হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » সোনাইমুড়ী উপজেলা  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ

সোনাইমুড়ী উপজেলা  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ

মোহাম্মদ হানিফ, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী   সোনাইমুড়ী  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছেন.  ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কাজ চলছে দীর্ঘদিন থেকে।রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কম এবং নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। 
খাবারের এমন অনিয়মের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা সোনাইমুড়ীর  মাহোতোলা এলাকা থেকে এসেছেন সাহজাহান বললেন প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে শাহজাহান  দুই দিন থেকে ভর্তি আছি  হাসপাতলে  নিম্নমানের খাবার. তেল মসলা কিছুই দেয় না সিদ্ধ করে এনে দেন.  এগুলি খানার কোন উপযোগী না  আমি বাইরে থেকে কিনে  আনি খাই।, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত।
হাসপাতালে ১৪ নং বেডে ভর্তি আছেন ৬০ বছরের আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা মুখে নেওয়া যায় না। তিনি খাওয়া নেন না। হলুদ, মরিচ নেই শুধু পানি দিয়ে রান্না করে রোগীদের দেওয়া হয়। এজন্য বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান।
আরেক রোগী নাম আবুল কালাম। বয়স ৭০ বছর। গত শুক্রবার থেকে বুকে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৬ নাম্বার বেডে। পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর তার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সোমবার দুপুরে খাবার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় লাউ, মুরগির মাংস। খেতে না পেরে পাশেই খাবার প্লেট রেখে দিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের  মানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘ বছরের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এধরনের অনিয়ম করছে। ২০০৬ সালে নোয়াখালী সদর উপজেলার খান ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারী জহির খান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার নেন। পরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে খাদ্য সরবরাহের পাওনা টাকার দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার প্রক্রীয়া বন্ধ করে রেখেছে চক্রটি। যার কারনে মামলা থাকায় টেন্ডার না হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ১৭ বছর থেকে এই হাসপাতালের রোগীদের খাদ্য সরবরাহ করে আসছে। টেন্ডার না হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ বছর তাদের ইচ্ছামত নিম্নমানের  খাবার সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন খাবারে সরকারী ভাবে ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে নিম্নমানের  খাবার সরবরাহ করায় তা খেতে পারেন না অধিকাংশ রোগীরা। অনেকেই খাবার না খেয়ে ফেলেদেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে খাবার না নিয়ে বাড়ি থেকে এনে খান। দরপত্র অনুযায়ী একজন রোগীর সকালের জন্য প্রতিদিন রুটি, একটি কলা, একটি ডিম ও ২৫ গ্রাম চিনির জন্য মোট ৩৬ টাকা ২৫ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। দুপুরে ও রাতে চিকন চালের ভাত, কারফু বা রুই মাছ, খাশি বা ব্রয়লার মুরগির মাংস, মুগডাল, ফুলকপি, গোলআলু, শিম ও পটল সহ সর্বমোট ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহে মোটা চাল, নিম্ন মানের কলা, রুটি সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ রোগীরাই মোটা ভাত খেতে পারেন না।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত বরাদ্দে প্রতিটি রোগীর জন্য সকালে ও দুপুরে যে ধরনের খাবার ও যে পরিমান খাবার সরবরাহের কথা রোগীরা সেই পরিমান খাবার পাচ্ছেন না। পরিবেশন করা সকল খাবারই নিম্নমানের।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাবুর্চি ওহিদুল আলম জানান, মাইজদি থেকে খান গ্রæপের একটি প্রতিষ্ঠান গত ১৬-১৭ বছর থেকে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাওনা টাকার দাবিতে একটি মামলা থাকায় টেন্ডার হচ্ছেনা। মামলা নিস্পত্তি করার জন্য কারো মাথা ব্যাথা নেই। দলীয় লোকজন ফায়েদা লুটতে একটি গ্রুপ টেন্ডার হতে দেয় না। তাকে যা দেওয়া হয় তা দিয়েই তিনি খাবার রান্না করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাদ্য সরবরাহকারী প্রষ্ঠিান খান গ্রুপের স্বত্বাধিকারী জহির খান জানান, রোগীদের সিডিউল মোতাবেক খাবার সরবরাহ করছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা তা তদারকি করছেন। বকেয়া পাওনা থাকায় আদালতে মামলা রয়েছে বিধায় টেন্ডার হচ্ছেনা।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, তিনি ব্রেইন টিউমারের কারনে ছুটিতে আছেন। কোন তথ্য জানতে চাইলে অফিস থেকে নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে হাসপাতালে সরবরাহকৃত খাবার মান ভালো।
নিম্ন মানের খাবার ও দীর্ঘদিন টেন্ডার প্রকৃয়া বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের সাথে। তিনি মুঠোফোনে জানান, যে খাবার দেওয়া হয় তা নোয়াখালী জেলার অন্য সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভালো। এখানে ওজন মেপে খাবার দেওয়া হয়। মামলা থাকায় টেন্ডার প্রকৃয়া বন্ধ রয়েছে। তবে কত বছর টেন্ডার হচ্ছেনা তা স্পষ্ট করে জানাননি তিনি।
error: Content is protected !!