হোম » সারাদেশ » গুরুদাসপুরে চিকিৎসার আড়ালে ভুয়া ডাক্তারের যৌনব্যবসার অভিযোগ

গুরুদাসপুরে চিকিৎসার আড়ালে ভুয়া ডাক্তারের যৌনব্যবসার অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের গুরুদাসপুরে আরেক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বোকা বানিয়ে ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার আড়ালে যৌনব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম এম.এ আওয়াল। তিনি নাক, কান, গলা, ঘাড়, মাথা ও যৌনসহ যাবতীয় রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অথচ তার ডাক্তারি ডিগ্রীই নেই। স্থানীয় স‚ত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর থানার ৫০০ গজ পশ্চিমে কামারপাড়া মহল্লায় চেম্বার বসিয়ে শুক্রবার ব্যাতিত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। তার কাছে রোগী মানেই যৌন খদ্দের।

তাদেরকে রোগী সাজিয়ে মাথাপিছু ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ভিজিট নেওয়া হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও তথ্য কেন্দ্রের বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে দু’চার বছর নয়, দীর্ঘ ২৭বছর ধরে চিকিৎসার নামে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার নামের ওই আওয়াল। দালালদের সহায়তায় রোগী সাজানো উঠতি বয়সের যুবক এমনকি বয়স্ক পুরুষদের টার্গেট করে চিকিৎসার অন্তরালে তিনি টাকার বিনিময়ে যৌনকর্মীদের নার্সের পোশাক পড়িয়ে চেম্বারে এনে যৌনব্যবসা চালান।

যৌনব্যবসার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার ম‚ল লক্ষ্য। তিনি ডাক্তার নন তবুও ভিজিটিং কার্ড, চিকিৎসা পত্র ও সাইনবোর্ডে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে আসছেন। সরজমিনে গেলে দেখা যায়, তার সাইনবোর্ড সর্বস্ব চেম্বাওে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। তার তাকে সাজানো ওষুধের বোতলে কোনো ওষুধ ছিলোনা। উপরন্ত তার চেম্বারের গোপন কক্ষে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা যৌন উত্তেজক পানীয় বোতল ও কনডম দেখা যায়। এগুলো ভিডিও করার আগেই সেখানে উপস্থিত সাথী নামধারী মহিলা তা সরিয়ে ফেলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়াল ও সাথী দুজনে মিলে এসব অসামাজিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ইতিপ‚র্বে তিনি চাঁচকৈড় ও খামারনাচকৈড় এলাকায় এসব অপকর্ম করায় স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। কিছুদিন গাঁ ঢাকা দিয়ে আবার কামারপাড়ায় আব্দুল জলিল প্রফেসরের বাসা ভাড়া নিয়ে ডাক্তারি চেম্বার খুলে যৌনকর্মীদের দিয়ে অসামাজিক কীর্তিকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়াল গুরুদাসপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলার ইকড়ী গ্রামের মৃত আনার মোল্লার ছেলে। আওয়ালের চেম্বারের দোতলার ভাড়াটে আরিফুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রীকে আওয়ালের চেম্বারে ম্যানেজার পদে চাকরি দেওয়া হয়েছিলো। আওয়ালের যৌনঅপকর্মের বিষয় টের পেয়ে তিনদিন ডিউটি করার পর আর তার স্ত্রী চাকরি করেননি।

বাড়ির মালিক আব্দুল জলিল জানান, আমি ঢাকায় থাকি। আওয়াল এতো নোংরা লোক তা জানতাম না। ফিরে এসে তাকে সাতদিনের মধ্যে বাড়ি থেকে বিদায় করে দিবো। আওয়াল বলেন, আমি দীর্ঘদীন ধরে গুরুদাসপুর উপজেলা জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে রাজনীতি করে আসছি এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল প্রকল্পের দায়িত্বে আছি। এছাড়াও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আরপিডিও’র নির্বাহী পরিচালক পদে কাজ করছি। খামারনাচকৈড় মহল্লায় তার বাড়ি আছে। চেম্বারে কোনো যৌনব্যবসা চালানো হয়না। শুধু রোগী দেখে চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি এ পেশা বেছে নিয়েছেন।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আওয়ালের কোনো ডাক্তারি সার্টিফিকেট নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। শীগগিরিই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ২৯সেপ্টেম্বর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজার এলাকায় র‍্যাব-৫ এর অভিযানে এস এ আজাদ নামের এক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে তাকে ছয় মাসের কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আওয়াল আজাদ ডাক্তারের শিস্য বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

error: Content is protected !!