হোম » সাহিত্য » “গঞ্জের আলীর সিরাজগঞ্জ ভাবনা”

“গঞ্জের আলীর সিরাজগঞ্জ ভাবনা”

শেখ হান্নান: সিরাজগঞ্জ বগুড়া রেললাইন নিয়ে ভীষণ মনোকষ্টে ছিলেন গঞ্জের আলী। সে সিরাজ গঞ্জের একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু ওইযে রেললাইন! সেই রেললাইনে সিরাজগঞ্জের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ না থাকায় তার উৎকণ্ঠা, উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করায় আজ সিরাজগঞ্জের প্রতিটি মানুষের কাছে সে বিশাল পরিচিতি পেয়েছে। তার বক্তব্যে এবং বাস্তব ঘটনা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ শহরের সাথে রেল ও অন‍‍্যান‍্য যানবাহনের যোগাযোগের গুরুত্ব।

ঈদুল ফিতরের পূর্বে গঞ্জের আলী সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন অসুবিধা এবং অসুবিধা দুর করণে কী কী করণীয় তা নিয়ে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সন্মেলন করতে চেয়েছিলেন। আজ সেই- জন‍্য হাজার হাজার সুবিধা বঞ্চিত মানুষ, সিরাজগঞ্জ তথা দেশের সন্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের কর্মী, ছাত্র জনতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সমেবেত হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে । সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশনের সাথেই শহীদ মিনার। সেই শহীদ মিনারে তিলধারণের ঠাই নেই। গঞ্জের আলী অতি সাধারণ হলেও আজ এই সংবাদ সন্মেলনের জন‍্য সে একজন অসাধারণ মানুষে পরিণত হয়েছে। তার আসনের সামনে টেবিলের উপর বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রপত্রিকার প্রতিনিধি, অনেকগুলো মাইক্রোফোন, কোনো কোনো টেলিভিশন চ‍্যানেল গঞ্জের আলীর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করছে। বক্তব্যে ভুল হতে পারে সেজন‍্য তিনি সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের পরামর্শে সিরাজগঞ্জের সংবাদপত্রের মুখপাত্র দৈনিক কলম সৈনিকের সম্পাদকের সহযোগিতায় বক্তব্য লিখে এনেছেন। একজন প্রগতিশীল ছাত্রনেতা শহর আলীর সঞ্চালনায় নির্ভিকচিত্তে, অসীম সাহসিকতার সাথে গঞ্জের আলী লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করলেন।উপস্থিত আমার প্রিয় সন্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা এবং সুধী মন্ডলী।

আপনারা সব জানেন এবং বোঝেন। সিরাজগঞ্জের সাথে দেশের বিভিন্ন জেলার সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় কোন অজ্ঞাত কারণে সিরাজগঞ্জকে পরিত‍্যাক্ত ঘোষণা করে, বাইপাস ব‍্যবস্থায়, সিরাজগঞ্জের ট্রেন যোগাযোগের পথ বন্ধকরে দেয়া হলো। এর ফলে সিরাজগঞ্জ দেশের একটি নিগৃহীত, পরিত‍্যাক্ত স্থান হিসেবে যেন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। যাক সেকথা। এরি মধ‍্যে সিরাজগঞ্জকে জংশন করে বর্তমান সরকার এবং স্থানীয় এমপি মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিরাজগঞ্জ বগুড়ার রেলপথ নির্মাণে যে রোডম‍্যাপ দিয়েছেন তাতে আমাদের আশান্বিত করেছে। অচিরেই দেশের অন‍্যান‍্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে, এতে আমাদের স্বস্তির জায়গা তৈরি হয়েছে। তবে হাতপা ঘুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বিষয়টি আমাদের খেয়ালে রাখতে হবে সর্বক্ষণ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,

আপনাদের কাছে প্রশ্ন সিরাজগঞ্জ প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণগুলো কী ছিলো? সহজে বলা যায় বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমলে কলকাতা, খুলনা, যশোহর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, আমনুরা, রোহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট হয়ে ট্রেন সরাসরি সিরাজগঞ্জ আসতো। সিরাজগঞ্জের সাথে রেল যোগাযোগের এই উত্তম ব‍্যবস্থা দেশের মানুষকে সিরাজগঞ্জ কাছে টানতো পর্যটন এবং ব‍্যবসায়িক প্রয়োজনে। এর ফলে সিরাজগঞ্জকে এক ভিন্ন মাত্রার পরিচিতি দিয়ে ছিলো ট্রেনের যোগাযোগ। তাই ষড়যন্ত্র ছিলো এই যোগাযোগ ব‍্যবস্থার ছেদ ঘটানো। সত‍্যি সত্যি সিরাজগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করেদিয়েছে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে সিরাজগঞ্জের মর্যাদাহানি হয়েছে, গুরুত্বকে অবহেলায় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক ধ্বসসহ অপমান অপধস্তে হেয়পতিপন্ন করা হয়েছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে। যা মোটেও কাম‍্য নয়।

প্রিয় বন্ধুগণ। এবার সিরাজগঞ্জের মানচিত্রের দিকে চোখভুলাতে চাই। দেখুন যমুনা নদীর জলধারার গতিপ্রবাহ। সিরাজ গঞ্জের সাথে দেশে উত্তর দক্ষিণাঞ্চলের অভাবিত দীর্ঘ নৌপথ রয়েছে। বারোমাস পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ। এই যমুনা নদীতে বন্দর আর গঞ্জ মানে ব‍্যবসা বাণিজ‍্যের প্রাণকেন্দ্র ছিলো এই সিরাজগঞ্জ। বর্তমানে নদী বন্দর বিলুপ্ত এবং গঞ্জ নিঃশ্চিহ্ন হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এদুটো জিনিস পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের। যদি নদী পথে যাত্রী ও পরিবহনের ব‍্যবস্থা করা যায় তবে, সিরাজ গঞ্জ আবার ব‍্যস্ত হয়ে উঠবে, মর্যাদা ও গুরুত্বে উদ্ভাসিত হবে দ্রুতই। নদী পথে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ার ফুলছড়ি, তিস্তামুখঘাট, গাইবান্ধা, চিলমারি বন্দর, রৌমারী, বাহাদুরাবাদ, জগন্নাথগঞ্জ, দক্ষিণে সোহাগপুর, এনায়েতপুর, বাঘাবাড়ি, নাকালিয়াবেড়া, নগরবাড়ি, গোয়ালন্দ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা, মোংলা, পায়রাবন্দর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার পর্যন্ত খুব সহজে দ্রুত সময়ে যোগাযোগ স্থাপন করা ও স্বল্পখরচে পণ‍্য পরিবহন করা যায়। নদীপথের এ সুযোগ শুধু সিরাজগঞ্জেরই রয়েছে। রাজনৈতিক স্বদিচ্ছায় এখন এই সুযোগের সদ্ব‍্যবহার করতে হবে।

উপস্থিত প্রিয় বন্ধুগণ,আপনারা অবগত আছেন পাকিস্তান আমলে সিরাজগঞ্জকে শিক্ষানগরী বলা হতো। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরুলেও দুঃখজনক হলে সত‍্য, দেশের অন্য জেলার তুলনায় এখানে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়নি। এটা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বাধীনতার পর প্রতিবেশি জেলার উন্নয়নের সাথে সিরাজ গঞ্জের উন্নয়নের হিসেব একনয়। কিন্তু কেনো এই বৈষম্যের শিকার সিরাজগঞ্জ?
আপনাদের মাধ‍্যমে জানাতে চাই অবিলম্বে সিরাজগঞ্জ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে “সিরাজগঞ্জ জয় বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়” নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করতে হবে। কারণ যমুনার পশ্চিম অববাহিকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন‍্য যে মনোরম স্থান, প্রশান্তি বিজড়িত পরিবেশ শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জ ছাড়া বাংলাদেশের অন‍্য কোথাও নেই।

আপনারা জানেন হাটিকুমরুলের গোলচত্তর উত্তরবঙ্গ তথা সমগ্রদেশের যোগাযোগের নাভি। এখানে উল্লেখ্য যে, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আদলে ইন্টার সেকশন তৈরি হচ্ছে হাটিকুরুলের এই গোলচত্তর। এর ফল শ্রুতিতে সৃষ্টি হবে উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা, শুরু হবে এলাহি কান্ডকারখানার বিশাল কর্মযজ্ঞ। যোগাযোগের ইন্টার সেকশনটি তৈরি হলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এ অঞ্চলে, এ অঞ্চলের মানুষের। ফলে এইস্থানের গুরুত্ব সিরাজগঞ্জ জেলার যেকোনো স্থানের চেয়ে কম নয় বরং বেশি হবে। আমরা জেনেছি সিরাজগঞ্জে আরো একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হচ্ছে। সেটা যেন হাটিকুমরুলের এই ইন্টার সেকশনে গোলচক্কোর স্থানটির আশেপাশে নির্মাণ করা হয়। তাহলে সুবিধা বঞ্চিত অসুস্থ রোগীগণ, উত্তর বঙ্গের যেকোনো স্থানের মানুষ তথা চলনবিল বিধৌত অসহায় মানুষের স্বাস্থ‍্য সেবা গ্রহণের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে। বিষয়টি খুবই যৌক্তিকতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।
(চলবে)
শেখ হান্নান
নাট‍্যকার লেখক
আজিমপুর, লালবাগ,
ঢাকা-১২০৫.
২৫ মে, বুধবার, ২০২২খ্রিঃ

error: Content is protected !!