হোম » সারাদেশ » প্রতারক চক্রের চেয়ারম্যান’ দেশ ত্যাগের আগেই আটকে গেলেন নারীতে 

প্রতারক চক্রের চেয়ারম্যান’ দেশ ত্যাগের আগেই আটকে গেলেন নারীতে 

এম, এ রাশেদ: বছর ছয়েক আগে চাকরির সুবাদে পরিচয়। ধীরে ধীরে সাইফুল ও আকরামের মধ্য গড়ে ওঠে সখ্যতা এই সুযোগে আকরাম তার মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা শুরু করেন। সাইফুলের বিশ্বাস অর্জন করতে সফল হন তিনি। 
এরপরই খোলস খুলে বের হয় আকরামের ভয়ঙ্কর রুপ। তবে ততক্ষণে সাইফুল ফেঁসে যান আকরামের জালে। এখনো সেই জালে বন্দি সাইফুল। জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তাও বছর তিনেক ধরে। ৩৭ বছরের সাইফুল ইসলাম নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ফুলহারা গ্রামের বাসিন্দা। আর ৩২ বছর বয়সী আকরাম হোসেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়াড়ী গ্রামের বাসিন্দা।
তাদের মধ্য সাইফুল বগুড়া সদরের মালতিনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করেন। আকরাম দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকলেও বছরখানেক আগে জয়পুরহাট সদরের বৈরাগীর মোড় এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। সেখানে এক নারীকে নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি। সেই নারীই তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। জয়পুরহাট থানা পুলিশ আকরামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আকরাম জ্যাংক ইন্টারলিংক লিমিটেড নামে এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই চাকরি প্রত্যাশিদের সঙ্গে প্রতারণা করেন তিনি। চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আকরাম। রয়েছে এমন অভিযোগ। তার ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়ে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সাইফুল। অন্যদিকে দিন বিশেক আগে এক নারীর ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে রয়েছেন আকরাম। ওই নারীর সঙ্গে প্রতারণা করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আকরাম। কিন্তু ভুক্তভোগী সেই নারী তাকে সেই সুযোগ দেননি। জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ -এ ফোন দিয়ে বাসা থেকেই আকরামকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। একই সঙ্গে করেন মামলা।
যেভাবে ফেঁসে যান সাইফুল
২০১৮ সালে আকরাম ও সাইফুলের পরিচয় হয়। এরপর থেকে সাইফুলের বাড়িতে আকরামের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। এক পর্যায়ে আকরাম সাইফুলকে বলেন টাকার বিনিময়ে অনেককে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ২৮ জনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি কাম নৈশ প্রহরীসহ বিভিন্ন দফতরে সরকারি  চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নেন সাইফুল। এবং ২০২১ সালের ২০ মে থেকে শুরু করে কয়েক দফায় আকরামকে ৯৪ লাখ টাকা দেন সাইফুল। ওই সময় দুই মাসের মধ্য ২৮ জনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরেও তা হয়নি।
সর্বশেষ সাইফুল বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। কিন্তু এরমধ্যেই আকরাম আত্মগোপনে চলে যান। তবে বেশ কয়েকবার সাইফুল তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সময় আকরাম তাকে চাকরি প্রত্যাশিদের টাকা ফেরত দেবেন না বলে জানান। এমনকি এক পর্যায়ে সাইফুলকে হত্যার হুমকিও দেন আকরাম। এমন অভিযোগ সাইফুলের।
এদিকে,  চাকরি প্রত্যাশিরা টাকা ফিরে পেতে সাইফুলকে চাপ দিয়েই যাচ্ছেন। তাদের ভয়ে সাইফুলও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে আকরামকে খুঁজছিলেন তিনি। জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আকরামকে বিশ্বাস করে আজ আমি এক ধরণের ফেরারি জীবন-যাপন করছি। চাকরি প্রত্যাশিদের ভয়ে আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়। এ বিষয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানায় এজাহার জমা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আকরামের প্রতিষ্ঠানই হলো প্রতারকদের কোম্পানি। সারাদেশ তার অনেক প্রতারক কর্মী রয়েছেন। আকরাম নেপাল পালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। সব প্রস্ততিও তার শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে এক নারীর করা মামলায় গ্রেফতার হন আকরাম। বগুড়া সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুজ্জামান বলেন, সাইফুলের এজাহার পেয়েছি। বিষয়টি দেখছি।
error: Content is protected !!