হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » জমি দখল করতে জোরপূর্বক মাদ্রাসার ঘরের উপর তোলা হয়েছে ঘর

জমি দখল করতে জোরপূর্বক মাদ্রাসার ঘরের উপর তোলা হয়েছে ঘর

আবুল হাশেম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি: জমি ভাড়া নিয়ে ২০২০ সালে গড়ে উঠেছে ফয়জুল উলুম নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা। জমিটির ক্রয় সুত্রে মালিক রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কলিগ্রামের সড়কঘাট এলাকার মৃত মোজাফফর হোসেনের ছেলে বেনজির আহমেদ ওরফে বিপ্লব মিয়া।

ওই জমি একই এলাকার মৃত হারান উদ্দিন মন্ডলের ছেলে উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের গোলাম মোস্তফা নিজের দাবি করে জোরপূর্বক আমগাছ কেটে মাদ্রাসার ঘরের উপর ঘর তুলেছে এমন অভিযোগ করেছেন বিপ্লব মিয়া। এ বিষয়ে বাঘা থানা ও আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।

অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর বক্তব্যে জানা গেছে, ভুক্তভোগী বেনজির আহমেদ ওই এলাকার মৃত ওয়াছিম উদ্দিন মিঞার ছেলে লুৎফর রহমান ওরফে নিলু মিঞার  নিকট থেকে গত ১৫/০৬/২০০৯ ইং তারিখে ১৮১১ নম্বর দলিল, ১৫/০৪/২০১০ ইং তারিখে ১৩৬৭ নম্বর দলিল ও ১৩/০২/২০১২ ইং তারিখে ৪৮৫ নম্বর দলিল মূলে মোট ২৯ শতাংশসহ সর্বসাকুল্যে .৪২ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে নামজারি পূর্বক খাজনা পরিশোধ করে ১২ বছরের উর্দ্ধকাল যাবৎ অন্য সকল অংশীদারদের জ্ঞাতসারে ভোগ দখল করে আসছেন।

যার তফসীল, জেলা-রাজশাহী, থানা-বাঘা মৌজা-চকনারায়নপুর, জেল নং -১৪২, আরএস খতিয়ান নং-১৯৬, আরএস দাগ নং- ৩৪৬, শ্রেণী- আমবাগান, পরিমাণ ১.৭৫ একর কাতে .৪২ একর । বর্তমানে যার উপর একটি মাদ্রাসা চালু আছে। গত  ১০ জুন গোলাম মোস্তফা তার লোক বল নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ওই জমি তাদের দাবি করে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার আম গাছ ও মেহগনি গাছ কর্তন করে সেখানে ঘর নির্মাণ করতে থাকে । খবর পেয়ে বেনজির আহমেদ গোলামকে জমির গাছ কাটতে এবং ঘর নির্মাণ করতে নিষেধ করলে তিনি তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জমি থেকে সরে যেতে বলেন। এমনকি ভবিষ্যতে ওই জমির উপর গেলে পরিণাম ভয়াবহ হবে এবং প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়। ফলে বেনজির নিরুপায় হয়ে বাধা প্রদান থেকে বিরত থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়।

কিন্তু থানা থেকে এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেনজির আহমেদ গত ২৬ জুন আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত উভয় পক্ষের কাগজপত্রাদী পর্যবেক্ষণ করে সহকারী কমিশনার ভূমি বাঘা রাজশাহী কর্তৃক প্রেরিত তদন্তের ওপর ভিত্তি করে গত ৩১ অক্টোবর (২০২৩) বেনজির আহমেদের জমিতে গোলাম হোসেন বা তার পক্ষের কোন লোকজনের প্রবেশ আদেশ ধারা বারিত করেন এবং থানাকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন। কিন্তু সকল নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সম্পন্ন পেশি শক্তির বলে অন্যায় ভাবে উক্ত সম্পত্তিতে গোলাম মোস্তফা ঘর নির্মাণ করেছেন‌।

এলাকাবাসী আরও জানান, গোলাম মোস্তফা অর্থবিত্তশালী, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তিনি যেখানে সেখানে জমি দখল করতে যান। গত মাসে  চকছাতারি এলাকার বাঘা নিমতলা মসজিদ সংলগ্ন সরকারি রাস্তা জোর পূর্বক  দখল করে লোহার গ্রিল দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল দেন। পরে বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী বিষয়টা অবগত হয়ে সরেজমিনে জমি মেপে তাকে উচ্ছেদ করেন। এখানেও তিনি জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন। গোলাম যার নিকট থেকে সম্পত্তি ক্রয় করছেন, তার সম্পত্তি  আগেই বেনজির আহমেদের নিকট বিক্রয় করেছেন। গোলাম এটা যেনেও তার থেকে জমি ক্রয় করেছে এবং তার ৮ শতাংশ জমি বিগত ১০ বছরে তিন জায়গায় দখল করতে গেলেও কোথাও দখল করতে পারে নাই। সবশেষে ৫ নভেম্বর বেনজিরের ভোগ দখলে থাকা সম্পত্তিতে জোরপূর্বক আমগাছ কর্তন করে ঘর নির্মাণ করছেন।

ওই সম্পত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করা রান্টু আহমেদ জানান, আমি বেনজিরের থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রায় ১০ বছর থেকে এখানে ঢোপঘর স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করে জীবন যাপন করছিলাম। এমতাবস্থায় গত জুন মাসের ১০ তারিখে গোলাম মোস্তফা আমার ঢোপঘর ফেলে দেয় এবং আমার দোকান সরিয়ে নিতে বলে। ফলে আমি বাধ্য হয়ে দোকান সরিয়ে নিয়েছি। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আমি অনেক কষ্টে আছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম বলেন, এটা আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তি। আমি আমার ক্রয়কৃত আট শতাংশ জমির ওপরে ঘর নির্মাণ করছি, কারও জমিতে যায় নাই।

এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সবুজ রানা জানান, অভিযোগের  বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মাদ্রাসা সংলগ্ন রাস্তার পূর্ব পাশে থাকা রান্টুর দোকানটি উচ্ছেদ করায় বিপাকে পড়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে দোকানটি রাস্তার পশ্চিমে হওয়ায় বাঘা-সড়কঘাটের ব্যাস্ততম রাস্তা পার হয়ে মাদ্রাসার কোমলমতি শিশুদের আসতে হচ্ছে দোকানে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

error: Content is protected !!