হোম » Uncategorized » বাংলাদেশে ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল যন্ত্রাদি উৎপাদন হতে পারে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশে ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল যন্ত্রাদি উৎপাদন হতে পারে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত

ইঞ্জিনিয়র মাসুদুর রহমানঃ তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রপ্তাণীকৃত দ্রব্য এবং গত বছর এর পরিমান ছিল ৫২০৮২.৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পাশাপাশি আমরা আরো কিছু দ্রব্য সামগ্রী রপ্তানী করে থাকি, যেগুলো আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, যেমন হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত সামগ্রি, পাট, কৃষি দ্রব্য ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী রপ্তানি করার পাশাপাশি আমদানীতেও আমরা পিছিয়ে নেই, কিছু কিছু বছরে আমদানী হার রপ্তানির চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে পেট্রলিয়াম এবং তেল, কাঁচা সুতা, বিভিন্ন মেশিনারি ও যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, লোহা, ইস্পাত , অটোমোবাইল অন্যতম।

বাংলাদেশের আমদানীকৃত তথ্য অনুযায়ি ২০১৯ সালে বিশ্ব থেকে আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুল্যের পণ্য আমদানী করতে হয়েছে। ইকোনোমিক কমপ্লেসিটি ইন্ডেক্স (ইসিআই) এর প্রতিবেদন মোতাবেক বাংলাদেশ ১২৭ তম জটিল অর্থনীতি যা কিনা  মোট বৈশ্বিক আমদানিতে ৫০ নম্বরে রয়েছে।

বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতি খুব ভালো অবস্থানে নেই। এমতাবস্থায় আমরা যেসকল দ্রব্য আমদানি করার উপর নির্ভর করে থাকি, সেসব দ্রব্য বা মালামাল দেশে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা একটি যুগোপযোগী সিধান্ত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ নানান ধরনের জরুরী ইলেকট্রমেকানিক্যাল ও মেকানিক্যাল যন্ত্রাদি   আমদানিতে  আমাদের অনেক ব্যয় করতে হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর বৈদেশিক বানিজ্য পরিসংখান প্রতিবেদন (২০২০-২১) অনুযায়ী এসমস্ত মেশিন ও যন্ত্র আমদানির জন্যে ব্যয় হয়েছে ৪২০৩৮৮ মিলিয়ন ডলার, এবং এই খাতেই সবচেয়ে খরচ করতে হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে কাঁচা তুলা আমদানি, সেক্ষেত্রে ব্যয় হয়েছে ৩২৩৪১০ মিলিয়ন ডলার।

আমাদের দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন ওয়াল্টন, যমুনা ইলেকট্রনিক্স, মাইওয়ান, মিনিস্টার ইত্যাদি তাদের নিজস্ব কারখানায় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উতপাদন করে থাকলেও ভিন্নদেশে রপ্তানিতে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি এখনো। এমনকি মেকানিক্যাল প্রোডাক্ট, জেনারেটর এবং পাম্প বড় পরিসরে উতপাদন করতে সম্ভব হয়নি, অপরদিকে এসমস্ত মালামাল ও যন্ত্রগুলো আমাদের বিশাল পরিমানে আমদানি করতে হয় দেশের উন্নয়ন ও স্থাপনা নির্মাণে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে দিন দিন আমরা আমাদের আশেপাশের দেশগুলোর  কাছেই বিশাল এক অর্থনৈতিক বাজারে পরিণত হচ্ছি।

ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল যন্ত্রাদি শুধুমাত্র আমাদের উৎপাদন করলেই হবেনা, পাশাপাশি রাখতে হবে আন্তর্জাতিক গুণগত মান। যেমন ভিডিএস, ইউএল, এফএম সারটিফিকেশান। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা মালিকদের প্রতিবছর মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হয় এসমস্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত যন্ত্রাদি আমদানিতে এবং বেশকিছু বছর ধরে রিয়েল এস্টেট, হাস্পাতাল, আবাসিক ও অনাবাসিক উঁচু ভবনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সরকার থেকে কঠোর বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ ও অন্যান্য ইলেক্ট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল যন্ত্রাদি সঠিক পরিকল্পনা মোতাবেক স্থাপনে। এক্ষেত্রে কাজ শুরুর পূর্বে রাজউক এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স থেকে নকশা অনুমোদন করা এবং কাজ শেষ করার পর যন্ত্রাংশ স্থাপনের ব্যবহারিক পরীক্ষা – নিরীক্ষার সাপেক্ষে চুড়ান্ত সনদ গ্রহন করতে হয়।

প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মানের সারটিফিকেশান নিয়ে যদি আমরা এই সমস্ত মালামাল দেশে তৈরি  করতে পারি, তাহলে উৎপাদিত মালামাল আমাদের দেশেই কম খরচে বিভিন্ন কারখানা ও ভবন মালিকগণের ব্যবহার করা সম্ভব হতে পারে। প্রকৌশলীদের বিভিন্ন প্রকার গবেষণা করার সুযোগ আর বেকারদের উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (২০২০-২১) প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছি যথাক্রমে চায়না থেকে ২০.৩৬ শতাংশ এবং ভারত থেকে ১৫.৯৮ শতাংশ।বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ও  আগামিদিনের কথা মাথায় রেখে সরকারি বা বেশরকারি উদ্যোগে যদি আমরা যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করতে  পারি, তাহলে নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি খাতে ভুমিকা রাখলে দেশীয় আয় (জিডিপি) আরও বৃদ্ধি হতে পারে।

লেখক-

মাসুদুর রহমান

ডেপুটি রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (মেকানিক্যাল)

কনকর্ড গ্রুপ

error: Content is protected !!