হোম » প্রধান সংবাদ » আগামী বাজেটে ভতু‌র্কির বরাদ্দ বেশি থাকবে

আগামী বাজেটে ভতু‌র্কির বরাদ্দ বেশি থাকবে

আওয়াজ অনলাইনঃ আগামী বাজেটে বাড়ছে ভতু‌র্কির চাপ, করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টালটামাল বিশ্ব অর্থনীতি। এ অবস্হায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সরবরাহ ব্যবস্থা অপ্রতুলতার কারণে সবগুলো দেশই সংকটে পড়েছে। এমন অবস্হায় বাংলাদেশের নতুন বছরের বাজেট দিতে হচ্ছে।

আগামী ৯ জুন এই বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্হাপন করা হবে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এই বাজেটে ভতু‌র্কি বাবদ বেশি বরাদ্দ থাকবে। যাতে বাড়তি ব্যয় মেটানো যায়। বিশেষত প্রণোদনা, নগদ ঋণ ও কৃষি, খাদ্য খাতে ভতু‌র্কির পরিমাণ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলার উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। এতে করে বাজেটের আকার বাড়বে এবং সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণের পরিমাণও বাড়বে। সে কারণে প্রায় বাড়তি ১ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবস্হা থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যস্হির করা হয়েছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ভতু‌র্কি, প্রণোদনা এবং নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ থাকলেও সংশোধনের মাধ্যমে এর পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাতে মোট বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে সরকার যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমে আসে সেক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ কমে আসবে।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে খাদ্য ভতু‌র্কি বাবদ মোট ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা লাগতে পারে। খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বিতরণে এ ভতু‌র্কির প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে ভতু‌র্কিতে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে।

অন্যদিকে অর্থ বিভাগ বলছে, মূল্য সমন্বয় করা না হলে আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভতু‌র্কি বাবদ ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভতু‌র্কি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

একইভাবে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করা না হলে এলএনজি আমদানি মূল্য পরিশোধ ও প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ভর্তুকি দেওয়ার জন্য ১৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সারের মূল্য সমন্বয় করা না হলে কৃষি প্রণোদনা খাতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। চ

লতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সামগ্রিকভাবে আগামী অর্থবছরে ভতু‌র্কি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, খাদ্য, বিদু্যত্, গ্যাস ও কৃষি খাতের বাইরে সরকার রপ্তানি, রেমিট্যান্স, পাট, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া ঋণের সুদ, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় চালু করা বিভিন্ন প্যাকেজে প্রণোদনা, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। করোনা-পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে খাদ্যপণ্য ও সারের দামও বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আরেক দফা বেড়েছে পণ্যের দাম। তাছাড়া পণ্য পরিবহন খরচও কয়েক গুণ বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আসছে বাজেটে কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ, উদ্ভূত বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটজনিত কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাজেকসমূহের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করা, খাদ্য উত্পাদন বাড়াতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ও বীজে প্রণোদনা, কৃষি পুনর্বাসন, সারে ভতু‌র্কি অব্যাহত রাখা হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ, নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্প মূল্যে, বিনা মূল্যে খাদ্য বিতরণ, ব্যাপক কর্মসৃজনের কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে পাঁচ শতাংশে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়বে। ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। মূলত বাড়তি ভতু‌র্কি ব্যয়ের চাপ মেটাতে এই ঋণ করতে হবে।

সূত্র -ইত্তেফাক

error: Content is protected !!