হোম » সারাদেশ » বদলগাছীতে মাল্টা পেয়ারা বড়ই বাগান করে আশার আলো দেখছে ইঞ্জিনিয়ার তুষার

বদলগাছীতে মাল্টা পেয়ারা বড়ই বাগান করে আশার আলো দেখছে ইঞ্জিনিয়ার তুষার

আব্দুল কাদের, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসুতি। শুধু চাকুরী নয় কৃষি কাজ করেও জীবনের পথ পরিবর্তন করা যায়। তা প্রমাণ করে দিলেন একজন সুশিক্ষিত যুবক ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হাসান তুষার। করোনার বৈশ্বিক পরিবেশে চাকুরী ছেড়ে বাড়ী ফিরে আসেন। তুষার নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বালুভরা ইউপির প্রধানকুন্ডি গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আল এমরানের ছেলে। তুষারের বড় ভাই সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া তমাল। ছোট ভাই মাহমুদুল হোসেন তুরান ছাত্র। ৩ ভাই পরামর্শক্রমে ৪৫ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন মিশ্র ফলজ বাগান। নাম দেওয়া হয় রাইয়্যান এগ্রো ফার্ম।

বাগান শুরু এখনও দু’বছর হয়নি। প্রথম বছরেই বড়ই বিক্রি করে আশার আলো দেখতে পান ইঞ্জিনিয়ার তুষার। ১২ বিঘা জমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা বড়ই বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে আড়াইশ ক্যারেজ মাল্টা বিক্রি করেন। প্রায় ৩শ মন পেয়ারা বিক্রি করেন। মাল্টা বেচা কেনা প্রায় শেষের দিকে রয়েছে শুধু পেয়ারা। প্রধানকুন্ডি গ্রাম নিভৃত পল্লী এলাকা হলেও সেখানে ৪ জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে ফল ব্যবসায়ী বিক্রেতা মোবাইল ফোনে ম্যাসেনজার ও হোয়াটস অ্যাপে কল দিয়ে মাল্টা পিয়ারার দরদাম করেন এবং অর্ডার দেন।

এ প্রতিবেদক বাগানে উপস্থিত থাকাকালে পত্নীতলা থেকে একজন ফল ব্যবসায়ী ফোনে মাল্টার অর্ডার দেন। তথ্য সংগ্রহকালে দেখা যায় খন্ড খন্ড অংশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজ বেষ্টনীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক পরিবেশ। যা গ্রামের মেহনতী মানুষকে অনুপ্রেরনা দিচ্ছে। উৎসাহ পেয়ে আশে-পাশের কয়েকজন বড়ই বাগান তৈরী করছে। বাগানে দেখা যায় কিছু জমিতে মাল্টা পেয়ারার গাছ বড় হয়ে গেছে।

আবার কিছু জমিতে গাছ ছোট রয়েছে। এক দেড় ফিট লম্বা পেয়ারা গাছ হাফ কেজি থেকে ৬শ, ৭শ গ্রাম ওজনের মিষ্টি পেয়ারা ধরে আছে। ইঞ্জিনিয়ার তুষার জানায় শুধু চাকুরী নয় এ দেশের মাটি ও কৃষি কাজে সাধারণ মানুষের যে ভবিষ্যৎ ও স্বপ্ন লুকানো রয়েছে তা ফুটিয়ে তুলতে ৩ ভাইয়ের এই সিদ্ধান্ত। মেইন টার্গেট হলো মাল্টা চাষ। সাথী ফস হিসাবে রাখা হয় পেয়ারা। ৫ বছর পর পেয়ারা গাছ কাটা পড়বে। তুষারের ভাষ্যমতে বাগানে রয়েছে ৫ হাজার মাল্টা গাছ। বড়ই রয়েছে ১২শ গাছ। এছাড়া আগাম টক জাতের বড়ই ১০০টি গাছ।

থাই পেয়ারা জাত ৭ ও ৫ রয়েছে ৫ হাজার, পেয়ারা জাত গোল্ডেন-৮ রয়েছে ২০ হাজার। দার্জিলিং এর কমলা ১০০ টি, ম্যান্ডারিন জাতের কমলা ১০টি, থাই কমলা ৫০টি, ৫ হাজার মাল্টা গাছের মধ্যে রয়েছে মিশরীয় মাল্টা ১৫টি, ইটালিয়ান মাল্টা ১০টি। এছাড়া অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে কপি গাছ ২০০টি, পিচ ফল ৫০টি, লংঘন গাছ ১৫টি, লিচু গাছ ১০টি, লেবু গাছ ৩ হাজার, বেল গাছ ১০০টি, থাই কাটিমন আম ১০০টি, আম গৌরমতি ৫০টি, ব্রমাই কিং আম ৫টি, ব্যানানা ম্যাংগো ৫টি, বারি ১১ আম ১০ টি, আভাকাডো ১৫টি।

তুষার আরও জানায় ফলজ বাগান করে আমি ভবিষ্যৎ আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চাকুরীর পিছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হও। তবে কেউ যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে পারে অবশ্যই সফল হবে এবং বেকারত্ব দূর হবে। শ্রমিকের সাথে নিজেকেও শ্রমিক হতে হবে। আমার বাগানের মাল্টা পিয়ারা বড়ই এলাকায় ব্যাপক চাহিদা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোনে ম্যাসেনজার ও হোয়াটস অ্যাপে ফলের অর্ডার করেন।

সে মোতাবেক ডেলিভারী দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানায় আমরা সব সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। মাল্টা কমলা ও লেবু জাতীয় ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। বিদেশী ফল পরিহার করে দেশীয় ফলে নির্ভরশীল হতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন জানায় আমি বাগানটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে নানা প্রজাতির ফল রয়েছে। খেতেও খুব মিষ্টি। বাগান মালিকের উৎসাহ উদ্দীপণা এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করবে।

error: Content is protected !!