হোম » জাতীয় » আজ মহান মে দিবস- আব্দুর রাজ্জাক

আজ মহান মে দিবস- আব্দুর রাজ্জাক

আব্দুর রাজ্জাকঃ আজ মহান মে দিবস, শ্রদ্ধা ভরে স্বরণীয় এই দিনটিকে। বাংলাদেশের মত পৃথিবীর সকল মেহনতি মানুষের কাছে এই দিনটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ন, কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রায় অধিকাংশ দেশে শ্রমিকের শ্রম সস্থা এমনকি কোন কোন দেশে শ্রমিকের লাশও সস্তা। কিন্তু মালিকের ক্ষমতা সীমাহীন । ফলে পুজিঁবাদী সরকার মালিক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ।

গত সেপ্টেম্বরে সেজান সুজ কারখানায় অগ্নি কান্ডে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল । যাহা মিডিয়া বা পত্র- পত্রিকার খবর, শ্রমিক সংগঠন সমূহ কর্তৃক মানব বন্ধন,শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কাছে ৫ দফা বা ৬-৭ দফা দাবী,সুশীল সমাজের টক শোতে আলোচনা,কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠানের সমবেদনা বা কারখানায় অগ্নিকান্ডের সমস্যা সমাধানের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে বিদেশি দাতা গোষ্ঠীর অর্থ সরবরাহ। তার পর সবার দায়ীত্ব শেষ। কিছু দিন পর সবাই নিজ নিজ ঘরে ফিরে গেছেন । অন্য দিকে শ্রমিকের লাশের মূল্য সস্তা দামে তার পরিবারের কাছে বেচা – কিনা হয়েছে ।

এই বেচা কিনায় কিছু পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে আর কিছু পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আসায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাঁড়ে দাঁড়ে এখনও বাঁধা গ্রস্ত হচ্ছেন এর কারন কি? বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সংশোধিত ২০১৮ এর ৮৩ ধারায় ” অগ্নিকান্ডকে” দূর্ঘটনা বা ব্যাধি সম্পর্কে তদন্তের নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা ; (১),(২),(৩),(৪),(৫)কিছু ক্ষমতা সরকারের প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের কারনে ” মৃত্যুবরণ “এবং তার জন্য আলাদা ক্ষতি পূরণ বা মালিকের গাফিলতির প্রায়শ্চিত্তে কোন বিধান নেই।

ফলে প্রচলিত দূর্ঘটনা জনিত বিধানেই শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে। আবার সেখানেও নানা কাহিনি বা জটিলতা।স্বাধীনতা উত্তর ৮০ দশক হতে কারখানায় কাজ করতে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে যত শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে তার ৫% যদি কারখানা চালাতে গিয়ে মালিক মৃত্যুবরণ করতো – তখন আইনটা হয়তো বা ভিন্নরূপ ধারন করতো। আর যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনে শ্রমিক এর মৃত্যু হয়, তারজন্য উক্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার শাস্তির বিধান শ্রম আইনের কোথায়ও নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা বা দায়বদ্ধতা থাকত, তাহলে বাংলাদেশে অগ্নি কান্ডে এত শ্রমিক মারা যেত না ।

ডাইফি নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের কর্মদক্ষতা এবং ক্ষমতা – জনবল নগন্য বলা যেতে পারে। যার কারণে সঠিক ভাবে কারখানা পরিদর্শনের দায়িত্বটা প্রতিপালিত হওয়ায় সুযোগ কম। অন্যকথায় কারখানা চলাকালিন বাংলাদেশে কোন মালিক বা সরকারের প্রতিনিধি কারখানা পরিদর্শক মারা গেছেন এমন নজির নেই বললে চলে। ফলে আইনের দূর্বলতা ও অসচেতনতার কারনে কারখানায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাতে শুধুই শ্রমিক মৃত্যুবরণ করছে এবং মৃত্যুর পর শ্রমিকের লাশ সস্তা দামে বিক্রির পন্য হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে। যা একটি স্বাধীন দেশে কখনও কাম্য নয়। অন্য দিকে ট্রেড ইউনিয়ন করা শ্রমিকের আইন গত অধিকার; যাহা বাংলাদেশ শ্রম আইন (২০০৬) গত অধীকার, আইএলও কনভেশনাল (কনভেন ৮৭,ও ৯৮) অধীকার এবং সাংবিধানিক (৩৭,৩৮)অধিকার।

এত সব আইনি অধিকার থাকা সত্বেও কোন প্রতিষ্ঠানে কার্যকরী ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধাবিপত্তি পোহাইতে হয় কেন?এর কোন প্রসাশনিক ব্যাখ্যা আছে? নেই! ফলে যা হবার বার বার তাই হচ্ছে! কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনা বার বার ঘটছে এবং অবলিলাক্রমে শুধু নিরহ শ্রমজীবি মানুষ গুলো অকালে মৃত্যুবরণ করছে।এই সমস্ত ঘটনার বিপরীতে শ্রমিক সংগঠন তেমন কোন ভুমিকাও রাখতে পারছে না। তার প্রধান কারন ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন গুলো পাকিস্তান বা বৃটিশ আমলের মত কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তুলছে না। নীতিহীনতায় পরিপূর্ণ, যে যায় নেতৃত্বে বা যাকে নেতৃত্বে বসানো হয় সেই হয়ে উঠে রাবন । প্রায় প্রতিটি জাতীয় ফেডারেশন গুলোতে একই কাজ বর্তমান।যেমন অভ্যন্তরীণ গনতান্ত্রিক চর্চাহীনতা, নেতৃত্বের বিকাশের সুযোগ সুবিধা অবর্তমান, রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রভাব বিস্তার , এনজিও দের সহিত সম্পৃক্তিততা,নামে বেনামে বিদেশি ষড়যন্ত্র সেমিনার -ট্রেনিং, শুধু মাত্র অর্থনৈতিক বাদী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সর্বোপরি নীতি হীনতা এবং স্বার্থপরতা এবং কর্তৃত্ববাদী চৈতন্যতা শ্রমিক শ্রেনীর সঠিক লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষমতা অর্জনে অন্তরায়।এই বাধা গুলো উত্তোলনের জন্য যে শ্রেনী সংগ্রাম দরকার তাও সমসাময়িক শ্রমিক রাজনীতিতে অনুপস্থিত।

প্রচলিত শ্রম আইনে বলা আছে (১৬০ধারা) পেশাগত দূর্ঘটনা জনিত বা পেশাগত ব্যাধির জন্য মৃত্যুবরণ এর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরন হিসেবে শ্রমিকের আইনগত প্রতিনিধি দুই লক্ষ টাকার বেশী পাবে না। তাহলে কি একটি শ্রমিকের মৃত্যর পর লাসের দাম কি শুধুই দুই লক্ষ টাকা ? এটা কখনও হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আপোষহীন প্রতিরোধের জন্য দরকান ট্রেড ইউনিয়ন মোভম্যান্ট। রানা প্লাজার ট্রাজেটিকে কেন্দ্র করে হাজারো এনজিও গড়ে উঠেছে। বাহির থেকে টাকা আসছে অগ্নিকান্ড থেকে কি ভাবে সচেতন করা যায়- সেই বিষয়ে ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করা। কোন দিনই এই এনজিও ট্রেড ইউনিয়ন মোভম্যান্ট করার কথা বলে না,শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের কথা বলে না, এমন কি ট্রেড ইউনিয়ন শব্দটা উচ্চারণ করতে ভয় পায় । বলবে না এই কারনে; যদি বিদেশি প্রভূরা Fund দেয়া বন্ধ করে দেয়। অথচ মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার এনজিও এর মাধ্যমে ব্যায় করা হচ্ছে কোন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন যেন গড়ে না উঠে ।

উদ্দেশ্য একটিই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দিকে যেন শ্রমিকরা ধাবিত না হয়। আর আমরা শ্রমিক প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধি জীবি, বাম চিন্তার কিছু ধারক বাহক এই এনজিও এর কার্যক্রমের সহিত জরিত এবং ভিন্ন ভিন্ন ট্রেনিং এর মাধ্যমে শ্রমিক সচেতনতার নামে শ্রমিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে বিদেশি পুজিঁবাদী ষড়যন্ত্রের পথ সুগম করছি। ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্বে আমরা বিভিষনের ভূমিকা পালন করছি ।উপনিবেশিক সময়ের জমিদারি নিত্য মদের আড্ডায় মমত্ব – যেন এটাই আমার মুক্তির পথ প্রশস্থ করবে, শ্রমিকদের ন্যায় সংগত অধিকার আদায় হবে।

“রাজনৈতিক আদর্শে যতদিন শ্রমিক শ্রেণীকে একত্রিত করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত এই শ্রেণির কোন মুক্তি নেই”। মনে করতে হবে এই কথাটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে স্বীকৃত দলিল। শ্রমিকদের অর্জিত অর্থ আত্মসাৎ হলো এক ধরনের বেশ্যাবৃত্তির নব্য দালাল । এই বেশ্যা বৃত্তির কারনে আজ প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধাপ্রাপ্ত। কিছু কিছু ইউনিয়ন ইচ্ছে সেটাও শ্রমিকের স্বাথে নয় বরং এক ধরনের দোকান খোলা, যেন ব্যবসা বানিজ্য ভাল হয়।

শুধু কি তাই? স্বাধীন দেশের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বিনির্মানে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এখান থেকে বের হতে না পাড়লে কারখানার অগ্নিকান্ডে শ্রমিক মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য। প্রতি বছর বছর মহান মে দিবসে শ্রমিক শ্রেনীর মুক্তির অঙ্গীকার ব্যাক্ত করলেও ফলা ফল শূন্য। এখান থেকে মুক্তির পথ হলো মালিক সহ এই ভন্ডদের ঐ অগ্নিকান্ডে নিক্ষেপ করা।অথবা এই লক্ষে মানসিকভাবে কর্ম সম্পাদনে উদ্ভুদ্ধ করা । শ্রমিকদেরকে বুঝানো দরকার তৈল আর জল কখনও মিশে না। এর চরিত্র সব সময় আলাদা আলাদা ভাবে পৃথক থাকে। শোষক ও শোষিত কখনও ভাই ভাই হতে পারে না। এটা শ্রম অধিপ্তরের একটা স্লোগান হতে পারে মাত্র। এরও একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে গালে জুতা মেরে পিঠে হাত দিয়ে আদর করার মত। এই সব কিছু হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ঠিকে রেখে মালিক শ্রেনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করন। আসলে শ্রমিক শ্রেনীর মুক্তির পথ হলো প্রকৃত শ্রমিক কর্মচারী – পেশা জীবি জনগন কর্তৃক সংসদ দখল করা।তার জন্য শুধু মাত্র অর্থনৈতিকবাদী আন্দোলন নয় বরং স্থায়ী ভাবে সংসদে শ্রমিক শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিকরণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আন্দোলন সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। আর এই নীতিমালা হউক পৃথিবীর প্রতিটি দেশের শ্রমিকের মহান মে দিবসের অঙ্গীকার। দুনিয়ার মজদুর একহও। সংগ্রাম দীর্ঘ জীবি ইউক।

আব্দুর রাজ্জাক
শ্রম বিষয়ক সম্পাদক
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ
কেন্দ্রীয় কমিটি।।

error: Content is protected !!