হোম » সারাদেশ » সোনাইমুড়ীতে নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

সোনাইমুড়ীতে নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা সয়লাব নিষিদ্ধ পলিথিনে। চলমান বর্ষা মৌসুমে পলিথিনের বর্জ্য খালের পানি প্রবাহে সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা। আর পরিবেশ বিধ্বংসী নিষিদ্ধ এই ব্যাগ যত্রতত্র পাইকারী ভাবে বিক্রি হচ্ছে সোনাইমুড়ী বাজারের বিভিন্ন দোকানে। সহজলভ্য হওয়ায় মুদি-মনোহারি, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, মাছ-মাংস, সবজি-ফলের দোকান সর্বত্র ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া পলিথিন বর্জ্য  উপজেলার ড্রেন-খাল-ফসলি জমিতে পড়ছে। 
সরকারি ভাবে ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত এসকল অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী উপজেলায় কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। যে কারনে ভয়াবহ ভাবে উপজেলায় বেড়েছে পলিথিনে ব্যাগের ব্যবহার। বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ীরা। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা, কমছে ফসলি জমির উর্বরতা। সেই সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাইমুড়ী পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন কাঁচা বাজার গলির দেলোয়ার। মতিন মিয়া মার্কেটের আবুল কাশেম। মাছ বাজারের পান-সুপারি বিক্রেতা পারভেজ এবং ফাহিম। সোনাইমুড়ী বাজারের রেলক্রসিং এর পশ্চিম পাশে  সুমন নামের এক যুবক পলিথিন বিক্রি করেন।
সোনাইমুড়ী মাছ বাজার গলির পলিথিন বিক্রেতা ফাহিম জানান, এই বাজারের সবচেয়ে বড় পলিথিন পাইকার তিনি। বাজারের ভেতরে তাদের পলিথিনের গোডাউন রয়েছে। বিভিন্ন সাইজের বিভিন্ন কোয়ালিটির পলিথিন ব্যাগ রয়েছে তার কাছে। তারচেয়ে কম রেটে কেউ পলিথিন দিতে পারবে না। বাবা, বড় ভাই এবং তিনি বংশগত ভাবে ধারাবাহিক ভাবে এই ব্যবসায় যুক্ত আছেন। চৌমুহনী মোরশেদ আলম কমপ্লেক্সর দক্ষিণ পাশের  ফলপট্টি মার্কেটের বাবুলের দোকান থেকে পাইকারি মাল কিনেন। সোনাইমুড়ী বাজার, বাংলা বাজার, জয়াগ বাজার, নদনা বাজার, আমিশাপাড়া বাজার এবং বজরা ইসলামগঞ্জ বাজারে পলিথিন সরবরাহ করেন তিনি। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ টাকার পলিথিন বিক্রি করেন বলেও জানান তিনি।
সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকার ভ্রাম্যমান আম ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, এক কেজি পলিথিন ব্যাগে প্রায় তিন-চার দিন আম বিক্রি করতে পারেন। চার-পাঁচ কেজি আম ধরে এমন পলিথিন এক কেজি ১৮০ টাকা দাম নেয়। সোনাইমুড়ী মাছ বাজার এলাকা থেকে পলিথিন ব্যাগ কিনে থাকেন। তিন থেকে চারদিন এই পলিথিন ব্যাগ দিয়ে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি আম বিক্রি করতে পারবেন। খরচ কম তাই পলিথিন ব্যাগে করে আম বিক্রি করেন তিনি। পলিথিন ব্যবহারের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে কিছুই জানেননা তিনি।
তথ্য বলছে পলিথিন এমন একটি উপাদানে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। এর মধ্য থেকে বিষফেনোল নামক বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে পড়ে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন খালের তলদেশে জমা হয়ে খাল ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে বাষুদূষণ ঘটে। পলিথিন উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে এটির বাজারজাতকারী ও ব্যবহারকারীরা পর্যন্ত জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পলিথিন ব্যাগকে চর্মরোগের এজেন্ট বলা হয়। এটি ব্যবহারে চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
পলিথিনে মাছ, মাংস মুড়িয়ে রাখলে কিছুক্ষণ পর এতে রেডিয়েশন তৈরি হয়ে খাবার বিষাক্ত হয়ে ওঠে। পলিথিনে রং করার জন্য ক্যাডমিয়াম মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোয় ক্যাডমিয়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফ্রিজে বা স্বাভাবিকভাবে সংরক্ষণের জন্য ঝুঁকিমুক্ত মোটা কাগজ ব্যবহার হয়। তাছাড়া আমাদের দেশে বর্তমানে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যত্বের যে প্রকট সমস্যা, তার মূলেও রয়েছে পলিথিনের ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভাব।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ সংশোধন করে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিন উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। প্লাস্টিক ব্যাগ একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে প্রায় ৪০০ বছর সময় লাগে। আর মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা গুণ নষ্ট করে। খাল-বিল, নদী-নালার মাধ্যমে সমুদ্রে পতিত হয়ে পানিদুষণের সৃষ্টি করে। সেই দূষিত পানি যেমন সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি মানবশরীরের জন্যও হুমকিস্বরূপ।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানান, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসকল অবৈধ পলিথিন বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নোয়াখালী জেলার উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার জানান, তারা ধারাবাহিক ভাবে পলিথিন কারখানা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। সোনাইমুড়ী উপজেলার পলিথিন ব্যবসায়ীদের তথ্য দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
-গোলজার হানিফ-

Loading

error: Content is protected !!