হোম » অর্থনীতি » বোতলে ২শ টাকা লিটার, বাজার থেকে উধাও খোলা সয়াবিন

বোতলে ২শ টাকা লিটার, বাজার থেকে উধাও খোলা সয়াবিন

ভোগ্যপণ্যের মূল্য কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আলু, পেঁয়াজ, চিনিসহ প্রায় সব পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখী হলেও ভোজ্যতেল নিয়ে রীতিমতো বেসামাল অবস্থা।

খুচরা বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। অনেকেই আবার সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ফিরেও গেছেন। খোলা সয়াবিন তেল তো বাজার থেকে উধাও।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশে এখন বিপুল পরিমাণ তেল আছে। খোলা তেলও রয়েছে। কিন্তু বাজারে বিক্রেতারা খোলা তেল সরিয়ে রেখেছে। কে কোথায় সরিয়েছে, তার তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা দ্রুত অভিযান পরিচালনা করব। সেই মজুত করা খোলা তেল আমরা বাজারে সরবরাহ করব। পাশাপাশি অসাধুদের আইনের আওতায় আনব। সেক্ষেত্রে আমরা এবার জেলেও পাঠাব। ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছি। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

গত বুধবার রাত থেকেই খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেল। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে ক্রেতাকে ২০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। খোলা সয়াবিন তো মিলছেই না।
এদিকে চালের বাজারও বাড়তি। এক কেজি চাল কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। চিনির কেজিও ৮০ টাকার উপরে। সরবরাহ ভালো থাকলেও পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। গরুর মাংস দেড় মাস আগে ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৬৬০ টাকায়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবার দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ দাম বেড়েছে, পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।

খোলা পামঅয়েল লিটার প্রতি ১৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ দাম বেড়েছে। পাম অয়েল সুপারে লিটারে দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পাশাপাশি মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি আলু কিনতে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ শতাংশ বেড়েছে। গরুর মাংস কিনতে ক্রেতার ৩ দশমিক ৩৯ ও ব্রয়লার মুরগি কিনতে ক্রেতার ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

পাশাপাশি চিনি কেজি প্রতি ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ দাম বেড়েছে। খোলা সয়াবিন নিয়ে টিসিবির বাজার পণ্য মূল্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার তারা রাজধানীর খুচরা বাজারে খোলা তেল পায়নি। তাই তারা দামও উল্লেখ করতে পারেনি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম কমই বৃদ্ধি করে। রমজান আসার আগেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাড়তি দরে ক্রেতার হাসফাঁস অবস্থা। সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। আবার কিছু পণ্যের দর কারসাজিতে বেড়েছে। আমাদের অনেক পণ্য আছে যা আমদানির মাধ্যমে চাহিদা মেটাতে হয়। সে সব পণ্যের দামও বেশি। তাই দাম কমাতে আমদানি পণ্যের শুল্ক কমাতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় পণ্যের মজুত অনেক। পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। অসাধু ব্যবসায়ীকে সুযোগ নিতে দেওয়া হবে না। সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে ছিল ১৫০ ও ১৬৮ টাকা। প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৬৫ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এক মাস আগে ছিল ১১০-১১৫ টাকা।

আলু প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২২-২৪ টাকা, এক মাস আগে ছিল ১৮ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৮০-৮২ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৭৫-৭৮ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৬৬০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৬০০ টাকা। আর প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি মাসের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

error: Content is protected !!