হোম » অপরাধ-দুর্নীতি » ধুনটে জমে উঠেছে অনলাইন ক্যাসিনো জুয়া, শিক্ষার্থীসহ নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে

ধুনটে জমে উঠেছে অনলাইন ক্যাসিনো জুয়া, শিক্ষার্থীসহ নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে

এম এ রাশেদ: অনলাইন ক্যাসিনো বা জুয়া একটি আতঙ্কের নাম। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম এ জুয়ায় আকৃষ্ট হচ্ছে। লোভে পড়ে হাজার হাজার টাকার বিনিয়োগের এক পর্যায়ে হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বগুড়ার ধুনট উপজেলার পৌরসভা এলাকা সহ ১০টি ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকার স্কুল পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, চাকুরিজীবি,ব্যবসায়ীসহ অনেকেই অনলাইন ক্যাসিনো নামের জুয়ায় মত্ত।

উপজেলার জুয়ারিরা ওয়ান এক্স বিট এবং লাইন এক্স বিট এ দুটি অনলাইন জুয়ায় সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট ও আসক্ত। খেলায় এতটাই আসক্ত যে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাজারেই আড্ডার আড়ালে চলে রমরমা অনলাইন ক্যাসিনো নামের জুয়া। অনেকে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে বেছে নিচ্ছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো মারাত্বক অপরাধ। যার কারনে সমাজে বিরাজ করছে এক ধরনের দুঃশ্চিন্তা ও অস্থিরতা।

অনলাইন জুয়ায় টাকা পয়সা নষ্ট করে পারিবারিকভাবে অশান্তিতেও ভুগছে অনেকে। বাড়ছে পারিবারিক কলহসহ নারী নির্যাতনের মত ভয়াবহ অপরাধ। সব মিলিয়ে চরম বিপদগামী হচ্ছে আসক্তরা। অন্ধকারে ঢেকে আসছে সমাজ ব্যববস্থা। অনলাইনে ক্রিকেট খেলার বিপিএল, এপিএল নিয়ে উইকেট বাজি, ফুটবলের নানা ধরনেে লীগ ম্যাচের উপর গোলের বাজি তো আছেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এই অনলাইন ক্যাসিনো নামের জুয়া। তবে এসব ক্যাসিনোর মালিক কে বা কারা সেটা সবারই অজানা থাকলেও চলছে হাজার হাজার টাকা বাজি। জুয়ার বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার  ও ক্যাসিনো খেলার নিয়ম ফেসবুক পেজ, ইউটিউবসহ নানা সাইডে বিজ্ঞাপন আকারে ভাসতে দেখা যায়।

টাকার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্য হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। চাওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বয়স, জন্ম তারিখ ও মোবাইল ফোন নম্বর। এসব তথ্য দিলেই  জুয়ার গ্রুপে মেলে সদস্য হওয়ার অনুমতি। এক তথ্যে জানা যায় জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশই পরিচালনা করা হয় রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে।

বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগের বিপরিতে বিদেশে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের চা ষ্টলে, গুদাম ঘরে, প্রতিষ্ঠানের ছাদে, খোলা মাঠে এমন কি বড়িতে শুয়ে শুয়ে চলছে ক্যাসিনো জুয়ার আসর। মাদকের চেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার আনাচে কানাচে।

এখনই যদি এটা পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে প্রতিহত করা না হয় তাহলে অচিরেই ঘোর অন্ধকারে ঢেকে যাবে ভবিষ্যত জীবনের উজ্বল নক্ষত্র। উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের বাজার কেন্দ্রীক নিরিবিলি স্থান, চা ষ্টল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ, ফাঁকা ক্লাস রুম ও নদীর চর গুলোতে এ জুয়া খেলার বিশেষ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে ডিজিটাল ক্যাসিনো জুয়ারীরা।

এসব জুয়া বন্ধে প্রশাসনের জোড় নজরদারি কামনা করে স্থানীয় সুশীল বিশিষ্ট জনেরা। উপজেলা জুড়ে অনলাইন ক্যাসিনো বন্ধে বা ক্যাসিনো জুয়ারীদের বিরুদ্ধে তথ্যের অভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারছেনা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের।

অথচ এসকল সামাজিক অপরাধ নির্মুলের জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে রয়েছে বিট পুলিশিং কমিটি। কমিটির কার্যালয় ও সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার অনেকটাই বাজার কেন্দ্রীক। ওই সকল সদস্যরাও অনলাইন জুয়ার দৃশ্য দেখেও কোন পদক্ষেপ নেয়না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই সংবাদ কর্মীদের কাছে মত প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, ধুনটে অনলাইন ক্যাসিনো বা জুয়া সম্পর্কে আমি অবগত নই। দৃশ্যমান জুয়ার চেয়ে অনলাইন জুয়া খেলা সনাক্ত করা অনেকটাই জটিল।

এ জুয়া সম্পর্কে এখন পর্যন্ত থানা পুলিশকে কেউ তথ্য দেয়নি। সঠিক তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেও তিনি জানান।

error: Content is protected !!