপুর গ্রামে জানাজা শেষে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে দাফন করা হয়।
গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল ইউনিয়নের বাসুরচর গ্রামের নিজ ঘরের দুটি বিছানা থেকে সৌদি প্রবাসী মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী তাছলিমা আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে মোহনা (১১) ও ছোট মেয়ে বন্যার (৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।শনিবার (১৮ নভেম্বর) সৌদি আরব প্রবাসী মঞ্জিল মিয়া বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে আমি প্রবাসে অবস্থান করছি।আমার সব কিছুই ভালোই চলছিল।
এখন আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।দেশে ফিরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কবর দিতে হলো।দুনিয়াতে আমার আর কেউ রইল না।আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।এদিকে এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।গত বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকালে নিহত গৃহবধূ তাস‌লিমা আক্তারের ভাই কবীরুল ইসলাম নয়ন বাদী হয়ে হোসেনপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদী নিহত তাসলিমা আক্তারের ভাই কবীরুল ইসলাম নয়ন জানান, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ আমার গ্রামের বাড়ি পাকুন্দিয়া নরপুর গ্রামে নিয়ে আসি।আমার বোন জামাই শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছা পোষণ করায় আমরা দুই দিন ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ বাড়িতে রাখি।বোন জামাই সৌদি থেকে এসে আমাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন কাফন সম্পন্ন করেন।এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা পাইনি।শুনেছি এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে বাসুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার প্রতিদিনের মতো তার সহপাঠী মোহনাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে যায়।সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোহনার বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করে।একপর্যায়ে দরজা খোলা দেখে সে ঘরে ঢুকে মোহনা ও তার মা-বোনকে আলাদা খাটে শুয়ে থাকতে দেখে।পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা বলে, ঘরে প্রবেশ করে কাকিকে ডাকতেছি- কাকি মোহনা কি স্কুলে যাবে না? তারপর আমি কাকিকে ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে বন্যা আর মোহনাকে ঘুম থেকে জাগাতে হাত ধরে টানাটানি করি।কিন্তু মোহনা শরীর তখন পাথর হয়ে গেছে। মোহনাকে টানি কেউ উঠে না।
এরপর ছোট বোন বন্যা সেও উঠে না।পরে মোহনার মায়ের কাছে গিয়েছি আবার, মাও উঠে না।পরে ডরে আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেছি।তারপর আমার আরেক বান্ধবী লামিয়ার কাছে গিয়ে সব কথা বলেছি।তখন বান্ধবী লামিয়া বলে গিয়ে দেখছিস রক্ত চলাচল করে কিনা তখন আমি বলি না।পরে সে ও আমি আবার গিয়েছি।গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করি ঘুম থেকে উঠার জন্য, কিন্তু উঠেনি। তখন আমরা স্কুলে যাই গিয়ে আমাদের আরেক বান্ধবীকে বলি।সে আবার বাড়িতে এসে দেখে সবাইকে বলে।পরে জানতে পারি তারা সবাই মারা গেছে।নিহত তাসলিমা আক্তারের ভাসুর গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রতিদিনের মতোই সকালে গরু ঘর থেকে বের করে আমি বন্দে (কৃষি জমিতে) চলে যাই।
বন্দে থেকে আরেকবার আছি ৯টার কাছাকাছি সময়ে।এসে নাস্তা খেয়ে আমি একটু শুয়েছি।এরপর ওই বাড়ি চিৎকার চেঁচামেচি হলে আমি উঠে গিয়ে দেখি।দরজার মুখে  গিয়ে দেখলাম তারপর আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই।তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে কাউকে কোনো সন্দেহ নেই।তবে তাদের ঘর থেকে একটা মেমোরি কার্ড পাওয়া গেছে।সেই মেমোরিতে পাশের বাড়ির এক ছেলের কণ্ঠ পাওয়া গেছে।সেটা আরও দুই বছর আগের হবে।আমরা থানায় জমা দিয়েছি।এখন সেই ছেলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটা বলতে পারি না।
সেই ছেলে বর্তমানে আটক আছে।আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেইনি।তবে তাছলিমার ভাই অভিযোগ দিয়েছে।কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, হোসেনপুরের ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড।যদিও আমরা এখনো ময়নাতদন্তে রিপোর্ট পাইনি।তবে আমরা মার্ডার ধরেই আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি।আমরা সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসছিলাম।এর মধ্যে পাঁচজনকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।  তাদের কাছে সন্দেহজনক কিছু পাইনি।অন্য দুজনকে আমাদের মনে হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।একজনের নাম জাহাঙ্গীর অন্যজনের নাম ছোটন।এই দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।আমরা রিমান্ডের আবেদন করেছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো।
error: Content is protected !!