হোম » সারাদেশ » ভৈরবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ছয়জনের মধ্যে  চারজনই হরিজন পল্লির বাসিন্দা

ভৈরবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ছয়জনের মধ্যে  চারজনই হরিজন পল্লির বাসিন্দা

এম আর ওয়াসিম ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ  কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সড়ক বাতির খুঁটি সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনায় দু’দিনেও থামেনি স্বজনদের শোকের মাতম। তাছাড়া হতাহতের ছয়জনের মধ্যে চারজনই হরিজন পল্লির বাসিন্দা। এর আগে কখনই হরিজন পল্লিতে এমন ঘটনা ঘটেনি। ফলে ঘটনাটিকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তারা।
আজ রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখ মলিন, কারো মুখে হাসি নেই। সবাই যেন শোকাহত। ঘরের ভেতর থেকে থেমে থেমে ভেসে আসছে স্বজন হারানোর পরিবারের সদস্যদের আহাজারির শব্দ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরিজন পল্লিটির অবস্থান পৌর শহরের পাওয়ার হাউজ এলাকায়। এই পল্লিতে মাত্র ৩২টি পরিবারে ১৯৭জন লোক বাস করেন।
এই সম্প্রদায়ের সচেতন ব্যক্তি আজাদ লাল । তিনি এই পল্লির বাসিন্দা। সম্প্রদায়টির মধ্যে তাঁকে সবাই সমাজ সচেতন ব্যক্তি হিসেবে জানেন। আজাল লাল বলেন, পল্লিটির বসতি বৃটিশ আমল থেকে। হরিজনরা এমনিতেই ভালো নেই। তাদের জীবনমান অনেক পিছিয়ে রয়েছে। হাতেগুনা মাত্র ৩২টি পরিবার বসবাসের কারণে নানা সময় নানা আঘাত এসেছে আমাদের ওপর। তবে, গত শুক্রবার দুপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, এত বড় আঘাত আর কখনও আসেনি। এই আঘাত আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।
এদিকে নিহত মিলন লাল ভৈরব পৌরসভার মাস্টাররোলে সুইপারের চাকুরী করতো। স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মিলনের সংসার ছিল। সেদিনের ঘটনায় সংসারের একমাত্র উপার্যনকারী মিলন লাল নিহত হয়েছে। স্বামীর এমন মৃত্যুতে তার স্ত্রী মিলা রাণী বলেন, স্বামী হারা হবার পর আমার সংসারে আয় রোজগারের আর কেউ রইল না। তিন সন্তান নিয়ে আমি কী করুম, আর কই যামু, কী খামু- এই চিন্তায় এখন আর মাথা ধরে না। এ বলেই তিনি বিলাপ শুরু করেন।
হরিজন পল্লির বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের হরিজন পল্লির সামনে কয়েকটি সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি রয়েছে। আর তাদের পল্লির সঙ্গে পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার আব্দুল্লাহ মিয়া নামে এক ব্যক্তির একটি গরুর খামার রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই আব্দুল্লাহ মিয়া তার খামারে সামনে বসানোর জন্য সড়ক বাতির খুুঁটি তুলে নেয়ার উদ্যোগ নেন। তাই, গত শুক্রবার দুপুরে হরিজন পল্লির হতাহতদের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুঁটি সরিয়ে নেবার সময় হেলে গিয়ে উপরে বিদ্যুৎতের ১১ হাজার ভোল্টের তারের সঙ্গে স্পর্শ পেয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
স্বজনদের অভিযোগ, আব্দল্লাহ মিয়া নিজের স্বার্থে হরিজন পল্লি থেকে ছেলেদের ডেকে নিয়ে কাজে লাগান। তাদের দাবী, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যদি বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন দিয়ে কাজটি করালে হয়ত দুর্ঘটনাটি ঘটত না।
সেদিনের ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, হরিজন পল্লির গণেশ লালের ছেলে মিলন লাল (৩৫), জনি লাল ছেলে সুদর্শ কুমার দেব (১৪) ও সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর উপজেলা সদরের তাজুল ইসলামের ছেলে মো.মোবারক (২২)। এছাড়াও আহত ব্যক্তিরা হলেন, রিকু রায়ের ছেলে সানি রায় (১৪), চন্দন রায়ের ছেলে সকাল রায় (১৩) ও ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার মৃত মোক্তার মিয়ার ছেলে আব্দুল্লাহ মিয়া।
এছাড়াও ঘটনার দিন (শুক্রবার) ও ময়না তদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে লাশ নিয়ে এলে ছুটে যান পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ। শোকাহত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। এ বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে অবগত করবেন। কিন্তু তিনি দেশের বাহিরে রয়েছেন। দেশে ফিরলেই তাকে জানানো হবে। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা এবং পূর্নবাসনের জন্য উদ্যোগ নেবেন।
এছাড়াও আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া যে ব্যক্তি খুটি সরানোর উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন, এটি অন্যায়। আর অন্যায়কে আওয়ামী লীগ কখনও সমর্থন করে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মস্তুফা বলেন, এই ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
error: Content is protected !!