হোম » সারাদেশ » যুবকদের আত্ম কর্মসংস্থানের উদ্ভাবক টঙ্গীর যুববন্ধু সোহেল রানা

যুবকদের আত্ম কর্মসংস্থানের উদ্ভাবক টঙ্গীর যুববন্ধু সোহেল রানা

আলমগীর সিকদার, টঙ্গী: ছোটবেলা থেকেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে যুবকদের আত্ম কর্মসংস্থানের উদ্ভাবক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সফল যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার -২০২১ এর পদক প্রাপ্ত গাজীপুরের টঙ্গীস্থ নোয়াগাঁও ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ যুব সংঘের সাধারণ সম্পাদক যুব বন্ধু মো: সোহেল রানা। তার নেতৃত্বের বিকাশ ও সামাজিক কর্মকান্ডে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ এ বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২১ এর পদক প্রদান করেন বাংলাদেশ যুব মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি তার জীবনধারার সাফল্যের কর্মকান্ড এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে একান্ত এক সাক্ষাৎকালে গণমানুষের আওয়াজকে সোহেল রানা বলেন, টঙ্গীর নোয়াগাঁও ১৯৮৮ সালের ২২ জুনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পিতা মো: মকবুল হোসেন ও মাতা মোছা: আয়েশা আক্তারের পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন সোহেল রানা। বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তার বড় দুই বোন সেলিনা আলম ও ফারজানা আক্তার। ২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাতা ও ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট পিতাকে হারান তিনি।

শিক্ষাজীবন প্রসঙ্গে সোহেল রানা বলেন, নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ছাত্রজীবন শুরু করেন পরে নোয়াগাঁও
এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস করে পুবাইল আদর্শ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পাসের পরে টঙ্গী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ডিগ্রি ও ব্যবস্থাপনার ওপর মাস্টার্স শেষে গাজীপুর ল’ কলেজে এলএলবি করেন। পরে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালি থানার এসকে হাসপাতাল এলাকার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের মেয়ে গোধূলি আক্তার লাকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের দাম্পত্য জীবনে সুখের বার্তা নিয়ে আসে পুত্রসন্তান শেখ সাহল লামীম রোদ্র।

প্রশ্ন: কিভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা হলেন?
সোহেল রানা: বিগত ২০০৪ সালে গাজীপুর ২ আসনের প্রয়াত সাংসদ, প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা, রাজনীতির শুদ্ধপুরুষ জাতীয় বীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি স্যারের মৃত্যুর পর তার সহধর্মিণীর নির্দেশে তার কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম জাবিদ আহসান সোহেলের নেতৃত্বে ওই সময় জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ভাইর একজন কর্মী হয়ে রাজনীতিতে আমার আগমন। তখন সকলের ঐক্যপ্রচেষ্টায় ওই উপনির্বাচনে জাহিদ আহসান রাসেল ভাইর বিজয়ীর পর সাবেক টঙ্গী পৌরসভা ১০নং বর্তমান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪৬নং ওয়ার্ডে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠনে যোগদান করি।

এরপর ২০১৫ সালে অবিভক্ত টঙ্গী থানা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। দীর্ঘদিন এ সংগঠনের নতুন কোন কমিটি না হওয়ায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই আমি। যেহেতু বাংলাদেশ ছাত্রলীগে বিবাহিতদের কোনো অগ্রাধিকার থাকে না। তাই আমি আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততায় রয়েছি।

প্রশ্ন: আপনি কিভাবে যুব সমাজের উন্নয়ন করছেন?

সোহেল রানা: ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আর এই চিন্তা চেতনায় আজও পরিশ্রম করে যাচ্ছি। স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। একজন সফল আত্মকর্মীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নোয়াগাঁও ক্রীড়া ও সমাজ কল্যাণ যুব সংঘ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আমার প্রিয় নেতা জাহিদ আহসান রাসেল ভাই।

এরপর ২০১৫ সালে সংগঠনে নতুন করে কমিটিতে আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড বিবেচনা করে আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন জাহিদ আহসান রাসেল ভাই। তার সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৫ সালে সমাজসেবা ও ২০১৮ সালে যুবতে রেজিস্টেশনে ভূক্ত হয় এই সংগঠন। যুবকসমাজের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে নোয়াগাঁও ক্রীড়া ও সমাজ কল্যাণ যুব সংঘের উদ্যোগে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে আমরা প্রতিবার ১০ জন করে বিভিন্ন সময় যুবকদের কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু পালন, কারিগরি ও প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

তিনি আরো জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে এ সংগঠনের মাধ্যমে গাজীপুরের ঝুগীতলায় প্রায় সাড়ে তিন বিঘার পুকুরে মৎস চাষ করা হচ্ছে, গত চার বছর যাবৎ প্রতিবন্ধীদের তৈরি মুক্তা পানির ডিলারশীপ পরিচালনা করা হচ্ছে, টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় দা বন্দর ইন রেস্টুরেন্টের কাজ চলমান, বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সুসল নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট ব্যবসা বিভিন্ন শাখাসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন কয়েক শতাধিক যুবকের কর্মসংস্থান। তাছাড়াও সংগঠনের উদ্যোগে তিনি নিরক্ষরতা দূরীকরণ, কারিগরি ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ, কর্ম সংস্থানের নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন, পরিবেশ সংরক্ষনে বৃক্ষ রোপন, পরিবেশ দূষন রোধে প্রচারণা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি, ধূমপান ও মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সমাজ উন্নয়নমুলক কাজে অবদান, নিজস্ব শ্রম ও মেধার প্রয়োগে নেতৃত্ব বিকাশে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া সংগঠনের উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন চলমান রাখতে সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করেছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ক্রিকেট গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছি। এছাড়া অসহায়দের মাঝে আর্থিক অনুদানসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংগঠন ‘এনএফএভিএইচ’ এ কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার এসব কর্মকান্ডে আবিভূর্ত হয়ে সোহেল রানাকে যুববন্ধু হিসেবে উপাধি দেন স্থানীয় যু্বসমাজ। আর এসব আত্ম কর্মসংস্থানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের স্বীকৃতি স্বরূপ সফল যুব সংগঠক হিসেবে এই বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২১ এর (পুরুষ) ক্যাটাগরিতে ২৭জন যুবকের মধ্যে দ্বিতীয় পুরস্কারের পদক তার হাতে তুলে দেন যুব ও
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এম.পি।

প্রশ্ন: আপনার জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা?
সোহেল রানা: শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার আমার শিক্ষক ছিলেন, তিনি আমাকে শিক্ষাদান করেছেন। বিগত ২০০৪ সালে ৭ই মে জনসভায় হামলা চালিয়ে আমার স্যারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তখন আমি ও মাজহারুল ইসলাম মাসুম ভাই এই দুজন স্যারের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সারাদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্য দিয়েছি।
প্রশ্ন: ভবিষৎতে দলীয় কোন পদ পেতে আপনি আগ্রহী?

সোহেল রানা: আমি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির অঙ্গন পেরিয়ে বর্তমানে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততায় রয়েছি। যেহেতু আমি বিগতদিনে টঙ্গী থানা পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি করেছি, তাই আমার অনেক ভক্তবৃন্দ, অনুসারিদের আশা প্রত্যাশার অনুরোধে আমি টঙ্গী পূর্ব থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ প্রত্যাশী।
প্রশ্ন: জাতীয় যুব পুরস্কার পাওয়াতে আপনি কেমন উপলদ্ধি করছেন এবং আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি রয়েছে?

সোহেল রানা: এ পুরস্কার আমাকে আরও বেশি অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ যোগাবে। এজন্য আমি মহান আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল ভাইর প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এ পুরস্কার আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠনের সহযোদ্ধাদের মাঝে উৎসর্গ করলাম। আমার স্বপ্ন গাজীপুরে সকল সামাজিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে যুবসমাজের উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল করতে সবাইকে নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।

error: Content is protected !!