হোম » খেলা » এক বছর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ

এক বছর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ

আওয়াজ অনলাইন : অবশেষে এক বছর পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৩২ রানে হারিয়েছে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ ৭ রানে জিতেছিল সোহান বাহিনী।

এর মাধ্যমে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৯ রান করে টাইগাররা। জবাবে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করতে পারে আরব আমিরাত।

ইনিংস ওপেন করতে নামা মিরাজ ও সাব্বির রহমানের ১টি করে চারে প্রথম ওভারে ৯ রান পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে মিরাজ ১টি চার ও সাব্বির ছক্কা মারলে ১৪ রান জমা হয় বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। তবে চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে আমিরাতের বাঁ-হাতি স্পিনার আরইয়ান লাকরা ১২ বলে ৯ রান করা সাব্বিরকে আউট করলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

দলীয় ২৭ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ক্রিজে আসেন লিটন দাস। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগাতে শুরুতেই ২টি চার মারেন লিটন। এতে ৬ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৪৮ রান পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষ হবার পরও রানের চাকা দ্রুত ঘুড়নোর চেষ্টা করেন লিটন। আরও ২টি চার মারেন তিনি।

কিন্তু নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নিতে হয় লিটনকে। ৪টি চারে ২০ বলে ২৫ রান করে আরব আমিরাতের স্পিনার আয়ান আফজাল খানের প্রথম শিকার হন লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে মিরাজের সাথে ২৮ বলে ৪১ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন লিটন।

লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন আগের ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেন। উইকেটে গিয়েই মারমুখী হয়ে উঠেন তিনি। ২টি চার ও ১টি ছক্কা আসে আফিফের ব্যাট থেকে। তবে উইকেটে সেট হয়ে উঠার আগেই ১০ বলে ১৮ রান করা আফিফকে দ্বিতীয় শিকার বানান আফজাল।

১১তম ওভারে আফিফ যখন ফিরেন তখন দলের রান ৯০। পাঁচ নম্বরে নামা মোসাদ্দেক হোসেনের ছক্কায় ১৩তম ওভারে বাংলাদেশ শতরান স্পর্শ করে।

১৪ ও ১৫তম ওভারে মিরাজ ও মোসাদ্দেক ২টি করে চার মেরে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ান। কিন্তু ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে থামতে হয় দারুন খেলতে থাকা মিরাজকে। আরব আমিরাতের পেসার সাবির আলির বলে লেগ বিফোর আউট হন মিরাজ। ৫টি চারে ৩৭ বলে ৪৬ রান করেন তিনি।

মিরাজের আউটের পর রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। পরের ১৯ বলে মাত্র একটি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি পায় টাইগাররা। দুটিই আসে ইয়াসির আলির ব্যাট থেকে। এর মাঝে ১৭তম ওভারের শেষ বলে আউট হন মোসাদ্দেক। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ বলে ২৭ রান তুলেন মোসাদ্দেক।

১৯তম ওভারে মাত্র ৭ রান পায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করেছিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তবে পরের চার বলে আসে মাত্র চার রান। আর শেষ বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশের স্কোর ১৬৯-এ পৌঁছে দেন সোহান। প্রথম ম্যাচেও ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরেছিলেন এই সিরিজের অধিনায়ক সোহান।

১৩ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন ইয়াসির। ১০ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। দু’জনেই ১টি করে চার-ছক্কা মারেন। আরব আমিরাতের আফজাল ৩৩ রানে নেন ২ উইকেট।

আমিরাতকে ১৭০ রানের টার্গেট দিয়ে বোলিং করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে বল হাতে সাফল্য এনে দেন দুই পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ। তাই তৃতীয় ওভারে স্পিনার নাসুম আহমেদকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক সোহান। পঞ্চম বলেই নিজের ডেলিভারিতে নিজেই ক্যাচ নিয়ে আরব আমিরাতের চিরাগ সুরিকে শিকার করেন নাসুম। ৫ রান করেন সুরি।

পঞ্চম ওভারের শেষ দুই বলে নাসুমকে দুটি ছক্কা মারেন আমিরাতের আরেক ওপেনার মোহাম্মদ ওয়াসিম। পরের ওভারের সেই ওয়াসিমকে লেগ বিফোর আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় খেলতে নামা তাসকিন। ১৬ রান করেন ওয়াসিম।

বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ২৮ রান তুলতে পারে আরব আমিরাত। পাওয়ার-প্লে শেষ হবার পর প্রথমবারের মত আক্রমণে এসেই ২ উইকেট তুলে নেন স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন। তৃতীয় বলে লাকরাকে ও চতুর্থ বলে আরবিন্দকে শিকার করেন মোসাদ্দেক। লাকরা ৪ ও আরবিন্দ ২ রানে ফেরেন। হ্যাট্টিক সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি এ টাইগার বোলার।

২৯ রানে ৪ উইকেট পতনে চাপে পড়ে আরব আমিরাত। এ অবস্থায় বড় জুটি গড়তে সাবধানে ব্যাট করতে থাকেন বাসিল হামিদ ও অধিনায়ক চুন্দঙ্গাপয়িল রিজওয়ান। পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁধে দেখে-শুনে খেলতে থাকেন তারা। চতুর্থ উইকেট পতনের পর, পরের ৩৪ বলে মাত্র ১টি বাউন্ডারি মারতে পারেন এই জুটি।

১৩ ওভার থেকে মারমুখী হয়ে উঠেন হামিদ-রিজওয়ান। ১৩তম ওভারে ১২, ১৫ থেকে ১৭তম ওভার পর্যন্ত যথাক্রমে- ১০, ১৪ ও ১১ রান নেন তারা। এসময় ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন এই দুই ব্যাটার।

শেষ ৩ ওভারে ৫৫ রানের সমীকরণ পায় স্বাগতিকরা। ১৮তম ওভারে তাসকিন ৩ রান দিলে, সেখানেই একরকম ম্যাচ হার নিশ্চিত হয়ে যায় আমিরাতের। কারণ শেষ ২ ওভারে জয়ে সমীকরণ দাঁড়ায় ৫২ রানের। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে হামিদ-রিজওয়ান জুটি ভাঙেন শরিফুলের ইসলামের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া আরেক পেসার এবাদত হোসেন। ৪টি চারে ৪০ বলে ৪২ রান করা হামিদকে শিকার করেন এবাদত।

পঞ্চম উইকেটে ৭২ বলে ৯০ রান তুলেন হামিদ-রিজওয়ান। যা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ রানের জুটি।

১৯তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৩৭ রান।
বাংলাদেশ জয় পায়ে ৩২ রানের। মোসাদ্দেক ২ ওভারে ৮ রানে নেন ২ উইকেট নেন। ১টি করে শিকার করেন তাসকিন-নাসুম-এবাদত।
সূত্রঃ ই টিভি/ এইচ।

error: Content is protected !!