হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের তিন ধাপ উন্নতি

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশের তিন ধাপ উন্নতি

আওয়াজ অনলাইন: বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে বাংলাদেশ তিন ধাপ উন্নতি করেছে। অর্থাৎ দেশে সন্ত্রাসবাদ আরও কমেছে, দেশ আরও নিরাপদ হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানের পরই সবচেয়ে নিরাপদ এখন বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারতের চেয়েও বাংলাদেশ নিরাপদ।

গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স (জিটিআই)-২০২৩ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) গত এক দশক ধরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের এই সূচক প্রকাশ করছে। এবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আইইপির এ-সংক্রান্ত দশম প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে ১৬৩টি দেশের সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

আইইপি গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স (জিটিআই) প্রতিবেদন তৈরি করে টেররিজমট্র্যাকার ও অন্যান্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। টেররিজমট্র্যাকার ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার তথ্য প্রকাশ করছে। তাদের ডেটাবেজে ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার তথ্য রয়েছে। এবারের জিটিআই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ২০২২ সালের ঘটনাবলির ওপর নির্ভর করে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমেছে

জিটিআই সূচকে যে দেশের স্কোর যত বেশি, তার অবস্থান তত আগে এবং সেই দেশ তত বেশি সন্ত্রাসবাদের কবলে রয়েছে। এই স্কোর নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ বছরে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, তাদের হাতে জিম্মি ও আহত হওয়ার ঘটনাগুলো বিবেচনা করে। ১৬৩ দেশের মধ্যে তালিকায় এক নম্বরেই রয়েছে আফগানিস্তান। আগেরবারও দেশটি ১ নম্বরেই ছিল। দেশটির স্কোর ৮ দশমিক ৮২২। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৩ নম্বরে। বাংলাদেশের স্কোর ৩ দশমিক ৮২৭। আগেরবার বাংলাদেশ ছিল ৪০ নম্বরে। এই হিসাবে বাংলাদেশ তিন ধাপ উন্নতি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ দমনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উন্নতি করা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এদিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে নেপাল।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসকবলিত ১০টি দেশের দুটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। এগুলো হলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। এর মধ্যে আফগানিস্তান বৈশ্বিক তালিকায় এক নম্বরে, পাকিস্তান ছয় নম্বরে রয়েছে। পাকিস্তানের স্কোর ৮ দশমিক ১৬০। আগেরবারের তুলনায় পাকিস্তানের তিন ধাপ অবনতি ঘটেছে।

আবার সন্ত্রাসবাদ থেকে সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলোর একটি ভুটানও দক্ষিণ এশিয়ার। দেশটিতে বিগত পাঁচ বছরে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। ভুটানের স্কোর শূন্য। এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

এদিকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় উন্নতি করা দেশগুলোর দুটিও দক্ষিণ এশিয়ার। এই দেশ দুটি হলো বাংলাদেশ ও নেপাল। উভয় দেশেই ২০২২ সালে দুটি করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে কোনো ঘটনায়ই কেউ হতাহত হয়নি।

দক্ষিণ এশিয়ার তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নেপাল, তারপর রয়েছে শ্রীলঙ্কা। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ষষ্ঠ এবং আফগানিস্তান সপ্তম। এর মধ্যে বৈশ্বিক তালিকায় ভুটান ৯৩ নম্বরে আছে। শূন্য স্কোরের সবগুলো দেশের অবস্থানই ৯৩ নম্বরে। বাংলাদেশ আছে ৪৩ নম্বরে, নেপাল ৩৬, শ্রীলঙ্কা ২৯, ভারত ১৩, পাকিস্তান ৬ এবং আফগানিস্তান আছে এক নম্বরে।

মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ হলেও বাংলাদেশের প্রতিবেশী। বৈশ্বিক তালিকায় এই দেশটি আছে ৯ নম্বরে। আগেরবারের তুলনায় মিয়ানমারের এক ধাপ অবনতি ঘটেছে।

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি

তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র আছে ২৩ নম্বরে। আগেরবারের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র দুই ধাপ উন্নতি করেছে। ২০১১ সালের পর এবারই যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এতটা উন্নতি করেছে। যদিও ২০২২ সালে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানি বেড়েছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যে ২০১৪ সালের পর ২০২২ সালেই প্রথম সন্ত্রাসী হামলায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আর কানাডায় এই বছর কোনো সন্ত্রাসী হামলা কিংবা সন্ত্রাসবাদের কারণে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। বৈশ্বিক তালিকায় যুক্তরাজ্য আছে ৪২ নম্বরে। আর কানাডা আছে ৫৪ নম্বরে। এদিকে ফ্রান্স ৩৪ ও জার্মানি ৩৫ নম্বরে আছে। রাশিয়া আছে ৪৫ নম্বরে। শূন্য স্কোর নিয়ে চীন আছে ৯৩ নম্বরে। এই দেশটি আগেরবারের তুলনায় ২৫ ধাপ উন্নতি করেছে।

প্রতিবেদনে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় সন্ত্রাসবাদের কারণে প্রাণহানি ৯ শতাংশ কমেছে। তবে এই তালিকা থেকে যদি আফগানিস্তানকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানি ৪ শতাংশ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আফগানিস্তান চরমভাবে সন্ত্রাসবাদের কবলে রয়েছে।

এদিকে বৈশ্বিকভাবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলা ২৮ শতাংশ কমেছে। এই বছর ৮৮ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলা ও সন্ত্রাসী হামলাজনিত ৯৮ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে সংঘাতকবলিত দেশে। আর ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা তিন গুণ কমেছে। ২০১৫ সালে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা দেখেছে বিশ্ব। তালিকার ১৬৩ দেশের ১২১টিতেই ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০৭ সালের পর এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।

তবে ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলা আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গড়ে ২৬ শতাংশ বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ২০২১ সালে প্রতি হামলায় প্রাণহানির হার ছিল ১ দশমিক ৩। সেখানে ২০২২ সালে প্রতি হামলায় প্রাণহানির হার ছিল ১ দশমিক ৭। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এই বছরই হামলা প্রতি প্রাণহানির হার বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি এখন সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল সন্ত্রাসী সংগঠন। ২০২২ সালে সংগঠনটির হামলায় ২৩৩ জন নিহত হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় নয়গুণ। তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো ২০২২ সালেও সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গি সংগঠন ছিল। অবশ্য আইএসের হামলা আগের বছরের তুলনায় বেশ খানিকটা কমেছে। তাদের হামলায় প্রাণহানিও কমেছে ১৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বে খাদ্য অনিরাপত্তায় থাকা ৮৩ কোটি মানুষের ৫৮ শতাংশই সন্ত্রাসবাদকবলিত শীর্ষ ২০ দেশের বাসিন্দা।

error: Content is protected !!