হোম » প্রধান সংবাদ » মহান মে দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেসের র‍্যালী ও সমাবেশ

মহান মে দিবস উপলক্ষে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেসের র‍্যালী ও সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মহান মে দিবস-বিশ্বব্যাপী আজ দিনটি মহা সমারহে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি কারক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ২০০৬ সাল থেকে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে। আজও এরই ধারাবাহিকতায় কর্মস্থলে নারী শ্রামকের নিরাপত্তা, শ্রম আইন বাস্তবায়ন ও সম অধিকার, বাচাঁর মত যুগোপযোগি মজুরী, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি, নারী বান্ধব ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এর দাবীতে এই মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশন (SGSF) ও বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস (BLC)এর  আয়োজনে বিভিন্ন স্থানে বর্নাঢ্য র‍্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানগুলো হলো যথাক্রমেঃ  জাতীয় প্রেস ক্লাব- ঢাকা, বায়েজিদ বোস্তামী- চট্টগ্রাম, কালুরঘাট- চট্টগ্রাম।

সমাবেশে ১০ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকরা একত্রিত হন। তারা তাদের দাবীগুলো বলিষ্ঠ কন্ঠে উত্থাপন করেন।

দাবীগুলো হলো: 
* নিম্নতম মজুরী ২৩,০০০ টাকা করতে হবে।
* প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে।
* অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত কর এবং আই এল ও সনদ ১৮৯ অনুস্বাক্ষর কর।
* কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা রোধ করতে আই এল ও সনদ ১৯০ অনুস্বাক্ষর কর।
* সকল কারখানায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে এন্টি হ্যারেজম্যান্ট কমিটি গঠন কর।
* শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত কর।
* ব্যান্ড এ্যাকর্ড চুক্তি স্বাক্ষর কর ও প্রাইজরেট বৃদ্ধি কর।
* সকল শ্রমিকদের জন্য মৃত্যুভয়হীন নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত কর।
* ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে।
* বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালায় সন্নিবেশিত শ্রমিক স্বার্থ-বিরোধী বিধিসমূহ বাতিল পূর্বক নতুন বিধিমালা প্রনয়ন কর।

সমাবেশে শ্রমিক নেতা সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশন (SGSF) সভাপতি নাজমা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে রয়েছে শ্রমিকদের সক্রিয় ভুমিকা যা জাতির অগ্রগতির অন্যতম শক্তি। কিন্তু আমাদের দেশের শ্রমিকরা সবচেয়ে সস্তায় কাজ করে যাচ্ছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্যবৃদ্ধির কারনে তাদের জীবন যাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী, এছাড়া দুর্বল শ্রম আইনের কারনে শ্রমিকদের অধিকার অনেকক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে নারীরা একদিকে কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা, মজুরি বৈষম্য, মাতৃত্বকালীন ছুটি না পাওয়া, যথার্থ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ ও নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা না পাওয়াসহ নানাবিধ শোষণ-বঞ্চনার শিকার। দেশের পোশাক শিল্পসহ অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্র গুলোতে ও উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অংশগ্রহন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী নানা ভাবে মে দিবস মর্যাদার সহিত পালিত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আজও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি শ্রমিকদের অধিকার।

নাজমা আক্তার বলেন, শ্রমিকদের প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহন ও ক্ষমতায়নের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজন। এই ব্যাপারে মালিক শ্রেনী ও সরকারকে বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস (BLC) এর সভাপতি আবু  ইউসুফ মোল্লা বলেন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় পোশাকশিল্পের সকল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও যৌথ দর কষাকষির পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকেরা বিদেশে যেমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আবার দেশে এসেও সামাজিক বৈষমের শিকার হচ্ছে। এতে করে তাদের অধিকার ব্যাপকহারে লঙ্ঘন হচ্ছে। সেকারনে আমাদেরকে আরো সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন শ্রমিকদেরকে শ্রমিক হিসাবে নয় মানুষ হিসাবে দেখতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শ্রমিকদের উপর নানারকম নির্যাতন রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় পোশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং জাতি অনেক ক্ষতির সম্মুক্ষীন হবে। দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য।

র‍্যালী ও সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন সৈকত চৌধুরী, ঊর্মি আখতার, হালিমা, মারুফা, ইসমত জেরিন, তাসলিমা আফরোজা, ইয়াসমিন সুলতানা, ইমরান রহমান, আলি সম্প্রিতি, তমা,  কাজী তানজির, আরিফ, ইব্রাহিম, সাব্বির,মোহাম্মাদ আরমান,মামুন, তপু, সুমন, সালমান, সানজিদা, মিরাজ,হাকিম, লালচান, আশিদ, ফরিদ সহ সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন এলাকার ৭০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ প্রায় ১৫০০০ হাজার শ্রমিক ।

error: Content is protected !!