হোম » সারাদেশ » সিলেটে সরকারি প্রতিষ্টানের হয়রানি, ১৫০ অভিযোগ

সিলেটে সরকারি প্রতিষ্টানের হয়রানি, ১৫০ অভিযোগ

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের অধিকাংশ সরকারী অফিসে হয়রানি এখন নিত্য-নৈমিক্ত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ, সরকারী ভাবে সেবা দেওয়ার সবচেয়ে বড় ভরসা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, এমনকি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নামও বাদ নেই হয়রানির তালিকা থেকে। বিশেষ করে বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস, সিলেট বিআরটিএ অফিস ও ওসমানী মেডিকেলের ভোগান্তির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। এমন অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আয়োজনে গণশুনানিতেও উঠে এসেছে বিস্তর অভিযোগ।

সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে গত ১৫ নভেম্বর থেকে দুদক শুরু করে গণশুনানির জন্য অভিযোগগ্রহণ। চলে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত। যার শুনানি হয় ২৮ নভেম্বর রোববার। গণশুনানিতে উত্তাপনের লক্ষ্যে মোট ১৫০ জন নাগরিক সিলেটের বিভিন্ন সরকারি অফিসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানান। এর অধিকাংশ অভিযোগই ছিলো পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ ও ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মাঝে বাছাই করে ৫৩ টি অভিযোগ উত্তাপন করা হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা, সচেতন মহলের উপস্থিতিতে অভিযোগগুলো শুনানি হয়। এসময় সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারাও অভিযোগের ব্যাপারে তাদের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

এসব অভিযোগের শুনানি শেষে আগামী ৭ দিন অথবা সর্বোচ্চ ১০ দিনের ভেতর উত্তাপিত অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন দুর্নীতি দমন কমিশনার (তদন্ত) মো. জহিরুল হক। শুনানিকালে সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ে দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি উল্লেখ করে মাইদুল ইসলাম চৌধুরী নামের একজনের লিখিত অভিযোগ সকলের সম্মুখে উত্তাপন করা হয়। অভিযোগে মাইদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ‘দালাল ছাড়া তিনি একটি মোটরসাইকেলের কাগজের নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে গত ১৮ মাস থেকে হয়রানির শিকার হলেও এখনো সমাধান হয়নি।’

অপরদিকে পাসপোর্ট অফিসে হয়রানির ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগের মাঝে একটি অভিযোগ কুয়েত প্রবাসী বিয়ানীবাজার সারপাড়ের বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদ মুন্নার। তাঁর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘তিনি দেশে ছুটিতে এসে পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিয়ে নতুন করে নির্ধারিত ফি দিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করলে জাতীয় পরিচয়পত্রে সমস্যা দেখিয়ে পাসপোর্ট আটকিয়ে রাখা হয়। অথচ তিনি যাচাই করে দেখেছেন তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে কোন সমস্যা নেই। যার কারণে বর্তমানে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পথে থাকলেও পাসপোর্টের কারণে তিনি যেতে পারছেন না।’

এছাড়াও বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ‘৩০০ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করা’, সেটেলমেন্ট অফিসে ‘বখশিশ’ না দিলে হয়রানি, সিটি কর্পোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরিতে হয়রানি, নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে নানা রকম হয়রানিসহ বিভিন্ন বিষয় উত্তাপন হয় গণশুনানিতে। সেই সাথে সিলেট বিভাগের প্রায় কোটি মানুষের সরকারী ভাবে উন্নত চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদে পদে হয়রানির বিষয়টিও উত্তাপন করেন কয়েকজন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক কমিশনার মো. জহিরুল হক বলেন, সরকারি অফিসে সেবার মান বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে গণশুনানি আগামীতেও হবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে যেরকম মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে আগামীতেও যেন একই ভাবে কথা বলেন। জনগণের সচেতনতার মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব।

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দুদক (প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) মহাপরিচালক কে এম সোহেল, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ।

error: Content is protected !!