হোম » সারাদেশ » সপ্তাহের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের বাজারে গো- খাদ্যের দামে আগুন!

সপ্তাহের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের বাজারে গো- খাদ্যের দামে আগুন!

হুমায়ুন কবির সুমন, সিরাজগঞ্জ থেকে : সিরাজগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গো-খাদ্য ভুসির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫০ টাকা। প্রতি বস্তা ভুসি খামারীদের কিনতে হচ্ছে এখন ২১০০ টাকায়। ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুসির দাম গত সপ্তাহে খামারীদের কিনতে হতো ১৬৫০ টাকা করে। টানা তিন সপ্তাহ ধরে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও দুধের দাম রয়েছে আগের ৪৫ টাকা দরেই। ব্যবসায়ীরা বলছে,বাজারে গমের জোগান কম থাকায় আর বাহির থেকে ভুসি আনার কারনে গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে গো-খাদ্যের বাজার অস্থির থাকার কারনে বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক খামারীরা। তবে জেলা ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বলছেন, এব্যাপারে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলা দুগ্ধ খামার হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন এ সকল এলাকা থেকে প্রান কোম্পানী, মিল্কভিটা সহ দেশের বিভিন্ন কোম্পানী এখান থেকে দুধ সংগ্রহ করে থাকে। বর্তমানে জেলায় ১৫ হাজার ৩৮০টি সমবায় ভিত্তিক গো-খামারের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ গবাদিপশু থেকে প্রতিদিন ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কন্তু হঠাৎ করে গো-খাদ্যর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারীরা।

উল্লাপাড়া উপজেলায় লাহেরী মোহনপুর ইউনিয়নের চরধানগাচ্ছা গ্রামের খামারী সোহেল রানা বলেন, গত দুই সপ্তাহ আগে ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুসির দাম ছিলো ১৪৫০টাকা এরপরের সপ্তাহে দাম বেড়ে হয় ১৬৫০ আর এখন কিনতে হচ্ছে ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকা করে। এটা কেমন কথা। সরকার কি এগুলো দেখে না। রাতারাত্রী কিভাবে এত দাম বৃদ্ধি হয়। একই এলাকার খামারী এমান আলী জানান, আমার ৪টি গরু রয়েছে। আমরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রান কোম্পানিতে আমাদের গরুর দুধ বিক্রয় করে থাকি। ১২০০ টাকা ভুসির বস্তা থাকা কালীন সমনে দৃধের দাম ছিলো ৪৩ টাকা তারপর ১৪০০ টাকা বস্তার হবার ৪৫ টাকা কেজি করে দুধের দাম পাই। অথচ এখন এক বস্তাই কিনতে হচ্ছে ২১০০ টাকায়। কিন্তু দুধের দাম রয়েছে আগের মতই। এভাবে চললে খামার বিক্রী করে দিতে হবে।

শাহজাদপুর উপজেলার রেশম বাড়ী এলাকার খামারী নূরনবী জানান, আমার ৮টি গরু রয়েছে। এক বস্তা ভুসি
চলে ৪ দিন করে। কিন্তু ভুসির দাম বাড়ার জন্য এখন এই ভুসি চালাচ্ছি ৭ থেকে ৮ দিন করে। এছাড়াও বেড়েছে খৈল, ক্ষ্যার এর দামও বেশি। তাই গরুর খাবার খাওয়ানোও কমিয়ে দিয়েছি। আগে দুধ পোতাম গরু থেকে ১০ থেকে ১২ লিটার এখন পাচ্ছি ৬ থেকে ৭ লিটার। খাবার কম দেয়ায় গরুর পুষ্টি কম হচ্ছে, দেখা দিচ্ছে নানাবিধ রোগ।

এদিকে গো-খাদ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে ভুসি আছে কিন্তু কিনতে গেলে দাম বেশি লাগছে। যে কারনেই বিক্রয় করতে হচ্ছে বেশি দামে। সিরজেগঞ্জ মেসার্স মামুন মেডিকেল ষ্টোরের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক শ্রেণীর ব্যাবসায়ীরা হঠাত করে গো-খাদ্য মজুদ করছে। তবে শুধু মজুদদারই নয় সাধারন ক্রেতারাও মজুদ করে চলছে। যে কারনেই বাজার অস্থির রয়েছে। তিনি আরো জানান, সমাজের এক শ্রেণীর ধনী ব্যাক্তিরা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের পন্য মজুদ করে বাজারে কৃত্তিম সংকট করে বেশি মুনাফা নিয়ে চলে যাচ্ছে। সরকারের এখনই এব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান রনি জানান, আগের সপ্তাহ থেকে জেলার গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে অবগত হয়েছি। এরই মধ্যে কামারখন্দ উপজেলায় ও ভদ্রঘাটে দুইটি দেকানে অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তিনি আরো জানান, আমাদের লোকবল কম থাকায় সকল উপজেলায় অভিযান করতে পারছিনা তবে অভিযান চলমান রয়েছে।

error: Content is protected !!