হোম » সাহিত্য » প্রবাসী মেয়ের সাথে বাবার দেখা বহুবছর পর-অতঃপর – ইতি

প্রবাসী মেয়ের সাথে বাবার দেখা বহুবছর পর-অতঃপর – ইতি

হুমায়ন কবির সুমনঃ নারায়ণগঞ্জের বাবা আলতাফ হোসেন আর মেয়ে বেলি আক্তারের করুন মৃত্যু।

বাবার সঙ্গে দেখা নেই বহুবছর। বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পরে মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন ছোট্ট বেলি আক্তার। এরপর সেখানেই পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা।

বাবাকে দেখার শখ, তাই ছুটিতে মাকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। উঠেছিলেন খালার বাসায়। বাবা আসবেন অপেক্ষা ছিল।

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বাবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। বাবার মুখটা দেখে কর্পূরের মত উবে গেছে বহু বছরের জমানো রাগ অনুরাগ । নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ার পথে রিক্সায় খুনসুটি আর বিস্ময়ে পিতা-কন্যার রসায়ন জমেছিল বেশ।

কিন্তু হঠাৎ একটি ট্রাক সব ওলট-পালট করে দিল। মেয়ের মাথাটা থেঁতলে দিয়ে সাঁই সাঁই করে চলে গেল ট্রাকটি। মেয়ের সঙ্গে এত বছর পর দেখা তাই হয়তো একা ছাড়েননি বাবা আলতাফ হোসেন। একই ট্রাকের চাকায় মহাকালের পথ ধরেছেন তিনিও।

এক নিমিষেই মানুষ থেকে লাশ। এরপর কেবল দিন তিনেকের শোক। মৃতদের কেউ মনে রাখেনা। সোনায় মুড়িয়ে রেখে গেলেও খুব কম মানুষই স্মরণ করবে। অনেকের কাছে মৃতরা কেবলই অতীত। অলাভজনক শোকে একমিনিট ব্যয় করতেও রাজি না।

বেঁচে থাকা খুব কঠিন। সবচেয়ে সহজ মারা যাওয়া। আমি আপনিও রাস্তায় চলাচল করি, এভাবেই একদিন সবাই শুনবে একটি লাশ বেড়ে গেছে। এরপর হয়তো পরিচিতজনদের ভাবনার জগতে ১০ সেকেন্ড সময় নিব তারপর অতীত।

জীবনটাকে রোবট বানিয়েছি আমরাই। অথচ এক সেকেন্ডের গ্যারান্টি নেই। ভেবে রেখেছি- এখন সম্পদ বানাই, শেষ বয়সে ভোগ করবো। কিন্তু ভাগ্যের লিখন সবসময় যে পক্ষে যায় না। মৃত্যুর সাথে সাথে সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ফ্যাসাদে দাফন-কাফনেই দেরি হবে অনেকের। অনেকের ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার কাছে সন্তানের দুটো হাতও উঠবেনা কোনদিন।

সম্পদের ভাগ কম পেয়েছে বলে আক্ষেপ থাকবে তাদের। সব জানি, সব বুঝি- তবুও সম্পদ বৃদ্ধির কতো ফন্দিফিকির।

error: Content is protected !!