হোম » সারাদেশ » উত্তরাঞ্চলের ১৪ বাফার গুদামে সার মজুদ বন্ধ আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ ব্যহত হওয়ার আশংকা

উত্তরাঞ্চলের ১৪ বাফার গুদামে সার মজুদ বন্ধ আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ ব্যহত হওয়ার আশংকা

আল আমিন হোসেন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : হঠাৎ জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধির দাবীতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতি শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রাক ধর্মঘট শুরু করেছে। ফলে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক ইউরিয়া সার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে বিসিআইসির আপদকালীন সার মজুদ কার্যক্রম। এতে চলতি রবি মৌসুমে আসন্ন ইরি-বোরো আবাদ ব্যহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ইরি- বোরো আবাদকালে কৃত্রিম সার সংকটের আশংকায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এই সার সরবরাহের খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তরের ১৬ জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজাওে সারের দাম কেজি প্রতি ২/৩টাকা বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম মোল্লা বলেন,লিটার প্রতি জ্বালানী তেল ১৫টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঘাবাড়ি থেকে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁও,কুড়িগ্রাম যেতে তেল খরচ বেড়েছে ১৫০০টাকা থেকে ২০০০টাকা। পরিবহণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের পূর্বের রেট অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করছে।

এতে প্রতিটিভে আমাদের ১৫০০টাকা থেকে ২০০০টাকা লোকশান হচ্ছে। তিনি বলেন,বাঘাবাড়িতে ২০০টি ট্রাক ছিল। করোনায় ক্ষতির কারণে অনেক মালিক ট্রাক বিক্রি করে দেওয়ায় এখন মাত্র ৭৫টি ট্রাক রয়েছে। এরপরে যদি ভাড়া বৃদ্ধি করা না হয় তবে বাঁকি ট্রাকগুলোর মালিকরা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে। একারণে আমরা নিরুপায় হয়ে ভাড়া বৃদ্ধির দাবীতে এ আন্দোলন শুরু করেছি। এদিকে এ পরিস্থিতি নিরশনে এদিন দুপুরে বাঘাবাড়িতে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: শামসুজ্জোহার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন,

বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আব্দুস সালাম ব্যাপারী,আবুল সরকার,আব্দুল মজিদ,জেবার সমিতির সভাপতি মির্জা আনোয়ার হোসেন হিরা, পরিবহণ ঠিকাদারের প্রতিনিধি প্রটোন কোং এর সোহরাব হোসেন ও মেসার্স ফয়সাল কোং এর জালাল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম মোল্লা,সাধারণ সম্পাদক মজনু সরকার,সাংগঠনিক সম্পাদকআজমত মোল্লা ও বন্দবস্তকারী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন,সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী প্রমুখ।

১ঘন্টা ব্যাপী এ বৈঠক অমিমাংসিত ভাবে শেষ হয়। ফলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রাক ধর্মঘট চলছিল। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো: শামসুজ্জোহা বলেন,খবর পেয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে গিয়ে ট্রাক মালিক সমিতির নেতা,পরিবহণ ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও বন্দর লেবার নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এরপর এদের নের্তৃবৃন্দকে আলাদা ভাবে বসে বিষয়টি সমন্বয় করে সমাধাণ করতে বলেছি। আশাকরি ২/১দিনের মধ্যে এ সাময়ীক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর বাফার গুদাম ইনচার্জ হারুন আর রশিদ বলেন,এ বিষয়ে ফাকা কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। তারা পরিবহণ বন্ধ রাখলেও আমরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় উত্তরাঞ্চলের বাফার গুদাম গুলিতে সার সরবরাহ অব্যহত রাখবো। ফলে উত্তরাঞ্চলে সার সংকট হবে না।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ মোটার বাস,মিনিবাস সমিতির সভাপতি হাসিব খান তরুণ বলেন, হঠাৎ জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানী খরচ বেড়ে গেছে। ফলে সারা দেশের সব ধরণের পরিবহণ বন্ধ রেখে আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আমাদের ভাড়া সমন্বয় করা না হলে আমরা লোকশানে পড়ে যাচ্ছি। তাই ভাড়া সমন্বয় ও বৃদ্ধিও দাবীতে আমরা সমস্ত পরিবহণ বন্ধ রেখে এ আন্দোলন শুরু করেছি।

আমাদের দাবী পূরণ হলে আমরা আবার গাড়ি চালাবো। তিনি আরও বলেন,রবিবার ঢাকায় পরিবহণ নেতাদের সাথে সরকারের এ নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ফলপ্রসূ আলোচনা হলে ওইদিনই এর সমাধান হয়ে যাবে। এদিকে শুক্রবার সকালে বাঘাবাড়ি নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নবগঠিত কমিটির পরিচিতি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূইয়া তার বক্তব্যে  বলেন,জ্বালানী তেলের মূলবৃদ্ধিতে নৌযান সেক্টরেরও খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে নীতিগত ভাবে জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহণ সেক্টরের আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন জানিয়ে নৌযান শ্রমিকদের অবিলম্বে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জোর দাবী জানাচ্ছি।

ওয়াসিম আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,দাউদ উল ইসলাম,সিরাজুল ইসলাম,আমিনুল ইসলাম,কেন্দ্রীয় নেতা আফসার  চৌধুরি,হাবিবুল্লাহ বাহার,আবু সাঈদ,আবুল কাশেম প্রমুখ। অপরদিকে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহণ বন্ধ থাকায় শাহজাদপুর উপজেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় যাত্রী দীর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে চাকরি প্রার্থীরা ঢাকায় যেতে না পারায় অনেকে চাকরি বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকে জরুরী কাজে দূরে যেতে না পাড়ায় অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

error: Content is protected !!