হোম » শিরোনাম » ঝিনাইদহে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল নানান ঘটনাবলী

ঝিনাইদহে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল নানান ঘটনাবলী

মোস্তফা জলিল,ঝিনাইদহ:  বিদায়ী বছরে ঝিনাইদহের সবচে আলোচিত ঘটনা ছিল করোনা মহামারি ও এক হিজড়া ব্যক্তির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায়। এছাড়া আলোচনার বিষয় ছিল সীমান্তে অবৈধ পারাপার, ব্যাপক মাদক কারবার, বছর জুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা আর ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘাত। ছিল হত্যা, হামলা, মামলা, ভাঙচুরের মতো ঘটনা। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শৈলকুপা উপজেলা। ঝিনাইদহে বছরের প্রথম আলোচিত ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি। এই দিন শৈলকুপার মদনডাঙ্গা এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলমসাধুর (থ্রি-হুইলার) ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছয়জন নির্মাণ শ্রমিক। একই সময় চলছিল শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচন।

সেদিন রাতে ১০টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ছোট ভাই। দিনগত রাত ২টার দিকে প্রতিপক্ষ আলমগীর খান বাবুর মরদেহ শৈলকুপার কুমার নদ থেকে উদ্ধার করা হয়। ১০ ফেব্রæয়ারি কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে বারবাজার তেলপাম্প এলাকায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১২ জন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগ মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী। মার্চ মাসজুড়ে বড় কোনো আলোচিত ঘটনা না ঘটলেও ছিল হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের খবর। ছিল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার ঘটনা। এপ্রিলের শুরুতেই আলোচনায় ছিল শৈলকুপার আউশিয়া প্রামের ক্ষীর্ণকায় এক নারী ও পুরুষের বিয়ের খবর। ৩০ বছর বয়সী ৪০ ইঞ্চি উচ্চতার ছেলে আর ১৮ বছর বয়সী ৪২ ইঞ্চি উচ্চতার দু’জনের বিয়ের ঘটনা ছিল বেশ আলোচিত।

আবার তাদের বিচ্ছেদের খবরটিও দেশে ভাইরাল হয়। ওই মাসেই শৈলকুপায় ঘটে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাইয়ের হাতে ভাই খুনের ঘটনা। ধর্ষণের শিকার হয় এক প্রতিবন্ধী নারী। আর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন। মে মাসে আলোচনায় ছিল সড়ক দুর্ঘটনা আর ভারত সীমান্ত থেকে অবৈধ পারাপারের ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কলেজ ছাত্রসহ চারজন, আহত হন সংসদ সদস্যও। হত্যার ঘটনাও ঘটে কয়েকটা। জুলাই মাসে আবারও চোখ রাঙাতে শুরু করে মহামারি করোনা। ১৫ দিনে করোনায় মৃত্যুবরণ করে অর্ধশত মানুষ। মাসজুড়ে ছিল হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মতো ঘটনাও। অক্টোবরের শুরুতেই আলোচনায় ছিল ঝিনাইদহ আদালতের মালখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা। মালখানায় বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এক নির্মাণ শ্রমিকের দেহ। ওই ঘটনায় আহত হন আরও তিনজন। এছাড়াও শৈলকুপাতে ঘটে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ।

শৈলকুপা উপজেলার কামান্না ও বারইহুদা গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হন। সেসময় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ৩০টি বাড়িঘর। পরের মাসে নির্বাচন শুরু হলে আলোচনায় আসে জেলার মহেশপুর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। বিশেষ করে আলোচনার জন্ম দেয় কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতুর নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচনী আমেজের মাঝেও বাড়তি আমেজ ছিল ওই ইউনিয়নে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম সানাকে দ্বিগুণ ভোটে হারিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও আলোচনায় ছিল ডায়রিয়ার প্রকোপ। শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড তিন দিনের ব্যবধানে প্রায় ৩০০ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন।

কয়েকদিনের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে পড়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। ১৫ দিনে আক্রান্ত হয় দেড় হাজারের বেশি মানুষ। চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে আবারো আলোচনায় আসে শৈলকুপা। এ উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর, দিগনগর ইউনিয়নের শুরু হয় হামলা, পাল্টা হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও লুটপাট। একইসঙ্গে জেলা সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের টিকারী বাজারে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। সংঘর্ষের দৃশ্য দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক মেম্বর প্রার্থীর মৃত্যু ঘটে। আহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় ১০টি মোটরসাইকেল, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় অন্তত ৪৫টি বাড়িঘর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে খুলনা থেকে আনা হয় পুলিশ সদস্যদের। অসময়ে বৃষ্টিপাত জেলা জুড়ে কৃষকদের দুর্ভোগে ফেলে। মাঠের ধান নিয়ে কৃষককুল হাফিয়ে ওঠে।

তাছাড়া অনেক ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৬ ডিসম্বের ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবির ঘটনা আলোচনার মাত্রা যোগ করে। নির্বাচনে ১০টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করে। নৌকা প্রতিক নিয়ে পাশ করেন ৫ জন। তাছাড়া বছরজুড়ে ছিল সংঘর্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনার মাঝেও ঘটেছে ভালো কিছু ঘটনা। ভালো খবরের মধ্যে জেলা জুড়ে ইউনিয়ন পরিষদের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাছাড়া ১২৩ ফুট উচ্চতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করে ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন কালীগঞ্জের ডা. রাশেদ শমসের। বছরের মাঝামাঝিতে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখার পরও শেষ সময়ে মৃত্যু শূন্য ছিল এ জেলায়।

error: Content is protected !!