হোম » সারাদেশ » ধরাছোঁয়ার বাইরে সেইফ হেল্থ কেয়ার প্রতারক চক্রের সদস্যদের

ধরাছোঁয়ার বাইরে সেইফ হেল্থ কেয়ার প্রতারক চক্রের সদস্যদের

আবুল হাশেম,রাজশাহী ব্যুরো : কার্ডধারিদের দেওয়া হবে স্বাস্থ্যসেবা ও মেটানো হবে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা। এমন একবুক আশা দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন একটি প্রতারক চক্র। কোটি টাকা আত্মসাৎকারি সেই আলোচিত “সেইফ হেল্থ কেয়ার” প্রতারক চক্রকে ধরছেনা পুলিশ। গত ১২ অক্টোবর সেবা দেওয়ার নামে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ও মহানগরী থেকে গরীব অসহায় মানুষের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় সেইফ হেল্থ কেয়ারের পরিচালক ডাঃ উম্মে সালমাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে।

মামলায় উল্লেখ করা হয় চলতি বছরের শুরুতে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ও মহানগরীতে সেইফ হেল্থ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালের  শাখা খুলে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিল জান্নাতুস সালমা ওরফে ডা: উম্মে সালমা নামের এক মহিলা প্রতারক। ঐ মামলায় ১৫ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে এজাহারে মোট ৩৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মামলার ১০ দিন পার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজপাড়া থানা পুলিশ। অথচ প্রতারক চক্রটি দেদারসে ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই প্রতারক উম্মে সালমার বিরুদ্ধে রয়েছে নওহাটা পৌর মেয়র গফুর হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা। মেয়র হত্যা মামলার সকল আসামী মুক্তি পেলেও আসামী হিসেবে নাম রয়ে গেছে তার। মাত্র ৪২ বছর বয়সে ৫ টি স্বামী হয়েছে।  প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি স্বামীর থেকে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তবে বর্তমান স্বামী একজন কারারক্ষী (জেল পুলিশ) হলেও পরিচয় দেন ডেপুটি জেলার হিসেবে। এভাবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে রাজশাহীর চারঘাট থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নামে  হাতিয়েছেন প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। এমন ভিডিও মিডিয়ার কাছে সংরক্ষিত। এই সালমার  ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে হাজার হাজার অসহায় মানুষ।

এদিকে সালমার সহযোগী হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মোহনপুর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা রহমান রিক্তার বিরুদ্ধে। রাজশাহীতে যখন এই চক্রটির কার্যক্রম রমরমা, তখন সালমার সাথে হাত মিলিয়ে মোহনপুর উপজেলার ডিলার নিয়ে অসহায় মানুষের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন রিক্তা এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ভুক্তভোগীদের দাবী শিশু ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতি মাসে সল্প মূল্যে নিত্য পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী রিক্তা। তার নির্দেশে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শুরু হয় সদস্য সংগ্রহ।

মাত্র এক থেকে দেড় মাসের ব্যবধানে সদস্য সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৫-৭ হাজার। আর প্রতি সদস্যদের থেকে নেওয়া হয়েছে ২২০ টাকা। তাতে টাকার পরিমান আসে ১১-১৫ লক্ষ টাকা। অফিসের ম্যানেজার, সুপারভাইজার ফিল্ড অফিসার নিয়োগ দেওয়ার নামে নেওয়া হয়েছে লক্ষধিক টাকা। তার এমন কার্যকলাপের সাক্ষি দিয়েছেন তার ভাতিজা ও বাকশিমইল ইউনিয়নের মেম্বার শাহাবুল ইসলাম। যার কল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।  রিক্তার পাতানো ফাঁদে পাঁ রেখে ফেঁসেছেন মৌগাছী ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার নুরফুল বেগম। রিক্তার কথায় তিনিও দিয়েছেন কয়েকশত সদস্যের টাকা। আবার মৌগাছী ইউ পি চেয়ারম্যান বলছেন,  আমার কাছেও রিক্তা কয়েকশত কার্ড দিয়েছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছিলাম  না।

রিক্তাসহ কোম্পানীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্যক্রমের মিল না থাকায় কর্মী ও সদস্যরা টাকা ফেরত নিতে অফিসে চাপ দিতে শুরু করে। অবশেষে ১১ অক্টোবর ভুক্তভুগীরা সেইফ হেল্থ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার রাজশাহী অফিসে ভিড় করতে থাকে। পরিবেশ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক উম্মে সালমা পালিয়ে যান। শেষে সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীরা হট্টগোল শুরু করলে পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। পুলিশ ঘটনার বিবরণ শুনে অফিসে থাকা সালমার পিএস শ্যামল নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে। পরে জরিনা নামের এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

প্রতারণার বিষয়ে এই যুব মহিলা নেত্রীর সাথে কথা বললে তিনি ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। তার দাবী, তিনি না বুঝে জড়িত হয়েছিলেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে সকলকে এই কোম্পানিতে কাজ করতে নিষেধ করেছেন। পরে তিনি বলেন, এই সামান্য টাকা প্রয়োজনে সকলের টাকা ফেরত দিয়ে দিব। সামনে আমার নির্বাচন, আপনারা আমাকে বিতর্কিত করবেন না। আর কারা কারা এই বিষয়ে অভিযোগ করছে আমাকে বলেন, আমি তাদের বিষয় বুঝে নিব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবুল হাসান বলেন, সেইফ হেলথ কেয়ার  নামক প্রতিষ্ঠান যে, টাকা আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলা হয়েছে সেখানে শ্যামল নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে আটকের জন্য পুলিশের  চেষ্টা অব্যাহত আছে।  ডা: উম্মে সালমার বিরুদ্ধে চাকুরী ও ডিলার নিয়োগ প্রতারনার অনেক অভিযোগ আসছে। সিনিয়র স্যাররা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। যারা সেইফ হেলথ কেয়ার নামে প্রতারনা করেছে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error: Content is protected !!