হোম » সারাদেশ » মির্জাগঞ্জে পুত্রবধূ কর্তৃক বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে নির্যাতনের অভিযোগ

মির্জাগঞ্জে পুত্রবধূ কর্তৃক বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে নির্যাতনের অভিযোগ

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সুবিদখালী বাজারে পুত্রবধূ নিলু রানী (২৮) কর্তৃক বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি শোভা রানী (৬৪) কে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়,৭-৮ বছর পূর্বে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী নিবাসী মৃত দেবেন্দ্র কর্মকার এর পুত্রছেলে সমর কর্মকারের সাথে মোবাইল ফোনে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ধরান্দী গ্রামের স্বপন বনিকের মেয়ে নিলু রানীর কিছুদিন কথাবার্তা হয়। এরপরই নিলু রানী বিয়ের দাবীতে পূর্ব সুবিদখালী সমর কর্মকারের ঘরে উঠে অবস্থান করেন। পরে এলাকার মানুষজন মিলে সমর কর্মকারের পরিবারকে বিভিন্ন রকম বুঝিয়ে তাদের সম্মতি আদায় করে সমর কর্মকারের সাথে নিলু রানীকে (ঘরে অবস্থানের ৩ দিন পর) বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। বিয়ের দুইএক মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় বৃদ্ধা শ্বাশুড়ির (শোভা রানী) উপর পুত্রবধূ নিলু রানীর অমানবিক বিভিন্ন রকম নির্যাতন। পুত্রবধূ কর্তৃক নির্যাতন সহিতে না পেরে মাসের মধ্যে ২৪-২৫ দিনই দূরদূরান্তের আত্মীয়-স্বজন ও নিজ এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় এবং মাসের মধ্যে বেশিদিনই কাটান অনাহারে অর্ধাহারে বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি শোভা রানী। বয়সের ভারে ও বার্ধক্যজনিত নানান সমস্যায় ঠিকমতো চলাফেরা করিতেও কষ্ট হয় তার। ২৭ বছর পূর্বে বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি শোভা রানীর স্বামী মারা যায়।
স্বামীর মৃত্যুর পরে ৮-৯ বছর বয়সী শিশু ছেলে সমর কর্মকারকে অনেক কষ্ট করে বড় করেন। বড় হয়ে সমর কর্মকার লোহার দাঁ-কাচি তৈরি ও মেরামতের দোকান দেয়। এ দিয়ে মা-ছেলে দুজনার সংসার ভালোই সুখে-শান্তিতে চলছিলো। ছেলে সমর কর্মকার বিয়ে করার পরপরই তাদের সংসারে জ্বলতে থাকে অশান্তির আগুন। পুত্রবধূ নিলু রানী হয়ে উঠে সংসারের সবকিছুর হর্তাকর্তা। স্বামী সমর কর্মকার হয় স্ত্রী নিলু রানীর হাতের খেলনার পুতুল। কারণে অকারণে স্বামী-শ্বাশুড়ির সাথে নিলু রানীর ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে। সমর কর্মকার তার স্ত্রী নিলু রানীকে শ্বাশুড়ির সাথে (শোভা রানী) খারাপ আচারব্যবহার করিতে বারণ করিলেই স্ত্রী নিলু রানী শুরু করে দেয় অকথ্য ভাষায় স্বামী-শ্বাশুড়িকে গালমন্দ,এবং সেইসাথে স্বামী-শ্বাশুড়ির সাথে করে মারমুখী আচরণ। ভাংচুর করিতে থাকে সংসারের বিভিন্ন আসবাবপত্র। তাছাড়া নিলু রানী তার স্বামী-শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়াঝাটি করার সময় মাছ-তরকারি কাটার ধারালো দাঁ,বটি এবং গলায় ফাঁস দেওয়ার জন্য দঁড়ি গামছা হাতে নিয়ে নিজেকে শেষ করে স্বামী-শ্বাশুড়িকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়।
বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে মাঝেমধ্যে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে,এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে ওই পুত্রবধূ নিলু রানীর বিরুদ্ধে । প্রতিবেশীরা জানান,ঐ মহিলা (পুত্রবধূ নিলু রানী) প্রতিদিনই খুটিনাটি নিয়ে বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে। বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে ঠিকমত তিনবেলা ভাত খেতেও দেয় না। আমরা,বৃদ্ধা শ্বাশুড়ির সাথে অশ্রাব্য অকথ্য ভাষা ব্যবহার করতে নিষেধ করিলে আমাদের উপরও তেরে আসে ওই মহিলা (পুত্রবধূ নিলু রানী)। তারা আরো জানান,সমর কর্মকার পরিবার নিয়ে ভাড়া ঘরে থাকে। শ্বাশুড়ির সাথে ওই মহিলার (পুত্রবধূ নিলু রানী) অমানবিক ও অশ্রাব্য আচারব্যবহারের জন্য কোনো ঘর মালিকই তাদেরকে বেশিদিন ঘরে রাখে না। ফলে ৩-৬ মাসান্ত ঘর পরিবর্তন করিতে বাধ্য হয় তারা। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ওই মহিলাকে (নিলু রানী) সামাজিক ও ধর্মীয় আদবকায়দায় বুঝিয়ে-শুনিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে মিলেমিশে থাকার জন্য শতবার চেষ্টা করেছেন,কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ওসব বুঝ-ব্যবস্থা উপেক্ষা করে দিনদিন শ্বাশুড়ির উপর আরো হিংস্র হয়ে ওঠে পুত্রবধূ নিলু রানী। অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পুত্রবধূ নিলু রানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,’এটা আমাদের সম্পুর্ন পারিবারিক বিষয়।’এতে কারো নাকগলানোর দরকার নেই।’
পুত্র সমর কর্মকার বলেন,আমার মা ও স্ত্রী দুজনেরই দোষত্রুটি আছে। আমি তাদেরকে ঘরের ভিতর সব সময় শান্তশিষ্ট রাখার জন্য চেষ্টা করি,কিন্তু কেউই আমার কথা গ্রাহ্য করে না। তারা তাদের মতো করেই চলে। নির্যাতনের বিষয় সমর কর্মকারের মা এর কাছে জানতে চাইলে তিনি,মমতা মাতৃত্বের টানে পুত্রবধূ কর্তৃক নির্যাতনের বিষয় নিয়ে করা সবগুলো প্রশ্নই এড়িয়ে গিয়ে বলেন,আমাকে যতই কষ্ট দেউক আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি আশীর্বাদ করি ভগবান আমার ছেলে ও ছেলের বউকে সুখে শান্তিতে রাখুক।
error: Content is protected !!