আওয়াজ অনলাইন: গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় এবং নৌকার ব্যাচ পড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
গত ৩১ মে থেকে গাজীপুর সিটি নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন সভায় এসব বিষয় উঠে আসে। এ মূল্যায়ন সভা চলবে ৭ জুন পর্যন্ত। এরইমধ্যে গত ৩১ মে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর, কোনাবাড়ি থানা, ২ জুন বাসন থানা, ৩ জুন গাজীপুর সদর মেট্রো থানা ও কাউলতিয়া সাংগঠনিক থানা এবং সবশেষ সোমবার (৫ জুন) গাছা থানায় মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব সভায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান, দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকাসহ সব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
মূল্যায়ন সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাকালে তারা জানান, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের কথাও বলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, সভার অনেক কথা আমরা প্রকাশ্যে বলতে পারছি না। বলতে গেলে সিনিয়র নেতাসহ অন্যদের রোষানলে পড়তে হবে। তাই লিখিতভাবে দলের নেতাদের বিষয়টি জানাবো।
তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত নিলে ভালো হতো। দীর্ঘদিন ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সদস্যের কমিটির নাম ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে যে ওয়ার্ড কমিটিগুলো কাজ করবে ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রায় অনেক ওয়ার্ড কমিটি এবং থানা কমিটিও করা হয়নি। যার কারণে নির্বাচনের সময় নেতাকর্মীদের মাঝে সমন্বয়ের অভাব ছিল প্রকট।
তিনি বলেন, অনেকে দলীয় পদ-পদবীর আশায় নামমাত্র সময় দিয়েছেন। ওয়ার্ড কমিটি ও কেন্দ্র কমিটি নিয়ে ছিল তীব্র ক্ষোভ। অনেকে এটা প্রকাশ্যে বলতে না পারলেও ভেতরে ক্ষোভ নিয়ে কাজ করেছেন। নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনের উৎসাহ উদ্দীপনা কম ছিল। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে খুব একটা চোখে পড়েনি। অথচ প্রার্থী নিজে এবং কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার কর্মীদের বলেছেন ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে হবে। নির্বাচনের আগে যা ছিল উপেক্ষিত। প্রচার-প্রচারণা ছিল মহাসড়ক ও দলীয় সভা সমাবেশকেন্দ্রিক।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা বলেন, নির্বাচনের সময় প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর একাধিকবার হামলার বিষয়টি নারী ভোটারদের আবেগে আঘাত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীরা ঘরে বসেই হামলাগুলো প্রত্যক্ষ করেছে। যার প্রভাব ভোটের মধ্যে পড়েছে। তারপরও যারা দলীয় নেতাকর্মী হয়ে ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে, দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলা হচ্ছে মূল্যায়ন সভাগুলোতে।
গত ৩ জুন মূল্যায়ন সভার প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারা কারা ডাবল রোল প্লে করেছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দুইভাবে বিচার করতে হবে। যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছে আর যারা বলেছে একটা করেছে অন্যটা। আমরা যেহেতু দল করি তাই দলের একটা বিধিবিধান আছে, গঠনতন্ত্র আছে। সেই গঠনতান্ত্রিকভাবেই আমরা আলোচনা করে দায়িত্বে যারা ছিল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা অপরাধ করেছে এবং আর যারা বেইমানি করেছে দুইটা একই অপরাধ না। তাই অপরাধের মাত্রা অনুসারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরপর তিনটা নির্বাচন হয়ে গেলো। প্রথম নির্বাচন সেটা একটা দেশব্যাপী বিরাট ইস্যু হয়েছিল। আমাদের তখন প্রতিকূল অবস্থা ছিল। ২০১৩ সালে আমরা জিততে পারিনি। যারা দায়িত্ব পেয়েছে তারা জনগণের হয়ে কাজ করতে পারেনি। পরে যাকে আমরা নির্বাচিত করলাম দলের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি এমন কিছু কাজ করলেন দল তাকে অব্যাহতি দিয়ে দিলো এবং তাকে বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেই টাকার উন্নয়নের সুফল গাজীপুরবাসী পায়নি। এই ১০ বছর যাবত যে উন্নয়ন গাজীপুরবাসী পেত তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকারের একটা বিধান আছে সব সিটি করপোরেশনে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থাকে। সেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোথাও জনপ্রতিনিধি আছে, কোথাও সরকারি কর্মচারী আছে। আজমত উল্লা খানের স্থানীয় সরকার পরিচালনায় ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। যার এত দক্ষতা যার এত সততা আছে তাকে যদি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে নগরীর বঞ্চিত ৩৫ লাখ লোকদের উন্নয়ন করতে পারবেন। এবার যিনি মেয়র হয়েছেন তিনি কেমন করবেন জানি না। মানুষের ধারণা, তার যে যোগ্যতা, তার যে অভিজ্ঞতা তাতে মানুষের যে প্রত্যাশা তা পূরণ না ও হতে পারে।
মূল্যায়ন সভায় আজমত উল্লা খান বলেছেন, আমাদের এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। আমরা কে কি করলাম সেটি বড় কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন। আমরা অনেককিছু হয়েও লাভ কী হবে। ষড়যন্ত্র চলছে। ৭৫ এর আগে যেমন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এবারও আপনারা লক্ষ্য করতে পারছেন দেশে এবং বিদেশে সেই চক্র কাজ করছে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর পরাজয়ের কারণে হিসেবে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করা হলেও এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী নেতাকর্মীদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। মূল্যায়ন সভায় নিজেদের ব্যর্থতা না তুলে কেবল এক সময়ে জাহাঙ্গীর অনুসারীদের ঢালাওভাবে দায়ী করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমের এক সময়ের অনুসারী নেতাকর্মীরা বহিষ্কার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
মূল্যায়নসভা শেষে মহানগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দেবে। এর পর মহানগর আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীদের ওপর সাংগঠনিক শাস্তির ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করছেন নেতারা।
আরও পড়ুন
উল্লাপাড়ায় চাচাশ্বশুরের হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন গৃহবধূ
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : আ.লীগের সিনিয়র নেতারা মাঠে নামায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব
শেরপুরে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত