হোম » মতামত » যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি প্রবাসী আয়, স্বস্তির আবার প্রশ্নও জাগায়

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি প্রবাসী আয়, স্বস্তির আবার প্রশ্নও জাগায়

আওয়াজ অনলাইন: দেশে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বরাবরই এগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকেরা। তবে এবার সেটিকে পেছনে ফেলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। দেশটিতে কর্মরত ও বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩০৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। নি:সন্দেহে স্বস্তি দায়ক খবর হলেও ,হঠ্যাৎ করে কেন বাড়লো যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা আসার পরিমাণ, সেটি এখন সব মহলে চর্চার বিষয়। 

সরকারি হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা সব মিলিয়ে ১২ লাখের মতো হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে নিউ ইয়র্কেই থাকেন প্রায় চার লাখ। নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার পথ ধরে হাঁটলে দেখা মিলবে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি দোকান-পাট, ব্যবসা বাণিজ্য, সেখানে বসবাস করছেন তারা।

২০২০ সালে  বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়েন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।  করোনার সময় যারা কাজ হারিয়েছিলেন, তাদের বিশেষ ভাতা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এর বেশিরভাগ অর্থ তারা দেশে পাঠাচ্ছেন আবার দেশটিতে যারা কাজ করেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন।

যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন বাংলাদেশির এক দিনের আয় সৌদি আরবের একজন বাংলাদেশির এক মাসের বেতনের সমান পর্যন্ত হতে পারে। প্রবাসী আয় বাড়ার এটি একটি কারণ হতে পারে । আবার অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, বাংলাদেশি আমেরিকানদের একটি বড় অংশের পারিবারিক সংযোগ রয়েছে। তারা বাংলাদেশে আত্মীয়দের কাছে অর্থ পাঠিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।

আরেকটি মূল সম্ভাব্য কারল হতে পারে, ঋণ খেলাপি, কর ফাঁকিদাতা, দুর্নীতিবাজদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এসব দেশে অর্থপাচার করা। সম্প্রতি এই প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ-আমলাদের,অনেকেরই স্বপ্ন থাকে যুক্তরাষ্ট্রে  উচ্চশিক্ষায় সন্তানদের শিক্ষিত করার। সেই স্বপ্নপূরণে  গেল কয়েক বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের সন্তানরা বিদেশে পারি জমাচ্ছেন , তারাও  সেখানে বসবাসের জন্য গ্রীন কার্ড নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তি হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ-২০২২’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো সময়ের চেয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে বেশি বাংলাদেশি  শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।

এর আগের বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পাঠানোয় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। এবার সেই অবস্থান ১৩তম । বিদেশে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ক্ষেত্রে যে অর্থ খরচ হচ্ছে  প্রথম সারির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ধরণ অনুযায়ী সেখানে গুণতে  হচ্ছে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত। দেশটিতে রয়েছে ১ হাজারেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার স্কলারশিপ নিয়েও পড়ছেন অনেকে।

সাধারণত, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছু একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবার শুরুতে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার ডলার পাঠিয়ে থাকে। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপর তাদের ১০ হাজার করে ডলার পাঠাতে হয়। এছাড়া মাসিক থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের জন্য গড়ে দুই থেকে চার হাজার ডলার পাঠাতে হয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর , বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে, ডলারের সংকটের কারণে, দেশের অভ্যন্তরে যে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ফাইল খোলা এবং সেবা  শ্লথ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে উচ্চশিক্ষায় বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেশ থেকে ২১ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছিল। চাহিদার তুলনায় বৈধপথে  টাকা পাঠানোর সংকট আর অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে এসব উচ্চ বিত্তদের অনেকেই বিকল্প হিসাবে টিউশন ফি এবং পড়াশোনার খরচের নামে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন।

আবার অনেকে  অবৈধপথে উপার্জিত অর্থ দেশে নিরাপদ না মনে করে, বিনিয়োগ তথা বাড়ি, গ্যাস স্টেশন থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবসায় অর্থ লগ্নির উদ্দেশ্যে পাচার করছেন । যা আবার ব্যাংকিং খাতে ফিরছে সরকারের দেয়া ২ দশমিক ৫ শতাংশ (আড়াই শতাংশ) হারে অর্থ প্রণোদনার বাড়তি সুবিধা নিয়ে। ফলে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ।

প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে কোন একক দেশের ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য দেশ থেকেও যদি এর পরিমাণ বাড়ানো যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের এ সময়ে, তাহলে নি:সন্দেহে সেটি ভালো খবর। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, যে হারে টাকা পাচার হচ্ছে দেশ থেকে, সে হারে কি প্রবাসী আয় বাড়ছে? সেটিই এখন প্রশ্ন।

তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বাড়লেও আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন কারণ নেই সরকারের বরং খতিয়ে দেখা উচিত কি কারণে বাড়ছে প্রবাসী আয়। অর্থ পাচার হয়ে বৈধ ভাবে দেশে আসলেও সেটিও আমলে নেয়া উচিত সরকারের

error: Content is protected !!