হোম » সারাদেশ » অধিক লাভের আশায় কালাইয়ে চাষিরা ভুট্টা চাষ করছেন।

অধিক লাভের আশায় কালাইয়ে চাষিরা ভুট্টা চাষ করছেন।

মোঃ তারিকুল ইসলাম: অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টার চাষে অধিক লাভ এবং ফলন বেশি, খরচ ও সময় কম লাগে ও ভালো বাজারমূল্য পাওয়া যায় বলে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে কালাই উপজেলার অধিকাংশ কৃষক। এক বিঘা জমিতে ২২ হাজার টাকা খরচ করে ভুট্টা পাওয়া যায় ৩৫ মণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫০ হাজার টাকা।আর আবহাওয়া ও জমি চাষের অধিক উপযোগী হওয়ায় এই উপজেলাতে ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন ও জিন্দারপুর ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ হয়েছে। মাঠের কিছু কিছু জমিতে ভুট্টারখেত। সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। খেতগুলোতে পানি ও কীটনাশক দেওয়া এবং পরিচর্যায় কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। খেতগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি কিছু নারীদেরও কাজ করতে দেখা যায়।
মাত্রাই ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি বাদশা মিয়া বলেন, ‘ভুট্টা চাষ এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। গত বছরও অল্প জমিতে ভুট্টা চাষ করে আশানুরূপ ফল পেয়েছিলাম। এ বছর প্রায় এক একর জমিতে আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছি। আমাদের এলাকায় ভুট্টা গরুর খাবার হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।’
মাত্রাই তালুকদারপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষি কার্যালয় থেকে প্রণোদনা পেয়ে এক একর জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। গাছে গাছে ফুল-ফল ধরতে শুরু করেছে। মাস খানিক সময়ের মধ্যে ভুট্টা উত্তোলন করতে পারবো। ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।’
বেগুনগ্রাম এলাকার চাষি মোঃ মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বোরো ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি। এজন্য ভুট্টা চাষ করি। ভুট্টায় প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা আর ৩৫-৪০ মণ ভুট্টা পাই। চলতি বছর ৪১ শতক ভুট্টার চাষ করেছি। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার চারশো থেকে ১ হাজার পাঁচশত টাকায়।’
উপজেলার স্থানীয় সুধীজনদের কাছে ভুট্টা চাষের উপকারীতার বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, ধান ও সরিষার পাশাপাশি ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কালাই উপজেলার কৃষকেরা। ফলে ভুট্টা চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং গাছ ও সবুজ পাতা গোলার হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া জ্বালানি হিসেবে ভুট্টার গাছের রয়েছে চাহিদা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের মাঝে উন্নতজাত সরবরাহ,উদ্বুদ্ধকরণ ও পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত। উপজেলায় দুর্জয়-৫৫৭৭ জাতের ভুট্টার নতুন জাত প্রবর্তনে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ভুট্টাচাষিদের দুই কেজি বীজ, ১০ কেজি এমওপি সার ও ২০ কেজি ডিএপি সার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা চাষে খরচ কম, কিন্তু দাম অনেক ভালো। এ ছাড়া ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে বাজারে ভুট্টার চাহিদাও বেশ ভাল।
তিনি একপর্যায়ে আরো বলেন,‘‌উপজেলায় এবার ৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।’পোকার আক্রমণ হবার সঙ্গে সঙ্গেই এ অঞ্চলের কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার করে পোকার আক্রমণ প্রতিহত করছেন। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য আমরা কৃষকদের সকল ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করছি।আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার প্রায় সাত হাজার আটশত চল্লিশ মণ ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি এবং চাষিরা ভুট্টার ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন।আগামী দিনে এর চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
error: Content is protected !!