হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » কক্সবাজারে ১২০ কোটি টাকার ২৪ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ৪ 

কক্সবাজারে ১২০ কোটি টাকার ২৪ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ৪ 

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী: কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী এলাকা থেকে ১২০ কোটি টাকার অবৈধ মাদক আইস (ক্রিস্টালমেথ) এর সর্ববৃহৎ চালান ২৪.২ কেজি আইসসহ কক্সবাজার কেন্দ্রিক আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতা ইরান মাঝিসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তারর করেছে র‌্যাব -১৫।
র‌্যাব জানান,বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক হলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। সাম্প্রতিক সময়ে আইসের মাধ্যমে নেশার প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাদক কারবারীরা পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বিভিন্ন কৌশলে আইসের চালান নিয়ে আসছে।
র‌্যাব এই মাদক কারবারীর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নজরদারী বৃদ্ধি করে। র‌্যাব ফোর্সেস অদ্যাবধি আইসের বিরুদ্ধে ৩০ এর অধিক সফল অভিযান পরিচালনা করে ৩১ কেজি আইস উদ্ধার করে।
সম্প্রতি গোয়েন্দা সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে একটি মাদক কারবারি চক্র পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বড় একটি মাদকের চালান নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় তাদের আস্তানায় অবস্থান করছে। এ প্রেক্ষিতে র‌্যাব উখিয়ার পালংখালীর সফিউল্ল্যাহ কাটা সংলগ্ন এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল (শনিবার রাতে) উখিয়ার পালংখালীর সফিউল্ল্যাহ কাটা সংলগ্ন এলাকার ইরান মাঝির আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থায় আনুমানিক ১২০ কোটি টাকা মূল্যমানের ২৪.২ কেজি আইসসহ কক্সবাজার কেন্দ্রিক আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,মৃত সিরাজুল ইসলামের ২ ছেলে ইমরান প্রকাশ ইরান মাঝি (৩৩)মোঃ রুবেল প্রকাশ ডাকাত রুবেল (২৬)মৃত আলী আহাম্মদ এর ছেলে মোঃ আলাউদ্দিন (৩৫)মৃত আব্দুল করিমের ছেলে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ কালা বদা (৩৭)।
র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)অতিঃ পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে রবিবার দুপুরে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হতে মাদক চোরাচালান চক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ মাদক আইস চোরাকারবারির সাথে জড়িত। মূলত গ্রেপ্তারকৃত ইরান মাঝি এই চক্রের মূল হোতা।
তার নেতৃত্বে মাদক সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রটির বেশ কয়েকজন সদস্য পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে দূর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কক্সবাজার ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রিস্টাল আইসসহ অন্যান্য ভয়ংকর মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত।
এই চক্রটি মূলত কক্সবাজার কেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র এবং রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্ট রয়েছে। প্রথমে ইরান মাঝির নেতৃত্বে চক্রের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক চক্রের নিকট হতে মাদক গ্রহণ করে অবৈধ পথে ঘুমধুম সীমান্ত হয়ে তারা মাদকগুলো বর্ডারের নিকটবর্তী গোপন স্থানে জমা করে।
পরবর্তীতে সেখান থেকে তারা দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল/নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আনা ক্রিস্টাল আইসসহ অন্যান্য মাদক কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখত।
এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি মাদকের চালানগুলো ইরান মাঝির জামতলির সফিউল্লাহ কাটা সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকার বাড়িতে/আস্তানায় নিয়ে আসত এবং নিজেদের মাঝে বন্টন করত। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তারা বিভিন্ন উপায়ে শরীরের মধ্যে বেধে, গাড়িতে সেট করে এবং যোগান হিসেবে রাজধানীমুখী বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ঢাকাসহ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করত।
সর্বশেষ তারা শনিবার এই চালানটি উক্ত আস্তানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে সেখান থেকে মাদকের চালানটি তারা চার ভাগে ভাগ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের এজেন্টদের নিকট পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল।
র‌্যাব আরও জানান,গ্রেপ্তারকৃত ইমরান প্রকাশ ইরান মাঝি নলবুনিয়া ও পালংখালী এলাকার একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। সে দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সাথে সার্বিক সমন্বয় সাধন করত এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল/নৌপথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো।
পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই বছর যাবত তারা মায়ানমার থেকে ক্রিস্টাল মেথ (আইস) নিয়ে আসা শুরু করে। ইতোপূর্বে সমুদ্রপথে সে বেশ কয়েকটি আইসের চালান নিয়ে এসেছে। ইরান মাঝি আরও জানায় পার্শ্ববর্তী দেশ হতে আনা এটিই তার সবচেয়ে বড় মাদকের চালান।
তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, অস্ত্র, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা সংক্রান্ত ৭টির অধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে বিভিন্ন মামলায় ৪ বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। সে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।
গ্রেপ্তারকৃত রুবেল ইরান মাঝির সহোদর, বিশিষ্ট মাদক ব্যবসায়ী এবং ইরানের অন্যতম সহযোগী। সে দীর্ঘ দিন যাবৎ মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে বিভিন্ন সময় ইরান মাঝির সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে নৌপথ/দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসতো।
পরবর্তীতে চালানগুলো নলবুনিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে এনে তার ভাইয়ের জামতলির সফিউল্লাহ কাটা সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকার বাড়িতে/আস্তানায় জমা করত। পরবর্তীতে তাদের আস্তানা হতে মাদকের চালান ভাগ করে বিভিন্ন উপায়ে এজেন্টদের মাধ্যমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত।
তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, ডাকাতি, মারামারি ও অপহরণ সংক্রান্ত ৪টির অধিক মামলা রয়েছে এবং ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়। সে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।
গ্রেপ্তারকৃত আরেক আসামী আলাউদ্দিন বাংলাদেশ পুলিশের একজন বহিস্কৃত সদস্য। সে ২০১৭ সালে মাদক বহনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। তার নামে কক্সবাজারের উখিয়াসহ বিভিন্ন থানায় মাদক, দস্যুতা ও মারামারি সংক্রান্তে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সে ৩বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছে এবং কারাভোগ করেছেন।
error: Content is protected !!