হোম » সাহিত্য » বাবা কে খোলা চিঠি

বাবা কে খোলা চিঠি

আব্দুস সাত্তারঃ বাবা আমাকে কলেজে ভর্তি করার কমাস পরেই অনেক অল্প বয়সে তুমি পরপারে চলে গেলে। অনন্তকালের জন্য চলে যাবার সময় তোমার মুখ দেখতে পারিনি। ১৯৬৩ সালে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত ছিল। তোমার অসুস্থতার খবর না জানিয়ে তুমি নিরবে চলে গেলে। তুমি চলে যাওয়ার রাতে আমি স্বপ্নে দেখি কে যেন জোর করে আমার নিকট থেকে আমার অতি প্রিয় জিনিস কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি অনেক কেঁদেছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম।

বাবা,তুমি চাইতে আমি যেন তোমার মত ব্যবসায়ী না হই। তুমি আরো চাইতে আমি যেন কোন সরকারি চাকরি করি কোন কর্মকর্তা হই। পোরশা থানার মধ্যে ধনে ও মানে এক বিশাল জনগোষ্ঠীতে আমার জন্ম। বাবাও চাচার একমাত্র ছেলে হিসাবে আমি অতি আদরে বড় হয়েছি। বাবা চাচার একমাত্র ছেলে এবং লেখাপড়ায় ভালো হিসাবে সবাই হিংসা করত। বিশাল এই বংশের শত শত মানুষের হিংসার সাগর পাড়ি দিয়ে বড় হয়েছি।

আমি বিসিএস পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার পরও আমার বিরুদ্ধে সরকারি উচ্চ মহলে আমার চাকরি না হওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাবা, আল্লাহ যার সহায়ক এবং আল্লাহ কৃপায় ও তোমার আশীর্বাদে আমার গতিপথ কেউ রুদ্ধ করতে পারেনি। আমি ইচ্ছা করলে তাদের বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে পারতাম। বাবা, তুমি প্রায়ই বলতে * যে সয় সে রয়*। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের অনেককে চাকুরী দিয়েছি এবং নানাভাবে উন্নত জীবনযাত্রার জন্য সহায়ক হিসেবে অনেক কাজ করেছি। আমাকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার জন্য নানা প্রচেষ্টা করে আমার লেখাপড়া ব্যাহত করার জন্য ওই বংশের লোকেরা অনেক চেষ্টা করেছে। আমি যখন ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম তখন বাংলা ভাষার আন্দোলন বিষয়ে তেমন কিছু জানতাম না তবে আমরা কয়েকজন ছাত্র মিলে মাটির শহীদ মিনার বানিয়ে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা ফুল দিতাম।

বাবা, এমনিভাবে মনের অজান্তে বাংলা ভাষায় কে এবং মাতৃভূমিকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম, অনেক ভালোবেসে ছিলাম। ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চে * বঙ্গবন্ধু* মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত সেই ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বেলিত হয়ে স্বাধীনতার মহান সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ি। বাবা আমরা স্বাধীনতা সিনিয়ে আনতে পেরেছি কিন্তু স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে আমরা নির্মূল করতে পারিনি। তাই বঙ্গবন্ধুকে আমরা অকালে ও অসময়ে হারিয়ে ফেলেছি। একটি মাত্র ছেলে হিসাবে আমাকে নিয়ে তোমার অনেক স্বপ্ন ছিল।

বাবা তোমার সেই স্বপ্ন তুমি দেখে যেতে পারোনি কিন্তু এক নির্লোভ মেয়ে আমার জীবন সঙ্গিনী হয়েছে। যে সারা জীবন আমাকে সৎ পথে চলার উপদেশ দিয়েছে। যারা আমাকে হিংসা করত তারাও তোমার বউ মাকে ভালোবাসতো। বাবা, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে গেলে মা, চাচা এবং চাচি মা সবাই আমার লেখাপড়া এবং বড় হওয়ার ইন্ধন জুগিয়েছে আমি তাদের কাছে তোমার কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ। আমার মা ও চাচী মা সবসময় বলতো, তোমার কর্মকাণ্ডে তোমার উন্নতিতে যেন বংশের সবাই হিংসা করে কিন্তু এমন কিছু করোনা যা দেখে তারা হাসে।

বাবা, তুমি প্রায় বলতে * সত্যের বাতি নিভু নিভু করে হল ও চিরদিন জ্বলবে। আমি সেই বিশ্বাস কে অবলম্বন করে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলতে পারি বাল্যকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন মানুষের ক্ষতি করিনি, ক্ষতি করার কথা ভাবিনি ও কল্পনাও করিনি।

বাবা আমি সব সময় জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছি এবং জানতে চেষ্টা করেছি কিন্তু সম্পদশালী হওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। বাবা, তোমার ও চাচার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমার আজ একমাত্র অবলম্বন।

মহান আল্লাহ আমাকে দিয়ে এখন পর্যন্ত সম্পদ আরোহনে কোন পাপ কাজ করাইনি বলে আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । মহান আল্লাহ সকলের সহায় হোন এই কামনা করি।

লেখক
মোঃ আব্দুস সাত্তার
সরকারি কর্মকর্তা (সাবেক)

error: Content is protected !!