হোম » প্রধান সংবাদ » অভাবী বাবার সাথে কৃষিকাজে ব্যস্ত খুলনা বিভাগীয় অনুর্ধ্য-১৮ দলের ক্রিকেটার মারুফ

অভাবী বাবার সাথে কৃষিকাজে ব্যস্ত খুলনা বিভাগীয় অনুর্ধ্য-১৮ দলের ক্রিকেটার মারুফ

মো রিমন চৌধুরী ডোমার, (নীলফামারী) প্রতিনিধি: ছোট বেলা হতেই কাষিকাজে অভাবী বাবাকে সাহায্য করতো খুলনা বিভাগীয় অনুর্ধ্য-১৮ দলের ক্রিকেটার মারুফা আক্তার। করোনা মহামারীর সময়ে ছুটিতে কয়েক মাস থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার ঢেলাপীর এলাকার বাড়িতে অবস্থান করছে পেস অলরাউন্ডার মারুফা। সময় নষ্ট না করে প্রতিনিয়ত বাবা মো: আইমুল্লাকে কৃষিকাজে সাহায্য করছে বাবাভক্ত মেয়েটি। সেই সাথে বাড়ির পাশ্বেই এলাকার ছেলেদের সাথে নিয়মিত অনুশীলনও করছে।

তবে বল, ব্যাটসহ অন্যান্য সামগ্রী না থাকায় অনুশীলন করতে খুবেই কষ্ট হচ্ছে অভাবী বাবার মেয়ে মারুফার। ছেলেদের সাথে একসাথে খেলায় মানুষের বিভিন্ন কটুকথা শুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়িত। নিজের খেলার সাফল্যের মাধ্যমেই সমালোচকদের জবাব দিতে চায় সে। মারুফার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় দুই ভাই ও বাবা-মা সহ পাঁচ জনের অভাবী সংসার। অন্যের কাছে দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে তারা।

নিজের জমির কাজ করে অন্যের জমিতে মজুরীর কাজ করে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তার বাবা। এতে কোন রকমে সংসার চলে যায়। দুই ভাই ও মারুফার পড়ালেখার খচর জোগাড় করতেই পারে না আলিমুল্লা। কোথায় থেকে মারুফার জন্য ব্যাট, বলসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনে দেবে। মারুফার বাবা আলিমুল্লা জানান, নিজের জমি বিক্রি করে শ্বশুড়ের দেওয়া বাড়িতে থাকি। অন্যের জমি বর্গা চাষ ও মজুরী করে কোন রকমে সংসার চালাতে হয়। কিভাবে মারুফাকে দামী ব্যাট, বল কিনে দেবো? প্রশ্ন তার বাবার? মারুফার এলাকার বড়ভাই আলমগীর হোসেন জানান, মারুফা ছোট বেলা হতেই আমাদের সাথে ক্রিকেট খেলে।

সে মেয়ে হয়েও অনেক বড় বড় ছেলেদের চেয়েও ভালো খেলে। ভালো কোচের অধীনে অনুশীলন করলে একদিন সে অনেক বড়ো খেলোয়ার হবে। মারুফা তার খেলা শুরুর দিকে কথা বলে এভাবে, আমি ছোট বেলা হতে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত ফুটবল খেলতাম। এরপর পাড়ার বড় ভাইদের সাথে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। ক্রিকেট খেলা আরো ভালো লেগে যায়। ২০১৮ সালে আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। ওখানে দুই মাস ক্যাম্প করি। এরপর নবম শ্রেনীতে উঠার কারণে ভর্তির সুযোগ হারাই। কারণ বিকেএসপিতে অষ্টম শ্রেনীতে ভর্তি করা হয়।

মারুফা বলেন, ক্যাম্পের শেষে খুলনার ইমতিয়াজ হোসেন পিলু স্যার আমাকে ২০১৯ সালের মহামেডামের হয়ে প্রিমিয়ার লীগে খেলার সুযোগ করে দেন। এরপর স্যার আমাকে খুলনা দলে নেন। এরপর অনূর্ধ-১৮ দলে সুযোগ পাই। কয়েকদিনের মধ্যে অনূর্ধ-১৯ দলের ক্যাম্প শুরু হবে। আশাকরি সেখানে ডাক পাবো। সে জানায়, পাড়ার ছেলেদের সাথে এক সাথে খেলার জন্য অনেকে অশ্লীল কথা শোনায় তাকে।

 

এতে তার বাবা-মাও খেলা বাদ দিতে বলে। কিন্তু শত বাঁধা উপেক্ষা করে খেলা চালিয়ে গেছেন মারুফা। একদিন খেলার মাধ্যমেই সমালোচকদের জবাব দিতে চান চায় মারুফা। প্রেস অলরাউন্ডার মেয়েটি ইংল্যান্ডের বেক স্টোকসকে অনুসরণ করে সালমা জাহানারাদের মতো দেশের জন্য সফলতা এতে দিতে চান। তবে গরীব বাবার সন্তান মারুফা জানায় তার সীমাবদ্ধতার কথা, বাড়ির পাশ্বে রেললাইনের ধারে একটি ফাঁকা জায়গায় অনুশীলন করে সে। একটি ভাঙ্গা ব্যাট, অনেক পুরনো একটি বল ও ব্যবহারের অনুপযোগী প্যাড দিয়ে কোন রকমে অনুশীলন চলছে।

 

ভালো সামগ্রী ও ভালো একজন কোচের অধীনে অনুশীলন করতে পারলে, আরো অনেক ভালো পারফর্মন্স হবে বলে মারুফা মনে করেন। মারুফা সরকার ও ক্রীড়ামোদী বিত্তবানদের সহায়তা চেয়েছেন। নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন জানান, আমরা নারী খেলোয়ারদের সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। মারুফা আমাদের কাছে আসলে, তাকেও সহায়তা করা হবে।

error: Content is protected !!