হোম » শিরোনাম » শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য “ন্যূনতম মজুরী ২৩,০০০ করতে হবে – নাজমা আক্তার

শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য “ন্যূনতম মজুরী ২৩,০০০ করতে হবে – নাজমা আক্তার

নিজস্ব প্রতিনিধঃ সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন জাতীয় প্রেস ক্লাবএর সামনে এক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন,  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তৈরি পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি কারক শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ২০০৬ সাল থেকে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে আসছে। তাদের ন্যূনতম মজুরী ২৩,০০০/- টাকার দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার। নাজমা আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, দেশের পোশাক শিল্পের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য রয়েছে শ্রমিকদের সক্রিয় ভুমিকা যা দেশের ও শিল্পের অগ্রগতির অন্যতম চালিকা শক্তি। পোশাক শিল্প বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ রপ্তানিমুখি শিল্প। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা অনেক নিম্ন মজুরীতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে।

নাজমা আক্তার বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারনে তাদের জীবন যাত্রার মান একেবারেই নিম্নমুখী। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর সঠিক বাস্তবায়ন না থাকার কারনে শ্রমিকদের অধিকার প্রায় ক্ষেত্রেই লঙ্ঘিত হচ্ছে। বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েই চলেছে, যার কারনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা। এই শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য “ন্যূনতম মজুরী ২৩,০০০ টাকা নির্ধানের দাবীতে আজকের এই মানববন্ধন ও সমাবেশ।

নাজমা আক্তার আরো বলেন, বিগত ৫ বছরে আমরা দেখতে পাই যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ, বাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, চিকিৎসা, শিক্ষা সহ আরো অন্যান্য খরচ আকাশচুম্বি হারে বৃদ্ধি পয়েছে। যার ফলে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার চরম আকারে ব্যহত হচ্ছে। তাই এই সমাবেশ থেকে আমাদের জোরদাবী, শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও পরিবার পরিজনের মৌলিক চাহিদা পূরন ও জীবনযাপন উন্নয়ন করার জন্য ২৩,০০০/- টাকা ন্যূনতম মজুরী অবিলম্বে ঘোষনা করা হোক।

বাংলাদেশ লেবার কংগ্রেস (BLC) এর সভাপতি আবু ইউসুফ মোল্লা বলেন, নিম্নতম মজুরি কাঠামোর নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর শ্রমিকের মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করেন মালিকেরা। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার মান টাকায় বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন গত ৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।

মোল্লা বলেন, গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তাতে জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এদিকে গত ৬ আগস্ট’২২ থেকে জ্বালানি তেলের দাম ৪২-৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তারপর নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম দফায় দফায় বেড়েছে।

বিগত ঘোষিত পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের জন্য ২০১৩ সালের নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরী ৫,৩০০/- পাঁচ হাজার তিনশত টাকা ও ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ন্যূনতম মজুরী –৮,০০০/- আট হাজার টাকা নির্ধারন করা হয়। যদিও শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ১৬,০০০/- ষোল হাজার টাকা ও ২০১৮ সালে ২০,০০০/- বিশ হাজার টাকা দাবী করা হয়েছিল।

যদিও শ্রমিকরা দাবি করেছিল যে, এই বর্ধিত মজুরী চলমান জীবনযাত্রার খরচ মেটানোর জন্য খুবই কষ্টকর। কারন প্রতিনিয়ত যেভাবে দ্রব্যমুল্যের দাম উর্দ্ধগতি হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে মজুরী বৃদ্ধি না হওয়ার কারনে শ্রমিকদের পরিবার পরিজন নিয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অসাধ্যকর হয়ে পড়ে।

সমাবেশে সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক খাদিজা আক্তার বলেন, শ্রমিকদের বর্তমানে প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে ৮০০০/- আট হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরী দিয়ে শ্রমিকদের পরিবার পরিজন কে নিয়ে দূর্বিসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ন জীবনমানের কথা বিবেচনা করে অনতিবিলম্বে ২৩০০০/- তেইশ হাজার টাকা মজুরী র্নিধারনের জন্য সরকারের নিকট জোরদাবী জানান।

 

মানববন্ধন ও সমাবেশ অন্যান্য বক্তারা বলেন, যেখানে দেশ ও শিল্পের উন্নয়নের জন্য সবচাইতে বড় অবদান রাখছেন পোশাক শিল্পের শ্রমিক, সেখানে এই শ্রমিকরা সকল ক্ষেত্রেই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বিবেচনা করে উক্ত শ্রমিকদের মর্যাদার্পূণ জীবনের কথা চিন্তা করে অবিলেম্বে ২৩০০০/- হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরী র্নিধারণ করা হোক।

 

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন যুগ্ন সাধারন সম্পাদক উর্মি আক্তার, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন প্রচার সম্পাদক ইয়াহিয়া খান, হোপলোন এ্যাপারেলস লিঃ সম্মিলিত শ্রমিক ইউনয়ন সাধানর সম্পাদক হালিমা বেগম, লিলি বেগম চেয়ারম্যান আর এমজি ওর্য়াকাস ফোরাম, জলি আক্তার ফাউন্টেন গার্মেন্টস মেনুফেকচারিং কোঃ লিঃ সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন, নাজমা আক্তার, সভাপতি ন্যাচারেল ডেনিমস লিঃ সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন সহ উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন সৈকত চৌধুরী, ঊর্মি আখতার, হালিমা, মারুফা, ইসমত জেরিন, তাসলিমা আফরোজা, ইয়াসমিন সুলতানা, ইমরান রহমান, আলি সম্প্রিতি, তমা,  কাজী তানজির, আরিফ, ইব্রাহিম, সাব্বির,মোহাম্মাদ আরমান,মামুন, তপু, সুমন, সালমান, সানজিদা, মিরাজ,হাকিম, লালচান, আশিদ, ফরিদ সহ সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ ও বিভিন্ন এলাকার ৭০টি ইউনিয়নের নেত্রীবৃন্দ।

মানববন্ধন ও সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়  বিভিন্ন ৭০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রমিকনেত্রীবৃন্দ ।

error: Content is protected !!