হোম » সারাদেশ » রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলগেট লেভেল ক্রসিংয়ের ব্যারিয়ারস ঠিক ব্যবহার না হওয়ায়  শহরের বুকে মরণফাঁদে পরিণত

রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলগেট লেভেল ক্রসিংয়ের ব্যারিয়ারস ঠিক ব্যবহার না হওয়ায়  শহরের বুকে মরণফাঁদে পরিণত

এস আর নিরব যশোরঃ যশোর শহরের মুজিব সড়কের শেষ প্রান্তের নাম রেলগেট। ক্রসিংটির কারণে স্থানটির রেলগেট নামকরণও হয়েছে। এই লেভেল ক্রসিংটি একটি এলসি গেট (স্পেশাল লেভেল ক্রসিং)। ক্রসিংটি দিয়ে হাজার হাজার যান ও মানুষ পারাপার হয় প্রতিদিন। এখান দিয়ে কয়েকটি রুটের যাত্রীবাহীসহ ২০টিরও বেশি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু এত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের রেল ক্রসিংটি মারাত্মক রকমের ঝুঁকিপূর্ণ।

ট্রেন লেভেল ক্রসিং পার হবার আগ মুহুর্তেও চলে পথচারী ও যান পারাপার। ক্রসিংয়ে চারটি ডাবল ব্যারিয়ার থাকলেও নামানো হয় তিনটি। আর ক্রসিংটি এতটাই কাছে ট্রেন স্টেশন ছাড়লে সেখানে পৌঁছতে এক মিনিটেরও কম সময় লাগে। তারপরও সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য থাকা ব্যারিয়ারের সবকটি নামানো হয় না। ফলে খোলা পাশ দিয়ে হরহামেশাই মোটরসাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইক ঢুকে পড়ে। যশোর জংশনের পশ্চিশ পাশের ‘রেলগেট’ ক্রসিংটির এরকমই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা।

সরেজমিন দেখা যায়, ট্রেন চলাচলের সময় লেভেল ক্রসিংটিতে চারটি ব্যারিয়ারের তিনটি নামানো হয়। অনেক নামানো হয় মাত্র দুটিও। অন্য ব্যারিয়ার সব সময় ওঠানো থাকে। কখনোই নামানো হয় না। ফলে ট্রেন লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও যানাবাহন পারাপার চলে। দীর্ঘদিন এমনটি চলে আসলেও উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যশোর রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের ওপর দাঁড়ালেই পশ্চিম দিকে অবস্থিত রেলগেট এলাকার লেভেল ক্রসিংটি দেখা যায়। স্টেশন থেকে ছাড়লে ট্রেন লেভেল ক্রসিংটিতে পৌঁছতে এক মিনিটেরও কম সময় লাগে। কিন্তু স্টেশন ছাড়লেও লেভেল ক্রসিং দিয়ে পথচারী ও যানবাহন পারাপার চলতে থাকে। ট্রেন লেভেল ক্রসিং ছুঁই ছুঁই মুহূর্তেও পারাপার বন্ধ থাকে না


লেভেল ক্রসিংয়ের সবকটি ব্যারিয়ার নামনো না থাকায় খোলা পাশ দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢুকে যায়। ট্রেন লেভেল ক্রসিং পার হবার ঠিক আর্গ মুর্হুতেও অনেক পথচারী দৌঁড়ে পার হন। একই রকম দৃশ্য চোখে পড়ে যখন দ্রুতগামী কোন ট্রেন স্টেশনে দিকে ছুটে যায়। ফলে যশোর জঙশনের অদূরে থাকা ওই লেভেল ক্রসিংটি যান ও জন চলাচলের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর বেনাপোল থেকে খুলনাগামী বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেন এই ক্রসিংটির কাছে এসে লাইনচ্যুৎ হয়। রেলক্রসিংয়ের ওপর বগি আটকে থাকায় যশোর শহর ও চাঁচড়ার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, সেদিনও একপাশের গেট খোলা ছিল। যদি বগি গেটের কাছে লাইনচ্যুৎ হতো তাহলে প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারতো। তারা আরও জানান, ক্রসিংটির অদূরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। ক্রসিংটি দিয়ে স্কুলটির কয়েশ’ শিশু শিক্ষার্থী পারাপার করে। একপাশের গেট খোলায় থাকায় শিশুরা না বুঝে ট্রেন আসার আগেও সেখান দিয়ে পারাপার করে। এছাড়া এই সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার যান ও জন চলাচল হয়। ফলে লেভেল ক্রসিংটির একটি পাশ খোলা থাকায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রেলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোকে ছয় শ্রেণিতে বিভক্ত। যশোর জঙশন সংলগ্ন এই গেটটি ক্লাস-এ শ্রেণিভুক্ত। নিয়ম অনুযায়ী এ-শ্রেণির গেটগুলোয় তিন শিফটে ছয়জন (প্রতি শিফটে দুই জন করে) গেটকিপার নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্ত এখানে ৩ শিফটে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন একজন করে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কর্তব্যরতরা জানান, অপারেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী ক্রসিংয়ের উভয়পাশে দুটি করে মোট চারটি ব্যারিয়ার নামানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু নামানো হয় তিনটি। ফলে ট্রেন লেভেল ক্রসিংটি পার হওয়ায় সময় ও আগ মুর্হুতে উন্মুক্ত অংশ অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তাদের দাবি, চারটি ব্যারিয়ারের সবকটি নামাতে হলে স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রতি শিফটে দুজন করে মোট ছয়জন গেটকিপার থাকার কথা।

কিন্তু ক্রসিংটি পরিচালিত হচ্ছে মাত্র তিনজন গেটকিপার দিয়ে। তাও একেক শিফটে একজন করে দায়িত্ব পালন করেন। আর তাই চাইলেও একজনের পক্ষে চারটি ব্যারিয়ারের সবকটি ওঠানো-নামানো সম্ভব হয় না। প্রতিদিনই বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন লোকাল ট্রেন যশোর স্টেশনে আসে ছেড়ে যায়। যশোরের বিভিন্ন প্রান্তসহ বাইরে জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষজন চাঁচড়া চেকপোস্টে বাস থেকে নেমে রেলগেট দিয়ে শহরে যান। ফলে ক্রসিংটি দিয়ে শহর অভিমুখী মানুষের চাপ থাকে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী ব্যারিয়ার নামানো হয় না বলে ক্রসিংটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

যশোর রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়ালিউল হক জানান, রেলগেট এলাকার এই লেভেল ক্রসিংয়ের ট্রাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্ব মূলত স্টেশন মাস্টারের। কোন ধরণের যান্ত্রিক ক্রুটির ব্যাপার থাকলে সেটি মেরামতের দিকটি তার বিভাগের আওতার মধ্যে পড়ে।

স্টেশন মাস্টার আয়নাল হোসেন জানান, গেটটিতে তিন শিফটে তিন জন দায়িত্ব পালন করেন। তাদের একার পক্ষে সবকটি ব্যারিয়ার নামানো সম্ভব হয় না। সবকটি ব্যারিয়ার একসাথে নামাতে হলে দুই জন গেট কিপার দরকার। কিন্তু একেকটি শিফটে কাজ করেন মাত্র একজন। তিনি বলেন, লোকবল বাড়ানোর বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে যশোর রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী চাঁন আহমেদ জানান, ট্রেন পারাপারের সময় নিরাপত্তার জন্য নিয়মানুযায়ী চারটি ব্যারিয়ারই নামাতে হবে। রেলগেট এলাকার লেভেল ক্রসিংটির সব কয়টি ব্যারিয়ার কেন নামনো হচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, চারটি ব্যারিয়ারের সব কয়টি কেন নামানো হচ্ছে না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

error: Content is protected !!