হোম » আন্তর্জাতিক » ইরানে হামলা চালানোর ইঙ্গিত ইসরায়েলের

ইরানে হামলা চালানোর ইঙ্গিত ইসরায়েলের

আওয়াজ অনলাইন : ইসরায়েল উত্তর গাজায় নিজেদের অভিযান প্রায় শেষ করে এনেছে। বর্তমানে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় অভিযানের পরিধি ও মাত্রা বাড়াচ্ছ। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ইসরারেলি হামলায় গাজার এ দুই অঞ্চলে আরও ২৪১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩৮২ জন।  

যুদ্ধের এ পর্যায়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট নিজেদের পার্লামেন্টে বলেছেন, আমারা সাতটি থিয়েটার (যুদ্ধ সেক্টর বা অঞ্চল) থেকে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের ওপর গাজা, লেবানন, সিরিয়া, পশ্চিম তীর, ইরাক, ইয়েমেন ও ইরান থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ছয়টি থিয়েটারে পাল্টা হামলা চালিয়েছি। প্রয়োজনে যে কোনো থিয়েটারে আমরা হামলা চালাবে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে ছয়টি দেশ বা থিয়েটারের কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে শুধু ইরান ছাড়া বাকি সব দেশে রোজ হামলা চালাচ্ছে দেশটি। তার কথা ইঙ্গিত দেয়, দরকার মনে করলে তারা যে কোনো সময় ইরানেও হামলা চালাবে। ইসরায়েল ইরান আক্রমণ করলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে তা কল্পনা করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

একই দিন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের (আইএইএ) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিরি বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেছেন, ইরান দ্রুত গতিতে উন্নত মানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি বাড়িয়েছে। দেশটির সহায়তাপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তৎপরতা বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইরানে উন্নত মানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি আত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।

মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ১০ ঘণ্টায় দক্ষিণ লোহিত সাগরে ১০টি ড্রোন, তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও দুইটি ক্রস ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত হানার আগে ধ্বংস করা হয়েছে। এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের সহায়তাপুষ্ট হুথি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছে সেন্টকম।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের একটি সমুদ্রবন্দরে ড্রোন হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতিরা। একই সঙ্গে লোহিত সাগরে ইসরায়েলের একটি বাণিজ্যিক জাহাজেও হামলা চালানোর দাবি করেছে ইরানের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরু হওয়ার পর থেকে লোহিত সাগর, আরব সাগরে এ ধরনের হামলা বাড়িয়েছে হুথিরা। গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধোর জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করতে এসব হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। এসব হামলার পেছনে ইরানের সরাসরি হাত রয়েছে বলে একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২৩ ডিসেম্বর গুজরাট উপকূলে ইসরায়েলের মালিকানাধীন লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এমভি ক্যাম প্লুটো নামের একটি জাহাজে ড্রোন হামলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান থেকেই এ হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু ইরান এ দাবি ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছে।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় আরব সাগরের মুম্বাই উপকূলে সোমবার তিনটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত। ক্যাম প্লুটোয় হামলাকারীদের প্রয়োজনে সমুদ্রের তলা থেকে খুঁজে বের করা হবে বলে বুধবার হুঁশিয়ার করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।

যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত হুতি বিদ্রোহীরা ৩৫টিরও বেশি দেশের সঙ্গে জড়িত ১০টি বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্য করে ১০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। অধিকাংশ হামলা প্রতিরোধ করা সম্ভব হলেও কিছু ড্রোন তাদের লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

লোহিত সাগরে হুতির হামলা মোকাবিলায় সম্প্রতি ১০ দেশ নিয়ে একটি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জোটে বাহরাইন ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের আর কোনো দেশ যোগ দেয়নি। অন্যদিকে স্পেনসহ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশ এ ধরনের জোট মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

গাজা হামলার এ পর্যায়ে মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি এক টেলিভিশন বক্তৃতায় বলেছেন, আমাদের হাতে কোনো জাদুর কাঠি নেই। হামাসের মতো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিমূর্ল করার শর্টকার্ট কোনো পথ নেই। এ জন্য আমাদের দৃঢ়তার সঙ্গে অবিরাম হামলা চালিয়ে যেতে হবে। আমারা হামাসের শীর্ষ নেতাদের পাকড়াও না করে ক্ষান্ত হবো না। এ জন্য আর কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারির সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মনোভাবও মিলিয়ে পড়া যায়। সোমবার নেতানিয়াহু গাজা সফর শেষে যে মন্তব্য করেছেন তা পরিস্থিতি দীর্ঘতর ও জটিলতর হওয়ারই ইঙ্গিত দেয়।

গাজা থেকে ইসরায়েলে ফেরার পর নিজ দল লিকুদ পার্টির সদস্যদের নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে নির্মূল না করে আমরা থামব না। বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে আমরা যুদ্ধ শেষ করতে যাচ্ছি। আমি তাদের বলতে চাই, আমরা থামছি না। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যুদ্ধ চলবে। আমাদের সেনারাও আমাকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে সোমবার একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছেন নেতানিয়াহু। এতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনটি লক্ষ্য অর্জনের কথা বলেছেন তিনি। লক্ষ্যগুলো হলো হামাসকে ধ্বংস করতে হবে। গাজাকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করতে হবে। ফিলিস্তিনি সমাজের প্রতিরোধ-প্রতিবাদ ধ্বংস করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এসব লক্ষ্যের কোনটাই অর্জন করা সম্ভব নয়। সমস্যার মূলে তথা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উপেক্ষা করে এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করলে যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে ইরান হয়তো সরাসরি যুদ্ধ জড়াবে না। কিন্তু ইরানের সহায়তাপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এসব যুদ্ধে অংশ নেবে। এখন যেভাবে হামলা চালাচ্ছে আগামীতে তা আরও বৃদ্ধি পাবে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯১৫ জন। নিহতদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু। একই সময়ে আহত হয়েছে ৫৫ হাজারের বেশি। একই সময়ে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছে ৩০০ জনের বেশি।

গাজার ২৩ লাখের মধ্যে ১৮ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়েছে।

Loading

error: Content is protected !!