রায়হান আলী উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বেতকান্দি গ্রামে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন অধীন ( বিএডিসি) ২টি গভীর নলকূপে কৃষকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে সেচের বিপরীতে নগদ টাকা না নিয়ে জোড় পূর্বক ধান নেওয়ার অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি দীর্ঘদিনেও। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর বরাবর ওই দুটি নলকূপের অধীন প্রায় সাড়ে ৩’শ কৃষক গণস্বাক্ষর দিয়ে অভিযোগ করে ৫ বছরেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। অভিযোগ করার কারণে কৃষকদের নানা ভাবে হুমকি দিয়ে জোড় পূর্বক জমি থেকে ফসল ছিনিয়ে নিচ্ছে ওই নলকূপ দুটির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজাররা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ও নলকূপ দুটির ম্যানেজারকে বার বার ফসলের পরির্বতে টাকা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।
কৃষকদের লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের বেতকান্দি গ্রামে প্রায় ৮ বছর পূর্বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) প্রকল্পের অধীন দুটি গভীল নলকূপ স্থাপন করা হয়। সরকারী নিয়ম নীতি অনূর্যায়ী কৃষকদের সল্প টাকায় সেচ সুবিধার জন্য নলকূপ দুটি স্থাপন করা হলেও তা মানা হয়নি। ওই নলকূপ দুটির ম্যানেজার বেতকান্দি গ্রামের হাজী আমির উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম ও জয়নাল আবেদীনের পুত্র রবিউল করিম ক্ষমতার প্রভাবে জোড় পূর্বক কৃষকদের কাছ থেকে নগদ টাকা না নিয়ে চার ভাগের এক ভাগ ফসল নিচ্ছে।
এ নিয়ে নলকূপ দুটির অধীন প্রায় সাড়ে ৩ শ’কৃষক প্রতিকার চেয়ে ২০১৩ সাল থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। গত বছর ইরি-বোরো মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকরা আবারও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসার,বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর বরাবর একই অভিযোগ দায়ের করে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুজ্জামান কৃষকদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ উল্লাপাড়া অফিসকে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া এবং নলকূপ দুটির ম্যানেজারকে কৃষকদের কাছ থেকে ফসলের পরির্বতে টাকা নেয়ার জন্য ২৬ নভেম্বর ২০১৮ইং চিঠি দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চিঠির পর বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কৃষকদের আবেদনের কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। ইউএনওর চিঠি পাওয়ার পরও কৃষকদের কাছ থেকে সেচের বিপরীতে টাকা না নিয়ে নলকূপ দুটির ম্যানেজার জোড়পূর্বক জমি থেকে চার ভাগের এক ভাগ ফসল নিয়েছে।
এদিকে বেতকান্দি গ্রামের সাড়ে ৩ শ’কৃষকের আবেদনটি ইউএনও মৌসুম শুরুর আগেই আবারও আমলে নিয়ে উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল সহ বিএডিসি অফিসকে দায়িত্ব দেন। গত ৩ সপ্তাহ ধরে উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল ইউএনওর নির্দেশের পর কৃষক ও নলকূপ ম্যানেজারদেরকে নিয়ে সুরাহার জন্য বার বার সমাধার জন্য শালিসের নোটিশ করেও কোন শালিস করছেন না। কৃষকরা অভিযোগ করেন,ইউপি চেয়ারম্যান শুরু থেকেই নলকূপ দুটির ম্যানেজারদের পক্ষ নিয়ে কৃষকদের সাথে শালিসের নামে টাল বাহানা করছেন। গত বছরও তিনি ইরি-বোরো মৌসুমে বেতকান্দি গ্রামে বিশাল শালিস বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেয়ার পরির্বতে ফসল দেয়ার রায় দেন। ইউপি চেয়ারম্যানের মদদে নলকূপ দুটির ম্যানেজার সরকারী নির্দেশ না মেনে জোড় পূর্বক সাড়ে ৩শ’কৃষকের জমি থেকে সেচের বিপরীতে প্রতি বছর টাকা না নিয়ে ফসল নিচ্ছেন। এতে ক্ষতির সন্মুখিন কৃষকরা চরম ক্ষুব্দ। তারা দ্রæত এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উল্লেখ্য এ নিয়ে ইরি বোরো মৌসুমে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রক্সি মিডিয়ায় সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি জানান,কৃষকদের লিখিত অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত বছর থেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বিএডিসি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়া দুঃখ জনক। এবার মৌসুম শুরুর আগেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই সমস্যা সমাধানের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আদেশ না মানলে নলকূপ দুটির কমিটি বাতিল এবং ম্যানেজারদের দায়িত্বে থাকা যন্ত্রাংশ জব্দ করে কৃষকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।