হোম » শহর-নগর » আশুলিয়ায় মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান

আশুলিয়ায় মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান

নজরুল ইসলাম মানিক,, আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ ও দূর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গত ২১ জুন থেকে সারাদেশে ইঞ্জিন চালিত রিকশা-ভ্যান নিষিদ্ধি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঢাকার আশুলিয়ার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিতে অবৈধ রিকশা-ভ্যান। প্রকাশ্যে এসব রিকশা ভ্যান চলাচল করলেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে সাভার হাইওয়ে পুলিশ বলছে তাদের লোকবলের অভাব। এরপরও তারা এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
সরেজমিনে আশুলিয়ার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে গিয়ে এ চিত্র চোখে পড়ে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল, নবীনগর, গকোলনগর সড়ক, কুরগাঁও, নিরিবিলি, বাইশ মাইল, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুৎ, পলাশবাড়ি, বাইপাইল, ডিইপিজেড, বলিভদ্র, শ্রীপুর, জিরানী বাজার, কবিরপুর, বাড়ইপাড়া, বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর মহাসড়কের বগাবাড়ি, ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা।

মহাসড়কের এসব এলাকায় শত শত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল করলেও ট্রাফিক পুলিশ কিংবা হাইওয়ে পুলিশ তাদের কিছুই বলছে না। অবাদে মহাসড়ক দিয়ে নিষিদ্ধ এসব অটোরিকশা চলাচলের ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। অথচ মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণেই বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশাসহ তিন চাকার সকল যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাসড়ক সহ বিভিন্ন লিংক সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ এসব যানবাহন।

এসব এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কে বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা এবং মাহিন্দ্রর কারণে প্রায়শই ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এসব দূর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন আবার অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে তারা সাধুবাদ জানান। কিন্তু সরকারি এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে মহাসড়কে চলছেই এসব রিকশা-ভ্যান। তবে পুলিশ প্রশাসন এব্যাপারে কঠোর ভুমিকা পালন করলে হয়তো মহাসড়কে চলাচল বন্ধ হবে অবৈধ বেটারি চালিত রিকশা-ব্যান ও অটোরিকশা।

বাইপাইল এলাকায় কথা হয় রবিউল ইসলাম নামের এক বেটারি চালিত রিকশা চালকের সাথে। তিনি জানান, সরকারি সিদ্ধান্তকে তিনি সম্মান করেন। কিন্তু রিকশা না চালালে সংসার চলবে কি করে। অন্য কোন কাজও তার জানা নেই। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা থেকে ভাড়া বাবদ টাকা দিয়ে বাকীগুরো সংসারের খরচে চলে যায়। তবে সরকারি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনের কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে। শুধু দুই একজনকে রাস্তায় চলাচল করতে নয় প্রত্যেকটি বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যানস ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। সেই সাথে যারা রিকশা ভ্যান চালাবে না তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

ইপিজেড এলাকায় রিকশা চালান আবুদ গফুর। বাড়ি ময়মনসিংহে। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, পেটের দায়ে তিনি রিকশা চালান। অন্যাকোন কাজও তার জানা নেই। রিকশাটি তার নিজের। তাই দুই/চার’শ যা আয় করেন তার সম্পূর্ণই নিজের থেকে যায়। তিনিও সরকারি সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করেন। রিকশা-ভ্যান বন্ধ করে দিয়ে যারা রিকশা ভ্যান চালাতো তাদের জন্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কর্মসংস্থান করে দিলে ভাল হবে। তাছাড়া পরিবার নিয়ে চলবে কি করে।

বেটারি চালিত রিকশাযোগে জিরানী থেকে বলিভদ্র যাচ্ছিলেন সাইফুল ইসলাম নামের এক ভদ্রলোক। তিনি জানান, অনেকক্ষণ হলো বাসের জন্য দাড়িয়ে আছি। কিন্তু চলছে লকডাউন, তাই বাস হয়তো আসছে না। তাই বাধ্য হয়েই বেটারি চালিত রিকশায় উঠেছি। মহাসড়ক দিয়ে চলাচল এই বাহনে রিক্স আছে অবশ্যই। কিন্তু কি করবো বলেন, গন্তব্যস্থলে যেতে হবেতো। তবে সরকারি যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা যদি শত ভাগ পালন করা হয়, তাহলে অবশ্যই সড়কে দূর্ঘটনা কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদী।

এব্যাপারে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো: সাজ্জাদ করিম খান জানান, মহাসড়কে বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি। থানার মধ্যেও আটক আছে অনেক। এছাড়া আমাদের লোকবল নাই, লোকবলের অভাব। তবে যতটুকু সম্বব চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, গত ২০ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, সড়ক দূর্ঘনারোধে সারাদেশে বেটারি চালিত রিকশা-ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং পরের দিন থেকে তা সারাদেশে কার্যকর করার ঘোষণা দেন তিনি।

error: Content is protected !!