হোম » সারাদেশ » গাইবান্ধায় ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, র‍্যাবের হাতে মূল হোতা আরিফ গ্রেফতার

গাইবান্ধায় ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, র‍্যাবের হাতে মূল হোতা আরিফ গ্রেফতার

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুরঃ গাইবান্ধা সদর উপজেলার ল²ীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ মিয়ার হত্যাকান্ডের ঘটনার নেপথ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস। এ ঘটনায় গ্রেফতার আসামি আরিফ মিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, হত্যাকারীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ইউপি সদস্যের সাথে পারিবারিক ইস্যুতে এ ঘটনা ঘটেছে। আসামি আরিফ মিয়ার দুজন স্ত্রী ছিল। যারা এখন তার সঙ্গে নেই।

এই দুজন স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। এর পেছনে ইউপি সদস্য আব্দুর রউফের হস্তক্ষেপ ছিল। আসামি আরিফ মিয়ার দাবি অনুযায়ী এই বিরোধের ফলশ্রুতে হত্যার এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে এর পেছনে আর অন্য কোনো মোটিভ রয়েছে কিনা, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যেতে পারে। রোববার দুপুরে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের রংপুর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস। নিহত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি একাধিবার নির্বাচিত হয়েছেন।

এলাকাবাসীর দাবি তাকে কোনো পক্ষের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক বলেন, সংঘটিত অপরাধের সাথে যারা জড়িত বা অপরাধী তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনাটাই আমাদের মূখ্য বিষয়। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে ঘটনার নেপথ্যে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, তা গভীরতর তদন্তের বিষয়। ঘটনার আগের দিন আরিফ মিয়া স্থানীয় একটি ক্লাবে আব্দুর রউফসহ আর দুইজনের ক্ষতি করবেন বলে আভাস দিয়েছিলেন।

আরিফ মিয়া সরকারি চাকরি করেন এবং তিনি একসময় সরকারি দলের একটি সংগঠনেও ছিলেন। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের শিকার ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। একারণে এই হত্যার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা ইন্ধন র‍্যাব পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অধিনায়ক রেজা আহমেদ বলেন, অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। আমাদের কাছে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় মূখ্য নয়। তবে সবকিছুই তদন্ত ও সময় সাপেক্ষে বলা যাবে। আসামি আরিফ মিয়া হত্যাকান্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে হত্যার ঘটনা বর্ণনা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতে ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে হাটলক্ষীপুর বাজার হতে বাড়ি ফিরছিলেন।

পথিমধ্যে রাস্তার মাঝে নির্মাণাধীন ব্রিজে উঠার সময় আব্দুর রউফ মোটরসাইকেল থেকে নেমে হেটে হেটে ব্রিজ পার হতে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা আরিফ ও তার সঙ্গীরা তার পথ রোধ করে। এসময় তারা আব্দুর রউফকে লক্ষ্য করে হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। প্রথম আঘাতের পর সে মাটিতে পরে গেলে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। আব্দুর রউফের চিৎকার শুনে ব্রিজ পার হয়ে যাওয়া বন্ধু মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আরিফ মিয়াকে (৩৩) গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। এদিকে গাইবান্ধায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত আরিফ মিয়া খাদ্য বিভাগের নৈশ প্রহরী পদে রয়েছেন। উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে সম্প্রপ্রতি তাকে গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে তাকে যোগদান করতে দেয়নি অন্য কর্মচারীরা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

error: Content is protected !!