হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » পাউবোর অতিরিক্ত বরাদ্দ ও অপ্রয়োজনীয় পিআইসি কেন ? রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের আহবান পরিকল্পনা মন্ত্রীর : দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের দাবী মুকুটের

পাউবোর অতিরিক্ত বরাদ্দ ও অপ্রয়োজনীয় পিআইসি কেন ? রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের আহবান পরিকল্পনা মন্ত্রীর : দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের দাবী মুকুটের

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার কর্তৃক ৩০/৩৫ জন টিভি সাংবাদিক ও তাদের ক্যামেরা ম্যানদেরকে ১০ হাজার টাকা হারে সালামী প্রদানের ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ১৫ এপ্রিল শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নিজ অফিসে বসে টেলিভিশন সাংবাদিকদেরকে ফোন করে ঢেকে নিয়ে টাকার বান্ডিল ধরিয়ে দিয়েছেন
মামুন হাওলাদার।

এ ঘটনায় শহরের সিভিল সোসাইটির বুঝতে বাকী নেই দুরে নয় বরং নিকটেই শহরের ষোলঘরে পাউবোর সরকারী অফিসে বাস করছে দুর্নীতির কালো বেড়াল। বৃহত্তর বরিশালের মামুন হাওলাদারই হচ্ছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূল কালো বিড়াল।

সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে মুখবন্ধ করতে যিনি অপ্রয়োজনীয় পিআইসি ও অতিরিক্ত সরকারী বরাদ্দের টাকা পকেটস্থ করার পাশাপাশি নানাভাবে ঘুষের টাকার ভাগ ভাটোয়ারায় লিপ্ত রয়েছেন।

রোববার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এর জেলা সংবাদদাতার এক প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন
বোর্ডের অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গঠন ও দ্বিগুন বরাদ্দ নিয়ে সরকারী অর্থের অপচয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী
আলহাজ্ব এম.এ মান্নান এমপি বলেন,মাত্র হাতেগনা ৫ শত পিআইসি এবং ৯৪ কোটি টাকার বরাদ্দ এর স্থলে এইবার এক
হাজার ৭৬টি পিআইসি এবং দুইশ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ কারা কিভাবে কেন করলো তা আমার বোধগম্য নয়।

রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ের সাথে যারা যেভাবে জড়িত তাদের সম্পর্কে সরজমিন সংবাদ আপনারা স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করুন।

আমাকে কপি দিন আমি অবশ্যই বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে নিয়ে আসবো। পরিকল্পনা মন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট বলেন,আমরা জেলা আওয়ামীলীগ বা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কোনভাবেই পিআইসির কাজের সাথে জড়িত নই। আমরা নেত্রীর নির্দেশে সবসময়ই কৃষক ভাইদের পাশে দাড়িয়ে তাদের ক্ষেতের ফসল গড়ে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি।

কিন্তু প্রতিবছর ঘুরেফিরে একইচক্রকেই দেখা যায় পাউবোর কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে। যেখানে বছরের পর বছর পিআইসির কাজ হচ্ছে সেখানে পূর্বের পিআইসিতে সামান্য মাটি ভরাট ও মেরামতের কাজ করে চিহ্নিত এ চক্রটি পকেটস্থ করছে কোটি কোটি টাকা। তাছাড়া দিন দিন ফসলি জমি কমছে। এদিক থেকে পিআইসির সংখ্যা কমার কথা কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পিআইসির সংখ্যা ও সরকারী বরাদ্দ অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে রাষ্ট্রের টাকা অপচয় ও লুটতরাজ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন,সাবেক জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলামের সময়ে যদি ৫শত পিআইসি এবং ৮০ কোটি টাকা দিয়ে জেলায় বাম্পার
ফলন ঘটানো হয় তাহলে এই বছর কারা কেন এবং কোন যুক্তিতে এক হাজার ৭৬টির বেশী পিআইসি ও ২শ কোটি টাকার
উপরে বরাদ্দ এনেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি অবিলম্বে পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে সরকারের
টাকা অপচয় ও লুটতরাজের অভিযোগে মামলা দায়ের করে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর
হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,যেখানে প্রতিনিয়ত চাষাবাদের জমি কমছে সেখানে বছর বছর বেড়ীবাধের কাজ ও প্রকল্প বাড়িয়ে
অত্যন্ত সুকৌশলে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটতরাজের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। মাঠ থেকে জেলা সদর ভায়া মন্ত্রণালয় পর্যন্ত
সিন্ডিকেট গঠন করে ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে সরকারী অর্থ। জানা গেছে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলায়
অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সংখ্যা হচ্ছে ১০৭৮টি। বরাদ্দ ২০৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। অথচ
এর আগের বছর ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পিআইসির সংখ্যা ছিল ৭২৭টি এবং বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি ৫২ লাখ ৪৭ হাজার
টাকা,২০২০-২১ অর্থ বছরে পিআইসির সংখ্যা ছিল ৮১০টি বরাদ্দ ছিল ১০৯ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা,২০১৯-২০ অর্থ

বছরে পিআইসির সংখ্যা ছিল ৭৪৪টি বরাদ্দ ছিল ১০২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা,২০১৮-১৯ অর্থবছরে পিআইসির সংখ্যা ছিল
৫৭২টি বরাদ্দ ছিল ৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঠিকাদারী প্রথায় হাওরের কাজ বাতিল করে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সর্বাধিক
৯৬৫টি পিআইসি গঠন করে ১৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ধরে প্রথমবারে জেলায় কাবিটা স্কীম প্রণয়নের মাধ্যমে
হাওরের বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। ঐ বছর বিশাল বরাদ্দের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত পিআইসি গঠন করে পানি
উন্নয়ন বোর্ড রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটতরাজ করছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হলে সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক
মো.সাবিরুল ইসলাম পরবর্তী বছরে সরজমিনে হাওরে হাওরে গিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পিআইসির সংখ্যা কমিয়ে প্রথমে
৫৭২ টি পিআইসি এবং বরাদ্দ নির্ধারন করেন মাত্র ৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু চুড়ান্ত পর্যায়ে কাজ শুরু ও শেষ করতে
গিয়ে পিআইসির সংখ্যা কমিয়ে আনেন ৫০০টিতে এবং বরাদ্দের অনেক টাকাও কমিয়ে এনে সরকারের টাকা সাশ্রয় করেন।
কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে পিআইসির সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ানোর হিড়িক পড়ে যায়। অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয়
পিআইসি গঠন ও বাস্তবায়নের নামে প্রত্যেক উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারগন পিআইসির অনুকূলে প্রদত্ত বিলের
টাকা থেকে ১০% টাকা ঘুষ নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পিআইসির নামে পানি উন্নয়ন
বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রতি পিআইসি থেকে আগাম পার্সেন্টিজ নেন বলেও জানান পিআইসি কমিটির লোকজন।
স্থানীয় হাওরপাড়ের বাসিন্দারা বলেন,সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কোনপ্রকার নজরদারী না থাকা,আইন প্রয়োগকারী
সংস্থার গাফিলতি,ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নীরব ভূমিকা,সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশে বিরত থাকা এবং
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী সমর্থকদের কাজ ভাগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগীতা ইত্যাদি নানা কারণে প্রতিবছর
পরিকল্পিত সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি গোষ্ঠীকে একই এলাকার পিআইসির সভাপতি কিংবা সদস্য
সচিব করে পিআইসি গঠনের মাধ্যমে সরকারী টাকা লুটতরাজ করা হয়। গত ৬ বছর ধরে একই বাঁধে মাটি ফেলে
দায়সারাভাবে মেরামত করার মাধ্যমে বাঁধের কাজ করার নামে ভাগিয়ে নেয়া হচ্ছে বিশাল অংকের টাকা। সরকারী টাকা
লুটতরাজে যাতে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে না পারে সে লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশীর্বাদপুষ্ট একদল পোষ্য
সংবাদকর্মীও রয়েছে। উক্ত সংবাদকর্মীরা অল্পদিনের মধ্যেই শহরে গাড়ী বাড়ীর মালিক বনে গেছে। সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল
রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়েছে ২৮ ফেব্রæয়ারি। এরপর সময় আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে
৭ই মার্চ করা হয়। কিন্তু বর্ধিত সময়েও পুরো কাজ শেষ হয়নি। এবার জেলার ৫৮টি হাওরে ১ হাজার ৬৩টি প্রকল্পে বাঁধ
নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হচ্ছে। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। কাজে
রয়েছে নানা অনিয়ম ও গাফিলতির অভিযোগ। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সার্বিক বিষয় নিয়ে হাওরে কৃষকদের পক্ষে
সোচ্চার ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন,এবার যে এই
পরিস্থিতি হবে, সেটা আমরা শুরুতেই বুঝেছি। কারণ, এবার সংশ্লিষ্টরা কাজের চেয়ে প্রকল্প ও আর বরাদ্দ বাড়ানো নিয়েই
ব্যস্ত ছিলেন বেশি। যেখানে কাজ শুরুর কথা ১৫ ডিসেম্বর, সেখানে এক সপ্তাহ আগেও কিছু কিছু জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে।
প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে বিলম্ব এবং কাজে সঠিক তদারকির অভাবে এবারও নির্ধারিত সময়ে
কাজ শেষ করা যায়নি। বিজন সেন রায় বলেন,আসলে নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না হলে সমস্যা তো হবেই। নভেম্বর মাসের
মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসি গঠন শেষ করার কথা। এই কাজটি সঠিকভাবে হয় না। সংশ্লিষ্টরা নানা অজুহাত দেখিয়ে এই
কাজে বিলম্ব করেন। গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও সেটি কখনোই হয় না। এই
কাজগুলো ঠিকমতো করলে কাজে অনিয়ম-গাফিলতির সুযোগ কম থাকত। আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রকল্প নিয়েও
একধরনের চাপে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। যত বেশি প্রকল্প তত বেশি লাভ, এখন বিষয়টা এ রকম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি
বলেন,পাউবো ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাই প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসি গঠনের কাজ করেন। এই কাজটি সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ। এটি সঠিকভাবে হলে অনিয়মের সুযোগ কম। কিন্তু এটি সঠিকভাবে হয় না। অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প
নেওয়া হয়। দেখা যায়, অক্ষত বাঁধেও বরাদ্দ দেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পিআইসিতে রাজনৈতিক
দলের লোক, স্থানীয় প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে ঢুকে পড়েন। তাঁরাই কাজে গাফিলতি করেন বেশি। আবার শুরুতে তদারকি

থাকে কম। যাঁরা প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও তদারকিতে যুক্ত, তাঁদের কারোরই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিজন সেন রায়
বলেন,গত বছর প্রকল্প ছিল ৭২৭টি। ব্যয় হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। এবার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬৩টি, প্রাক্কলন ব্যয়
ধরা হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা। বন্যার অজুহাত দেখিয়ে এই প্রকল্প ও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এটা হাস্যকর। সুনামগঞ্জে
প্রতিবছরই বন্যা হয়, বাঁধ প্রতিবছরই পানির নিচে যায়। এটা খোঁড়া যুক্তি। আবার এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই আছে
অপ্রয়োজনীয়। বরাদ্দ ধরা হয়েছে অতিরিক্ত। যেখানে বরাদ্দ পাঁচ লাখ টাকার মাটি লাগবে, সেখানে ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা।
সরকারের অনেক টাকার অপচয় হয়। যত্রতত্র বাঁধে ক্ষতি হচ্ছে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের। আমরা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের
বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলি, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। এখন হাওরে বাঁধ নির্মাণকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এটা
ভাঙতে হবে। আমরা এসব বিষয়ের তদন্ত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিজন সেন রায় বলেন, সুনামগঞ্জের
মানুষ বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। জেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরে এবার ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো
ধানের আবাদ হয়েছে। এসব জমির ধান অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কবল থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বাঁধ দিতে হবে।
কিন্তু এই কাজটি হতে হবে নির্ধারিত সময়ে ও সঠিকভাবে। অসময়ে তাড়াহুড়া করে কাজ করলে বাঁধ দুর্বল হয়। বৃষ্টির মধ্যে
কাজ করলে বাঁধ টেকসই হয় না। দুর্বল বাঁধ ঢলের পানির প্রথম ধাক্কা সামলাতে পারে না। বাঁধ যত আগে হবে ততই ভালো।
কিন্তু এবারও সেটি হয়নি। কাজটি সময়মতো না হওয়াটাই ফসলের জন্য বড় ঝুঁকি। সমাধান হলো, নীতিমালা মেনে কাজ
করা। কাজে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। প্রকল্প গ্রহণ ও পিআইসি গঠনে অনিয়ম বন্ধ করা। যেসব স্থানে স্থায়ীভাবে
কাজ করা যায় সেটি করা। প্রকল্প ও ব্যয় বাড়ানোর ধান্দা থেকে সংশ্লিষ্টদের সরে আসা। শেষ দিকে এসে পিআইসিদের
নোটিশ, আটক এসব লোকদেখানো পদক্ষেপ না নিয়ে যাঁরা তদারকিতে আছেন, তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা।
পিআইসি প্রথাকে বিতর্কিত করার একটা চেষ্টা আছে। একই সঙ্গে বাঁধের সংখ্যা কমানো। হাওর এলাকার নদী ও খালগুলো
খনন করা। হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ কমাতে পারলে অনেক স্থানে বাঁধ দিতে হবে না। হাওরের সাংবাদিক আল-
হেলাল বলেন,সীমান্ত হাওর আর সমতল এই ৩ ভূপ্রকৃতি বিশিষ্ট জেলা হচ্ছে সুনামগঞ্জ। এখানে বেড়ীবাঁধ বা ফসলরক্ষা বাঁধ
বলতে যাই করা হউকনা কেন উদ্দেশ্য হচ্ছে বোরো ফসল রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন। জেলার সব জায়গায় বোরো ফসল হয়না।
তাই বাঁধ হতে হবে বোরো ফসল এলাকায়। স্পষ্ট কথা সীমান্ত এলাকা অর্থাৎ দোয়ারাবাজার,বিশ্বম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ সদর ও
তাহিরপুর উপজেলার অর্ধেক এলাকাই পাহাড়ী সুনামগঞ্জের আওতাভূক্ত। এসব জায়গায় কোন বাঁধের আদৌ প্রয়োজন নেই।
অথচ এবার এই ৪ উপজেলায় গতবারের চাইতে দ্বিগুন পিআইসি গঠন ও বরাদ্দ দ্বিগুন করা হয়েছে শুধূমাত্র রাষ্ট্রীয় অর্থের
অপচয়ের জন্য। এছাড়া শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও পিআইসি এবং বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় পিআইসি
গঠনের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য একটাই সরকারী বরাদ্দের টাকা লুটতরাজ করা। প্রমাণ হিসেবে আল-হেলাল বলেন,সুনামগঞ্জ সদর
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ৪১ নং পিআইসি। এই পিআইসিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা তার
প্রতিভূ শফিক মিয়াকে পিআইসির সভাপতি করে পিআইসির কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ শফিকের কোন জমিজমা নেই।
এলাকার সবাই জানে শফিক মানে চেয়ারম্যানের লোক। আগাম উৎকোচ নিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে সেখানে।
হিললুয়ার হাওরের মধ্যে মাত্র ১২ ইঞ্চি উচু করে একটি বাঁধ মেরামতের কাজ করে সেখানে বরাদ্দ নির্ধারন করা হয়েছে ১০
লাখ টাকা। অথচ এই পিআইসিতে গতবার বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩ লাখ টাকা। তাছাড়া পিআইসি এলাকার ডান পাশে মইনপুর টু
ডলুরা এবং বামপাশে ইব্রাহিমপুর টু ডলুরা পাকা রাস্তা রয়েছে। দুইদিকে পাকা রাস্তা থাকায় ঔ হাওরে কোনভাবেই বৃষ্টির
পানি প্রবেশের সুযোগ নেই। কিন্তু পাউবোর কর্মকর্তা কর্মচারীরা অন্যায় অজুহাতে লূটপাটের উদ্দেশ্যে কথিত এলাকায় ৪১ নং
পিআইসি গঠন করেছেন। এলাকাবাসী এই পিআইসিকে ভৌতিক অপ্রয়োজনীয় ও চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার
ব্যক্তিগত পিআইসি বলে অভিহিত করেছেন। যেখানে স্থানীয় কৃষকরা পিআইসি গঠনের কোন প্রয়োজন মনে করেননি।
জেলায় মাত্র প্রয়োজনীয় ৫শত পিআইসির পরিবর্তে অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ৫৭৮টি পিআইসি গ্রহন ও বরাদ্দ নির্ধারন করে

কেন সরকারের টাকা লুটতরাজ করা হচ্ছে জানতে চেয়ে সুনামগঞ্জ পওর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন
হাওলাদার এর মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। ফলে সাংবাদিক আল-হেলাল
৭টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ১২ মার্চ তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেছেন। চাহিতো
তথ্যগুলো হচ্ছে (ক) চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলায় অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) সর্বমোট
কতটি ? প্রত্যেকটি পিআইসির সভাপতি সদস্য সচিব ও সদস্যবৃন্দের নাম,পিতার নাম,ঠিকানা,পদবী ও মোবাইল নাম্বারসহ
প্রদানের জন্য, অনুরোধ করা গেল ? (খ) চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুনামগঞ্জ জেলায় অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি
(পিআইসি) এর অনুকূলে মোট বরাদ্দ কত টাকা ? ৭ মার্চের মধ্যে কতটি পিআইসিকে মোট কত টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে
? (গ) কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকল্পে জেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা কত ? সভাপতি ও
সদস্যসচিবসহ সকল সদস্যদের অফিসিয়েল পদবী,নাম,পিতার নাম,ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার প্রদানের জন্য অনুরোধ করা
গেল (ঘ) আর্থিক সনওয়ারী গত ৫ বছরে কতটি পিআইসির অনুকূলে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল এবং কত টাকা কিভাবে
পরিশোধ করা হয়েছে ? (ঙ) কাবিটা কার্যক্রমের জন্য সুনামগঞ্জ জেলায় পওর বিভাগের কতজন কর্মকর্তা কর্মচারী চলমান
দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন ? সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের নাম,পিতার নাম ঠিকানা,পদবী ও মোবাইল নাম্বার প্রদানের জন্য
অনুরোধ করা গেল (চ) কাবিটা কার্যক্রমের জন্য সুনামগঞ্জে পদায়নকৃত অতিরিক্ত জনবলের নাম পদবী কর্মস্থল,স্থায়ী
ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর প্রদানের জন্য অনুরোধ করা গেল। (ছ) চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৫০০ অতিরিক্ত
অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গ্রহন করে সদাশয় সরকারের অর্থ অপচয় ও লুটতরাজের মহোৎসব চালানো হচ্ছে এ ব্যাপারে নির্বাহী
প্রকৌশলীর বক্তব্য ও মতামত কি ? ইত্যাদি। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চাহিতো তথ্যগুলো প্রদান না করায়, গত
১২ এপ্রিল সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীর কাছে আপীল আবেদন দায়ের করেছেন সাংবাদিক
আল-হেলাল। সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন,সারা জেলায় বাঁধের কাজের জন্য সর্বোচ্চ ৫শত পিআইসি এবং সর্বোচ্চ
৮০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এক হাজারের বেশি পিআইসি এবং দুইশো কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ অনুমোদনের মূল
কারণটাই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটতরাজ করা। কথিত অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত পিআইসির নামে বাড়তি টাকা অনুমোদনের
সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবী এখন সুনামগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।

error: Content is protected !!