হোম » সারাদেশ » যশোরে ৫৫ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সিলগালা: লাইসেন্স নবায়নে আল্টিমেটাম ১৬৩টিতে

যশোরে ৫৫ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সিলগালা: লাইসেন্স নবায়নে আল্টিমেটাম ১৬৩টিতে

এস আর নিরবঃ হালনাগাদ লাইসেন্স করতে যশোরের ১৬৩ টি বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিককে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীনের স্বাক্ষরিত পরিপত্রে ২৩ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ। এদিকে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক- সেবিকা না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ইতোমধ্যে জেলার ৫৫ টি ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, যশোর জেলায় ২৮৮ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ লাইসেন্স রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঘোষণা অনুযায়ী নতুন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ ও পুরাতন প্রতিষ্ঠান গুলোর লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৮৮ মধ্যে ১৬৩ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের আবেদন অধিদফতরে জমা পড়েনি।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, সরকারের নির্দেশনার বাইরে পরিচালিত ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন সিভিল সার্জন। তারই নির্দেশে লাইসেন্স করার জন্য ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ১৬৩ প্রতিষ্ঠান মালিককে আল্টিমেটাম দিয়ে পরিপত্র পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে যশোর শহর ও সদর উপজেলায় ৫২ টি, শার্শা উপজেলায় ২১ টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ২১ টি, চৌগাছা উপজেলায় ১২ টি, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৩ টি, অভয়নগর উপজেলায় ২১ টি, মণিরামপুর উপজেলায় ১৮ টি ও কেশবপুর উপজেলায় ৫ টি রয়েছে। তিনি আরও জানান, আল্টিমেটাম দিয়ে পাঠানো পত্রে লাইসেন্সের জন্য সঠিকভাবে আবেদন করতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে যশোর জেলার একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেছেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। পরিদর্শনকালে ৫৫ টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা অনিয়ম দেখতে পান। ওই সব প্রতিষ্ঠানে রোগীর অস্ত্রোপচারের সময় অজ্ঞানের চিকিৎসক থাকেন না। নিজস্ব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সেবিকা ও প্যাথলজিস্ট নেই। এছাড়া নিম্ন মানের অস্ত্রোপচার কক্ষ, প্যাথলজি বিভাগ নোংরা পরিবেশ ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়, অনুমোদনের চেয়ে অতিরিক্ত বেড ব্যবহার ও অপচিকিৎসা করা হয়। যে কারণে সিভিল সার্জনের নির্দেশে সেগুলো সিলগালা করা হয়।
সিল হওয়া  ৫৫ টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হলো যশোর শহরের নিউ মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসনা আকবর মেমোরিয়াল, মিডপয়েন্ট হাসপাতাল  এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আইডিয়াল প্যাথলজি সেন্টার, নিরাময় ক্লিনিক, সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এএফসি, হেলথ ফোরটিস, আলিফ ট্রমা সেন্টার, সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার মহুয়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক। শার্শা উপজেলার রজনী ক্লিনিক,
পল্লী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জোহরা ক্লিনিক , ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মা-মনি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মুক্তি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উপলক্ষ ক্লিনিক। ঝিকরগাছার বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক  এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টা , সায়রা সার্জিক্যাল, আনিকা ক্লিনিক,  ফেমাস মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ছুটিপুর প্রাইভেট ক্লিনিক,  এস এস ক্লিনিক, আয়শা ক্লিনিক, শাপলা ক্লিনিক, সালেহা ক্লিনিক , সীমান্ত ডায়াগনস্টিক সেন্টার। চৌগাছা উপজেলার মায়ের দোয়া পাইভেট ক্লিনিক, মধুমতি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বাঘারপাড়া উপজেলার খাজা বাবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,
মা মনি ক্লিনিক, রহিমা প্রাইভেট হাসপাতাল, নারিকেল বাড়িয়া ক্লিনিক , প্রথমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মরিয়ম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আনোয়ারা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফাতেমা ক্লিনিক , হানি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অভয়নগর উপজেলার ল্যাব ওয়েব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নেহা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মণিরামপুর উপজেলার মনোয়ারা ক্লিনিক,জিনিয়া প্যাথলজি সেন্টার, ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফাতেমা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তফি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিক, রিজু হাসপাতাল, রাজগঞ্জ ক্লিনিক ,স্কন হাসপাতাল, পার বাজার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রয়েল প্যাথলজি, সেভ ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর জেলার কোন কোন হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার হালনাগাদ লাইসেন্স আছে ও কারা লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন এখন তিনি নিশ্চিত। ২৩ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ১৬৩ টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের আবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে যায়নি। নতুন করে ত্রæটিমুক্ত আবেদন করার জন্য ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে আবেদন না করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, ইতোমধ্যে নানা অনিয়মের কারণে জেলার ৫৫ টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম চোখে পড়লেই বন্ধ করা হবে। সরকারের নির্দেশনার বাইরে চালানোর সুযোগ দেয়া হবে না।
error: Content is protected !!