হোম » অন্যান্য বিভাগ » পিতার যোগ্য উত্তরসূরী,ভাইয়ের আদর্শে অবিচল: সৈয়দা লিপি এমপি

পিতার যোগ্য উত্তরসূরী,ভাইয়ের আদর্শে অবিচল: সৈয়দা লিপি এমপি

শাহজাহান সাজু (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১০ই এপ্রিল ১৯৭১-১৯৭২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রধানতম পুরুষ, যার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মধ্য দিয়ে পাকিস্থানের হাত থেকে বাংলাদেশ কে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দেয়।
এই ঘটনাটি বাঙালি জাতিসত্বাকে বিশ্ববাসীর সামনে গর্বিত পূনরূত্থানের সুযোগ করে দেয়।শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯২৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) যশোদল বীরদামপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।তার লেখাপড়ার শুরু যশোদল মিডল ইংলিশ স্কুলে৷এরপর কিশোরগঞ্জ আজিমুদ্দিন হাই স্কুল আর ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে কাটান তার স্কুল জীবন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে দুই বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন৷
১৯৪৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে বি.এ. (অনার্স), ১৯৪৭ সালে এম.এ এবং ১৯৫৩ সালে এল.এল.বি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৷ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৪৬-৪৭ সালে সলিমুলাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ তিনি ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷
১৯৪৭ সালে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ৷ তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ ঐতিহাসিকভাষা আন্দোলনের সময় তিনি সর্বদলীয় একশন কমিটির -এর সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হবার পরও সরকারি চাকুরী প্রত্যাখ্যান করেন৷
তিনি ১৯৪৯ সালে ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবেআনন্দমোহন কলেজে যোগদান করেন৷ পরে ১৯৫৫ সালে ময়মনসিংহে আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন।তিনি ১৯৫৭ সালে খ্যাতিমান রাজনীতিক, সু-সাহিত্যিক ও পাকিস্তানের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আবুল মনসুর আহমেদকে কাউন্সিলের মাধ্যমে হারিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এ পদে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ৷ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ তিনি আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন ৷
১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন শুরু হলে আইয়ুব সরকার আওয়ামীলীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ তিনি ছিলেন ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটির (DAC) অন্যতম কর্ণধার। রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথমে ১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং পরে ১০-১৩ মার্চ দু’দফা এ বৈঠক হয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের অন্যতম নেতা হিসেবে এ সময় বৈঠকে যোগদান করেন।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ আসন থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সংসদে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ৷ তাজউদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্টপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটা সরকারের কাঠামো তৈরি করেন এবং ১০ এপ্রিল রেডিওতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেন৷
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী সরকারের তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ৷ ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ময়মনসিংহ-২৮ আসন থেকে ৷নির্বাচনের পর পরবর্তী মন্ত্রীসভায় ও তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ৷
জাতীয় সংসদে তিনি উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৷ পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও গ্রহণ করেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর তাঁকে প্রথমে গৃহবন্দী এবং ২৩শে আগস্ট, ১৯৭৫ তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয় ৷ কারাগারে বন্দী থাকা অবস্হায় ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুদ্ধ রাজনীতির একজন পথপ্রদর্শক জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যৈষ্ঠ সন্তান।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন আওয়ামী লীগের দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী।এর পূর্বে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে আশরাফুলের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন।
লন্ডনে বসবাসকালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সে সময় তিনি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ফেডারেশন অব বাংলাদেশি ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এফবিওয়াইইউ) এর শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে ১৯৯৬ সালে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দেশে ফিরে আসেন এবং (১২ জুন ১৯৯৬) সালে অনুষ্ঠিতব্য ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।কিশোরগঞ্জ ১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে (রীমা ঠাকুর), যে লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সহযাত্রী, একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন মানুষ।ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী (২০০৭) আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে জিল্লুর রহমানের (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি দলের হাল ধরেছিলেন। দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন।
একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিতাড়নের যে খেলা তখন চলেছিল, তার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন তিনি।ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এই অসুস্থতা নিয়েই (৩ জানুয়ারি ২০১৯) না ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।তিনি দেশে না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর হোসেনপুর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন।সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর। তার ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পিতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের রক্তের যোগ্য উত্তরসূরী ও ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আদর্শে অবিচল ও অনুপ্রাণিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আজ তিনি একজন সফল জনপ্রতিনিধি। এমপি লিপি তার নির্বাচনী এলাকার শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন।রাস্তা-ঘাট ব্রিজ-কালবার্টসহ আমল পরিবর্তনের এনে দিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ হোসেনপুরের সর্বসাধারণ দল মত নির্বিশেষে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় এমপি হিসাবে পেয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অসমাপ্ত কাজগুলি ও নিজের চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলি সমাপ্ত করতে পারবে বলে নির্বাচনী এলাকার মানুষের বিশ্বাস। কিশোরগঞ্জ ১ (সদর-হোসেনপুর) বাসীর ভরসা স্থল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার। এ পরিবারটিতেই এমপি পদ সবসময়ই দলমতের ঊর্ধ্বে নিরাপদ থাকে।
error: Content is protected !!