হোম » সারাদেশ » ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ জনেরই বাড়ি আলফাডাঙ্গা, শোকে স্তব্ধ এলাকা

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ জনেরই বাড়ি আলফাডাঙ্গা, শোকে স্তব্ধ এলাকা

মিয়া রাকিবুল, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের কানাইপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিহত ৮ জনেরই বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বলে জানা গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের মাঝেও আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো তিনজন এই উপজেলারই বাসিন্দা। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদে শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা। একসঙ্গে এত মৃত্যুর শোক সইতে পারছেন না নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশীরাও।
নিহত আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৮ জন হলেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদি এলাকার সিরাজুল শেখের ছেলে পিকআপ চালক নজরুল শেখ (৩৫), পৌর এলাকার হিদাডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ নেওয়াজ আলীর মেয়ে কোহিনুর বেগম (৬০), একই এলাকার আলেক সর্দারের স্ত্রী শুকুরন নেছা (৯০) ও তার মেয়ে সূর্য বেগম (৪৫), আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বেজিডাঙ্গা গ্রামের নান্নু মোল্যার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৪০), একই এলাকার মিল্টন শেখের স্ত্রী সোনিয়া বেগম  (৩০) ও তার মেয়ে নূরানী খানম (২) এবং একই ইউনিয়নের চর বাঁকাইল গ্রামের মৃত. রশিদ খানের ছেলে তবিবুর রহমান (৫৫)।
আর আহত তিনজনের মধ্যে রয়েছেন, আলফাডাঙ্গা পৌর এলাকার হিদাডাঙ্গা গ্রামের রবিউল আলমের স্ত্রী আকলিমা বেগম ও একই এলাকার ইকবাল শেখের স্ত্রী পপি বেগম ও তার ছেলে ইরফান শেখ (২)।
অপরদিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তে ঘেষা বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রাম। তাদের ডাকঘর এই আলফাডাঙ্গাই। এই সড়ক দুর্ঘটনায় গ্রামটির চার সদস্যের একটি পরিবারের সবাই নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যরা হলেন, রাকিবুল হাসান মোল্যা ওরফে মিলন (৩৫), তাঁর স্ত্রী শামীমা আক্তার ওরফে সুমি (২৫) এবং তাঁদের দুই ছেলে আলবি রোহান (৬) ও আবু সিনান (৩)।
এরআগে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কানাইপুরে অ্যাবলুম ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে মাগুরাগামী ইউনিক পরিবহন ও আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর শহরের দিকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘনাস্থলেই ১১ জন মারা যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন মারা যান। নিহতরা সবাই পিকআপ ভ্যানের যাত্রী ও চালক। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ নিতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সরেজমিনে নিহতদের গ্রামের বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, নিহতদের পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছে। স্বজনদের হৃদয় বিদারক কান্না ও আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে। দেখে মনে হয়েছে পুরো এলাকা যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে। অতীতে একসঙ্গে এত মৃত্যু এলাকাবাসী কখনোই দেখেনি। তাই মৃত্যুর এ মিছিল মেনে নিতে পারছেন না কেউই।
নিহত গাড়ি চালক নজরুল শেখের ভাই সবুজ শেখ বলেন, ‘আমার ভাই পিক-আপ গাড়ি চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। তার ছোট ছোট দুই মেয়ে রয়েছে। প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার ভোরে পিক-আপ ভর্তি লোকজন নিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় সে।’
আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বেজিডাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য হারুন-অর রশিদ জানান, ‘আমার ওয়ার্ডের মা-মেয়েসহ তিনজন মারা গেছে। যতদূর জানতে পেরেছি তারা ফরিদপুর ত্রানের ঢেউটিন আনতে গিয়েছিলো।’
এদিকে হতাহতের খবর পেয়েই নিহতদের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ-খবর নিতে ছুটে যান আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াছমীন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াছমীন জানান, ‘মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়েই নিহতের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যাই। নিহতদের দাফনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ও আহতদের ১০ হাজার টাকা করে তাৎক্ষণিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।’
error: Content is protected !!