হোম » সারাদেশ » সংবাদ প্রকাশের পর সরিষাবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের দূর্ণীতির তদন্ত শুরু

সংবাদ প্রকাশের পর সরিষাবাড়ীতে ইউপি চেয়ারম্যানের দূর্ণীতির তদন্ত শুরু

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার ডোয়াইল ইউপি’র চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক স্বপনের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দূর্ণীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পরিষদের ২ জন নারী মেম্বার সহ ৯ জন ইউপি সদস্য অনাস্থা দেয়ার ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত ডোয়াইল ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযোগকারীদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। ৪০ দিন কর্মসূচি ও ইজিপিপির তালিকা ভুক্ত প্রায় ২ শতাধিক শ্রমিক সেখানে উপস্থিত হয়ে তারাও লিখিত অভিযোগ ও স্বাক্ষী দেন তদন্ত কর্মকর্তার নিকট।

অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ৩ নং ডোয়াইল ইউপি’র চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই মাসিক সভা না করেই সভার ভুয়া রেজুলেশন প্রদর্শন এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে সরকারের উন্নয়নের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অব কাঠামো সংস্কার (কাবিখা), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা), এলজি এসপি ও হতদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (কর্মসৃজন) প্রকল্প, টিআর প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ তিনি আত্মসাৎ করে আসছেন।

প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সামগ্রী নিজের লোকজনের নামে-বেনামে আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বিধি বহির্ভূতভাবে একই বছর একই স্থানে একাধিক প্রকল্প দেখিয়ে এলজি এসপি ও হতদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি কাজ না করেই সীম মোবাইল ফোন নিজের কাছে রেখে বরাদ্দের অর্থ তুলে নিচ্ছেন।

এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ইউনিয়নের নাগরিক, ওয়ারিশ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদের অর্থ, প্রতি বছর ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ আদায় করা অর্থ বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অসচ্ছল মানুষের জন্য সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন ভিভিএফ, ভিজিডি, টিসিবি কার্ড, মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইজিপিপি প্রকল্পের আওতায় ছোট ছোট বক্স, কালভার্ট, প্যালাসাইডিং, রিং কালভার্ট, সরকারের রাজস্ব খাতের ১% অর্থের বরাদ্দের নামে নামী বেনামী প্রকল্প দেখিয়ে চেয়ারম্যান স্বপনই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

এ ছাড়াও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তিনি পরিষদ পরিচালনা করেন।

প্রতিবন্ধী নিরঞ্জনসহ ৪০ দিন কর্মসূচি ও ইজিপিপির প্রকল্পের তালিকা ভুক্ত শ্রমিকরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা কর্মসুচির তালিকাভুক্ত শ্রমিক। সীম ও মোবাইল আমাদের কাছে নাই। সীম ও মোবাইল চেয়ারম্যান এর কাছে থাকে। তিনি সমস্ত বিল তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

ডায়াইল ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য ডলি আক্তার , চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বিভিন্ন কায়দায় অনিয়ম-দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন।

ডোয়াইল ইউনিয়নে সরকারের উন্নয়নের বরাদ্ধের যে প্রকল্প গুলা আসে আমরা মেম্বাররা কিছুই জানি না। তিনি সকল কিছুই আত্মসাৎ করেছে৷ চেয়ারম্যান হওয়ার পর ৩ তলা বাড়ী তৈরি করেছে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর কিভাবে করল। আমরা তার বিচার চাই এবং বহিষ্কার চাই। ডোয়াইল ইউপি সদস্য শিমুল, মিলটন, আজাহার,আফজাল হোসেন জানান, চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে আমরা অনাস্থা ও অভিযোগ দিয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। আজ ৪০ দিন কর্মসুচির লেভাররাও এসে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে তদন্ত কমিটির কাছে।

আমরা এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান এর বহিষ্কার চাই।

এদিকে ডোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক স্বপন মুঠোফোনে বার বার কল দেওয়া হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ডা. পলাশ কান্তি দত্ত জানান, মেম্বারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের কাজ চলছে। তদন্ত শুরু করেছি। ৪০ দিন কর্মসুচির শ্রমিকরাও এসে অভিযোগ দিয়ে গেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগেই কিছু বলা যাবে না।

error: Content is protected !!