পানিবন্দি হাজারো মানুষ, বাড়ছে খাদ্য সংকট ও রোগবালাই।স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। ফলে সেখানকার বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।এখনো কাটেনি বন্যার রেশ। বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকটের পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব বেড়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের। তাদের ঘরগুলোও এখনো বসবাস অনুপযোগী। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বরী ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর সোনা মিয়ার বাড়িতে ঘুরে দেখা যায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আর অসহায়তার চিত্র। সেখানকার অধিকাংশ রাস্তাঘাটে এখনো হাঁটুসমান পানি। কোথাওবা তার একটু নিচে। সবার রান্নাঘরে পানি এখনো থৈ থৈ করছে। বসতঘর থেকে পানি নেমে গেলেও কাদামাটির মধ্যেই বসবাস করছেন অনেকে । কোনো ঘরেই নেই মাটির চুলায় রান্নার ব্যবস্থা। শিশু, বৃদ্ধ আর অসুস্থ মানুষদের নিয়ে পরিবারগুলো পানিবন্দি দিন কাটাচ্ছে।
পানি আর কাদামাটিতে চলাচল করতে করতে পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে। পানি নামছেই না। ঘরের ভেতর ইট, কাঠ আর পাটের বস্তা বিছিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। অনেকে আবার আশপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও একই অবস্থা বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা। ওই বাড়ির নূর হোসেন জানান আমাদের বাড়ির অনেক পরিবার পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণপুরে সালাউদ্দিন কাকার বাড়িতে উঠেছে ওখানে জায়গা না থাকার কারণে আমি এই পানিবন্দি অবস্থায় ছিলাম এখনো আছি। আমার বাবা হাসমত উল্লাহ মিয়া অনেক অসুস্থ পায়খানা প্রসাব অনেক কষ্ট ঘরের এক কোণে বসে পায়খানা করেন তিনি।আমরাও বা কোথায় যাব একই অবস্থায় আমরাও এভাবে দিন কাটাচ্ছি। তবে পানি কিছুটা কমেছে পায়খানা এখনো আগের মতই পানিতে ডুবে আছে।
পশ্চিম মির্জানগর স্থানীয় হিন্দু বাড়ির চাল বাড়ি নামে খ্যাত হরে কৃষ্ণ নামে এক যুবক জানান , আমাদের এলাকায় কোন আশ্রয়কেন্দ্রে নেই। কোথাও যাওয়ার মতো ব্যবস্থা ছিল না বাধ্য হয়ে হাঁটু পানি ঘরের ভিতরে চারটি ইট চৌকির নিচে দিয়ে অবস্থান করছি তবে আগের চেয়ে কিছু পানি কমছে। ঘর থেকে পানি নামছে ঘরের সামনে হাটু পরিমান পানি। তবে আমাদের বাড়িতে ৬০ ফ্যামিলি আছে সবার অবস্থা আমার মতই। বাকিরা হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল রেখে যেতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ঘরেও থাকতে পারছেন না,
ওই বাড়িরে নবশূদ্র তপন বলেন আমাদের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রেও নেই কোথায় যাব আমরা । সবার ঘরের মেঝে ভেঙে গেছে। পানি নামলে তাদের যেন দ্রুত পুনর্বাসন করা হয়। , গত দুই সপ্তাহ ঘরে বাজার ছিল না, কোনো রকম শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি। পানি আর কাদামাটিতে চলাচল করতে করতে পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে। পানি নামছেই না। প্রতিদিন আধা ইঞ্চি করে নামলেও এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতাম। আমার ঘরে ৫ মানুষ। ঘরের ভেতর ইট, কাঠ আর পাটের বস্তা বিছিয়ে হাঁটাচলা করতে হচ্ছে। আপাতত অন্য কোথাও গিয়ে থাকার ব্যবস্থা নেই।
আরেক বাসিন্দা নবশূদ্র হরে লাল বলেন, আমার রান্নাঘর ডুবে চুলা ভেঙে গেছে। পানি ওঠার তিনদিন পর টয়লেটও ভেঙে গেছে। এমন দুর্দশায় কোনোদিন পড়িনি। পিচ্ছিল কাদামাটি, আর খাটের ওপর আরেকটা চৌকি দিয়ে রাতে কোনো রকম ঘুমাই। পুরো ঘরে কাদামাটি জমে থাকায় ইট-কাঠ বিছিয়ে কোনো রকম চলাচল করতে হচ্ছে। এভাবে আজ ১৫ দিন পানিবন্দি। আমরা যেভাবে আছি, এভাবে মানুষ বসবাস করতে পারে না। পানি ধীরে ধীরে নামছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে, তাতে পানি বেড়ে যাচ্ছে। সোনাইমুড়ী , বন্যায় একই পরিস্থিতি উপজেলায় দশটি ইউনিয়নে পানি না নামায় গত কয়েকদিনের দুর্ভোগে নাকাল বানভাসিদের জীবন। উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের দোকানদার জহিরুল ইসলাম বলেন ১৭ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় ৩০ হাজার টাকার আমি আইসক্রিম ফেলে দিয়েছি মাল ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতন ক্ষতি। আমার খামারের গরু ও ছাগল অন্যের বিল্ডিংয়ে রেখেছি গরুর খাদ্য সংকটে গরুগুলি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। এরকম বন্যা জীবনে আমি আর দেখি নাই । একই বাড়ির তাজুল ইসলাম বলেন আমার গরু পাঁচটা ছাগল পাঁচটা নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি কোথাও নিয়ে রাখার মত কোন ব্যবস্থা নেই গো খাদ্য সংকটে অনেক কষ্টে আছি।
উত্তর মির্জানগর গ্রামের মনির আহমেদ বলেন , খাটের ওপর আরেকটি চৌকি দিয়ে ঘুমাইছি ১৩ দিন। এখন ঘরের মেঝে থেকে পানি নামছে। কাদামাটিতে হাঁটায় বাচ্চাদের পায়ে ক্ষত হয়ে গেছে। ফেনীতে পানি দ্রুত এসে দ্রুত নেমে গেছে। সোনাইমুড়ি পানি এসেছে ধীরে, ধীরে। এখন যাচ্ছেও ধীরে। একটা ইউনিয়নে পানিবন্দি প্রায় হাজার পরিবার থাকলেও পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা নেই। সোনাইমুড়ী উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী মোঃ মহিন উদ্দিন বলেন, মানুষ পানিবন্দি থাকলে শুকনো খাবার বা সোনামুড়ি হামিদিয়া কামিল মাদ্রাসায় আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে সহায়তা করা যায়। কিন্তু দিনের পরদিন গ্রামে যাওয়া অনেক কঠিন সহযোগিতা করা কঠিন। এখনো বন্যার পানি নামছে না। অনেকের বসতঘরে এখনো পানি, রান্নার চুলাও জ্বলছে না। কেউ কেউ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। । এলাকার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না। বন্যায় সব তলিয়ে যাওয়ায় অনেক সামর্থ্যবান ও ড়মধ্যবিত্ত পরিবারও সহায়তা চাইছে। কেউ কেউ ঘরের মায়া কিংবা চোর-ডাকাতের ভয়ে আশ্রকেন্দ্রে যাচ্ছেন না।
পানি না নামা পর্যন্ত আমাদের এই অঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে। সোনাইমুড়ি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এখনো প্রায় লাখ মানুষ পানিবন্দি। আমরা কিছু খাল পরিষ্কার করেছি। পানি ধীরে ধীরে নামছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টিও হচ্ছে, তাতে পানি ফের বাড়ছে। পানি নেমে গেলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, শুরুতে উপজেলায় পানিবন্দি ছিল ৫০ হাজার, এখন সেটি ২০ হাজারে নেমেছে। আশ্রয়কেন্দ্র ছিল প্রায় ২০০টি, এখন তা কমে ১০০-এর নিচে। আমরা এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ওপর মহল থেকে সহায়তা পাইনি। তবে পুনর্বাসনের তালিকা তৈরি হচ্ছে, চিঠি এলে পাঠিয়ে দেব।
-মোহাম্মদ হানিফ-
আরও পড়ুন
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সমম্বয়কদের সাথে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সহ সুশীল সমাজের মতবিনিময়
ইউনুছ হালিমা দাখিল মাদ্রাসার আয়োজনে ঈদে মিলাদুন- নবী উদযাপন
ফুলবাড়ীতে বালু ভর্তি ট্রাক্টর থেকে ৩০০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ২ মাদক কারবাররি আটক