হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » স্বদেশ লাইফে সীমাহীন অনিয়ম

স্বদেশ লাইফে সীমাহীন অনিয়ম

আওয়াজ অনলাইন: সীমাহীন অনিয়মে জড়িয়েছে নতুন প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ব্যয় করার পাশাপাশি কোম্পানিটিতে ব্যয় হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত কমিশন। এমনকি কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেন হয়েছে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসেবে। সেই সঙ্গে নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহণ করেছেন সিইও। অন্তঃদ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন কোম্পানির পরিচালকরা।

জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধান এবং বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এ ধরনের অনিয়মে জড়ানোর কারণে কোম্পানিটি থেকে গ্রাহকদের বিমা দাবির টাকা পাওয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বদেশ লাইফের বর্তমান সিইও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে কোম্পানির গ্রাহকদের প্রিমিয়ামের অর্থ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একটি ব্যাংক হিসাবে এ ধরনের ৫৯টি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকের খিলগাঁওয়ের ননিবাগ শাখায় থাকা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে (হিসাব নং- ২০৫০৬৩৩০২০০০৭৩৮১৮) এই লেনদেন হয়।

২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক হিসাবটি খোলেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন। ব্যাংক হিসাব খোলার পর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৫৯টি লেনদেন সম্পন্ন হয়। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র তদন্তেও ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিনের ব্যক্তিগত এই ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা সিইও’র ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন হওয়াকে গুরুতর অপরাধ বলছেন বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে একাধিক বিমা কোম্পানির সিইও বলেন, কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা সিইও’র ব্যক্তিগত হিসাবে লেনদেন করার সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটিকে মানি লন্ডারিং বা অর্থপাচারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এভাবে স্বদেশ লাইফ থেকে অর্থপাচার হচ্ছে কি না, তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।

ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেনের পাশাপাশি স্বদেশ লাইফের সিইও অবৈধভাবে টার্গেট ইনসেন্টিভ নিয়েছেন। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই ইনসেন্টিভ নেন তিনি, যা সিইও’র নিয়োগের শর্তের পরিপন্থি।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বার্ষিক ব্যবসা সংগ্রহের টার্গেট দিয়ে অবৈধভাবে সিইওকে টার্গেট ইনসেন্টিভ দিয়েছে বলে আইডিআরএ’র তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন। তিনি তদন্ত দলকে জানান, পরিচালনা পর্ষদ তাকে তার টার্গেট পূর্ণ করার জন্য ২ শতাংশ ইনসেন্টিভ বোনাস দিয়েছে। তার বেতন-ভাতা কম হওয়ায় তাকে এ সুবিধা দিয়েছে বোর্ড। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনজন সিইও’র জন্য কোম্পানি সর্বমোট ব্যয় করেছে ২ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

‘অথচ তিনি তিন বছরে কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি ও সারাদেশে সংগঠন সৃষ্টি করেছেন। তার সম্মানি (২০২০ সালের ৯ জুন থেকে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত) ইনসেন্টিভসহ ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা। তিনি ইনসেন্টিভ বাবদ ২০২০ সালে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৭৩২ টাকা কোম্পানি থেকে গ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালের প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম ও নবায়ন প্রিমিয়ামের ওপর ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৩ টাকা গ্রহণের অপেক্ষায় আছেন’ আইডিআরএ’র তদন্ত দলকে এমন তথ্য দিয়েছেন ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে স্বদেশ লাইফে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, মন্দা ব্যবসা, মাত্রাতিরিক্ত কমিশন ব্যয়, সিইও’র ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা লেনদেন, সিইও নিয়োগের শর্ত অমান্য করে ইনসেন্টিভ বোনাস গ্রহণ করার মতো অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বিমা আইন ২০১০ এর ৫৮, ৫৯, ৮০ ধারা এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২ এর ১৮ ধারার নির্দেশনা লঙ্ঘিত হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আইডিআরএ থেকে কোম্পানির বক্তব্য চাওয়া হয়, কিন্তু এখনো কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।

error: Content is protected !!