হোম » স্বাস্থ্য-লাইফস্টাইল » মশার সাম্যবাদ

মশার সাম্যবাদ

রুহুল আমিনঃ সাম্যতা, সমতা, সমাজতন্ত্র একসময় যথেষ্ট বেশি আলোচিত হতো। বন্দুকের নলই স্বাধীনতা বা গ্রাম থেকে শহর ঘেরাও ইত্যাদি অনেক ধরনের রনকৌশলের কথায় আকৃষ্ট হয়ে জীবনের সুবর্ণ সময় পাড় করে দিয়েছে অনেক অনেক টগবগে তাজা তরুণ তরুণী।

কালের আবর্তে হারিয়ে যাওয়ার মতো সেসব স্বরনালী দিনগুলো শেষ হয়েছে অনেক অনেক আগে। তুখুর সমাজতন্ত্রীকে পরবর্তীতে দেখা গেল পূঁজিবাদী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হয়ে জীবন ধারা পাল্টিয়ে এসব বলতে যে “ওগুলো বিয়ের আগের রাজনীতি” সাম্যবাদ আর সমাজতন্ত্র মনের কোনে রাখা আছে উচুঁ দেয়ালের কোনায় ঝুলন্ত বা লেগে থাকা ধুলি-ময়লার মতো।

এসব দিক দিয়ে মশার তুলনা হয়না। জন্মলগ্ন থেকেই তারা এক ও অভিন্ন সাম্যবাদী নীতি আদর্শের প্রতি আস্থা রেখে তাদের কর্মযঙ্ঘ চালিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। রক্ত আহরনের ক্ষেত্রে তারা গ্রামের কৃষক, শহুরে দারিদ্র্য বা অভিজাত এলাকার বাসিন্দা কারো প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করেন না। আমরা বলি মশায় কামড়ায় কিন্তু আসলে মশা কি কামড়ায়? মশা মানুষ বা জীব জানোয়ারের শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয় তার নিজের জীবন চক্র চালু রাখার জন্য। এখানেও পুঁজিপতি বা বিত্তশালী বিত্তবানদের প্রচন্ড বাঁধা। মশা সহজেই তাদের কাছে ঘেঁষতে পারে না। তারা যেখানে বসবাস করেন, অফিস করেন, বেড়াতে যান সব জায়গাতেই মশাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। দু’একটা কোনভাবে প্রবেশ করতে পারলেও আক্রমণ করার আগেই তাদের হত্যা করা হয়।

একটা গল্প মনে পরে, আমাদের এক বন্ধু (মিঃ শাহনেওয়াজ, বর্তমানে ব্যবসায়ী) একটি বেসরকারী কলেজে (হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ) শিক্ষকতা করেন আর সমাজ বদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কোথায় ঘর, কোথায় বাসা, বিশ্রাম ঘুম চিত্ত বিনোদন সব ভুলে গেছেন। একদিন রাত ১২টার পরে আরেক বন্ধু যিনি সস্ত্রীক বসবাস করেন তার বাসায় হাজির। তো বন্ধুটি বললেন দোস্ত তুই এতো রাতে আসছস কি করি ভাত চারটা আছে কিন্ত সবজি তরকারি ———- বন্ধুটি বাধা দিয়ে বললেন আরে কোন সমস্যা নেই নুন ভাত হলেও চলে যাবে। এ পর্ব শেষে সংসারী বন্ধু বললেন ঘুমানোর জন্য আমার এঘরটা আছে কিন্তু এতো মশা আমার এক্সট্রা মশারি নেই। আগত বিপ্লবী বন্ধুর সে কি আহ্লাদ আরে কোন ব্যাপার না মশা সব সময় সবাইকে কামরায় না। রাতের যে সময়টা বাকি আছে সে সময়ে মশা আমাকে পাবে না। আসল কথা হলো মশা ওনাকে পাবে কিভাবে, কয়েক রাতের নির্ঘুম মানুষ ঘুমাতে পারলে মশা কামরাল না সাপে কামরাল টের পাওয়ার কথা নয়।

মশা তার সাম্যবাদী নীতিতে আস্থা রাখলেও পূঁজিপতি ও বিত্তবানদের ওপর তারা তাঁদের নীতি আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। যারা মশার মতো ক্ষুদ্র প্রাণীকে কাছে ঘেষতে দেননা তাদের ধারে কাছে কি করে ক্ষুধার্ত নিরন্ন মানুষের দল পৌঁছাবে। সরকারের লকডাউনের খেলা চলবে, দেশের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীরা বলবে আপনারা ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন। চুপি চুপি বলি আপনার ঘরে চাল না থাকুক মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের বেতনটা একাউন্টে চলে আসে যা বন্ধ হয়নি বা বকেয়া পরেনি গত ৫০ বছরে এক মাসের জন্যও নয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু যখন ভিক্ষা করে আনতেন তখনো ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেটেও তাদের বেতন ভাতার নিশ্চয়তা ছিল।

error: Content is protected !!