হোম » শিরোনাম » এক রাতের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে রংপুর নগরীর নিম্নাঞ্চল

এক রাতের বৃষ্টিতেই তলিয়ে গেছে রংপুর নগরীর নিম্নাঞ্চল

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুরঃ  এক রাতের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রংপুর মহানগরীর নি¤œাঞ্চল। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের দেড় শতাধিক পাড়া মহল্লার অলিগলি ও রাস্তাঘাটে বৃষ্টিতে পানি উঠেছে। অন্যদিকে নগরীর প্রাণ কেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরি ও কেডি খালেও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেকস্থানে মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন।

নগরবাসীর অভিযোগ, শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল ও কেডি খাল ঠিকমতো ড্রেজিং না করাসহ অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে একটু ভারী বৃষ্টিপাত জনগণকে এই ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারা দ্রæত এই সমস্যার সমাধান চান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের মতো নগরীর নিচু এলাকাগুলো এখন পানিতে থইথই। কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু সমান আবার কোথাও কোমর সমান পানি। নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থান এলাকা, মুলাটোল, বাবুখাঁ, বড়বাড়ি , আর্দশপাড়া,আলমনগর,নুরপুর,জুম্মাপাড়া, শালবন মিস্ত্রিপাড়া, কুকরুল, খটখটিয়া, বুড়িরহাট, উত্তম মনোহরপুর, আদর্শপাড়া, কামারপাড়া, বাবুখাঁ, কামাল কাছনা, বাহার কাছনা, হাজীপাড়া, গুলাল বুদাই, মাহিগঞ্জ, বোতলা, খাসবাগ, নামাদোলা, বালাটারি, নাছনিয়া, মুলাটোল, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, খলিফাপাড়া, নগর মীরগঞ্জ, তামপাট, সর্দারপাড়া, আশরতপুর, সাজাপুর, কোর্টপাড়া, ঘাঘটপাড়া, মাসুয়াপাড়া, লক্ষণপাড়া, হোসেন বাজার, মেকুড়া, হাবিবনগর মাষ্টারপাড়া, আশরতপুর ঈদগাহপাড়াসহ প্রায় দেড় শতাধিকের মতো পাড়া-মহল্লায় বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এতে ওই সব এলাকায় হাঁটু সমান জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি কমে না আসাতে এখনও কিছু কিছু এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে আছে। এতে অনেকের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে।

এদিকে রাস্তাঘাট-দোকানপাট ও ঘরে পানি উঠায় মানুষের দিন শুরু হয়েছে দুর্ভোগে। অনেক রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে গতকাল রবিবার সকাল ৯ থেকে আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক রাতেই সাড়ে ৩৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যা ছিল গত একশ বছরের রেকর্ড।

নগরীর সেনপাড়া এলাকার মেজবাহুল মোকাররবিন জানান, রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে তার বাড়ি সংলগ্ন শ্যামা সুন্দরী এখন পানিতে ভরপুর। বৃষ্টির পানি তাদের ঘরে ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই অবস্থা তার বাড়ির আশেপাশের অর্ধশতাধিক বাড়ির। এই অবস্থায় অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারছে না।

অন্যদিকে নগরীর মুলাটোল এলাকার মনিরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য এখনও পর্যাপ্ত ড্রেন তৈরি হয়নি। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট খালগুলো ভরাট আর দখলদারিত্বের কবলে পড়ায় বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ির আশপাশসহ নগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, যেসব এলাকায় পানি উঠেছে তা নগরীর নিচু এলাকা। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলরদের নির্দেশ দিয়েছি পানিবন্দি মানুষজনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং পাশে দাড়ানোর জন্য।

এ ব্যাপারে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিনে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবার মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে।

error: Content is protected !!